নরসিংদীর মনোহরদী এখন বানরের রাজত্ত্ব

২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ০৪:১৬ এএম | আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৭ পিএম


নরসিংদীর মনোহরদী এখন বানরের রাজত্ত্ব
নিজেস্ব প্রতিবেদক [caption id="attachment_1716" align="alignnone" width="1280"] ছবিঃ সংগৃহীত[/caption] মনোহরদী উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরবর্তী নিভৃত পল্লী রামপুর গ্রাম। এ গ্রামে যাওয়ার পথে রামপুর বাজারে ঢুকতেই চোখে পড়ে ঘরের চালে, গাছের নীচে কিংবা গাছের উপরে দলবেধে বসে আছে অজস্র বানর। প্রাচীনকাল থেকে মানুষের পাশাপাশি এই গ্রামে বানর বসবাস করে আসছে। অত্যন্ত দাপটের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে সর্বাধিক বানর বসবাস করে ওই গ্রামের ঝোপ-জঙ্গলে। সংরক্ষণের অভাবে বানরগুলো ঝোপ-জঙ্গল থেকে মানুষের ফসলের ক্ষতিসাধন করে। ফলে বানরের উপদ্রবে অতিষ্ঠ গ্রামবাসী। শত অত্যচার সহ্য করেও এই প্রাণিদের আগলে রেখেছেন তারা। পথচারীরা কেউ কিছু দিলেই দলবেঁধে এসে বানররা খেতে শুরু করে। এমনকি স্থানীয় মানুষের সঙ্গে এদের যে সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছে তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। স্থানীয় মানুষের হাত ধরে হাঁটতেও দেখা যায় এখানকার বানদের। আবার কখনো তাদের হাতে সুবোধ প্রাণীর মত এরা খাবার খেতে থাকে। তবে এদের সঙ্গে দুষ্টুমি করলে কোন ছাড় দেয় না। বানরের খপ্পড়ে তাকে পড়তেই হবে। মানুষে মানুষে যেমন ঝগড়া ফ্যাসাদ হয় তেমনি রামপুরের বানররাও ঝগড়া-ফ্যাসাদ করে। তবে রামপুরের বানরের সঠিত খতিয়ান কারো জানানেই কথিত আছে আজ থেকে দেড়শ বছর আগে এখানকার ভূমি অফিসের এক তফশিলদার একটি পুরুষ বানর পুষতেন। বদলি হয়ে তিনি চলে গেলেও রেখে যান বানরটি। পরবর্তীতে অপর এক তফশিলদার আরেকটি স্ত্রী বানর এনে দুটিকেই জঙ্গলে ছেড়ে দেন। সেই থেকে বাড়তে থাকে বানরের সংখ্যা। গল্পটি সত্য হোক আর না হোক রামপুরে এখন বানরের সংখ্যা গ্রায় চার হাজার ওপরে। দিনদিন বন-জঙ্গল কমতে থাকায় সঙ্গে সঙ্গে দেখা দেয় প্রাকৃতিক খাবারের ঘাটতিও। এরপর  থেকেই প্রতিনিয়ত ফসলী জমি ও মানুষের বাড়িতে হানা দিচ্ছে বানরের দলগুলো। [caption id="attachment_1717" align="alignnone" width="1280"] ছবিঃ সংগৃহীত[/caption] রঞ্জিন কুমার চক্রবর্তী নামে এই গ্রামবাসী জানায়, হিন্দু অধ্যুষিত রামপুরে প্রাচীনকাল থেকেই বানরের বসবাস। আমরা বানর ধ্বংস, হত্যা, নিধন চায় না। বানরগুলো বাগানের কাঁঠাল, লিচু, ফলমূল, আখ, কলা, শাকসবজি খেয়ে ফেলে। পান খায় না কিন্তু পানের বরজে ঢুকে শলা ভেঙে ক্ষতিসাধন করে। কেউ বানরকে মারতে গেলে জোটবদ্ধ হয়ে বানরের দল গাছের ডালপালা নিয়ে তেড়ে আসে। এমন ঘরে ঢুকে হামলাসহ মালামাল লুটেও কওে নিয়ে যায়। একই গ্রামের তমিজ উদ্দিন জানান, স্থানীয় সিদ্ধেশ্বরী মন্দির মাঠে বানর দল মনের আনন্দে খেলা করে। বানরের মিলন মেলা দেখতে প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা ভিড় জমায় রামপুর গ্রামে। কেউ মুড়ি, কেক, বিস্কুট, কলাসহ বিভিন্ন খাবার দিলে বানরের দল ভেংচি কেটে তাদেরকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করে। আবার অল্প সময়ের মধ্যে দশনার্থীদের সঙ্গে বানরগুলোর বন্ধুত্ব হয়ে যায়। পরে দর্শনার্থীদের ছুড়ে দেয়া খাবার এরা গ্রহণ করে। রামপুর এলাকার জিতেন্দ্র চক্রবর্তী জানায়, বানরদের মধ্যে গোলমাল বাধলে তা ঠেকানো দায়। আবার তাদের মধ্যে গ্রুপিং আছে। বানরদের একটি দলকে খেতে দিলে অন্য দলের বানর এই খাবার খেতে আসেনা। এক দলের বানরকে অন্য দলের বানর অপমান করলে তারা শোধ নিতে দল বেধে বেড়িয়ে পড়ে। সব কিছুর পরও রামপুরের বানরের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক দেখলে অবাক হতে হয়।