খালেদা জিয়ার ৭ বছরের কারাদণ্ড চাইল দুদক

৩০ জানুয়ারি ২০১৮, ১০:২৯ এএম | আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৫২ এএম


খালেদা জিয়ার ৭ বছরের কারাদণ্ড চাইল দুদক
অনলাইন ডেস্ক জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার যুক্তিতর্কের সারমর্ম উপস্থাপন করে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাত বছরের কারাদণ্ড চেয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী। মোশাররফ হোসেন কাজল আজ মঙ্গলবার দুপুরে এ মামলার প্রথম রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক তুলে ধরে বক্তব্য দেন। এ সময় তিনি ৩২ জন আসামির সাক্ষ্য গ্রহণের বিষয় এবং মামলার সারমর্ম তুলে ধরেন আদালতে। দুদকের এই আইনজীবী বলেন, কোনো ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী পদে থাকা অবস্থায় ট্রাস্ট গঠন করতে পারেন না। কারণ তিনি ১৬ কোটি মানুষের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন। আর এ কারণেই তিনি ব্যক্তিগত স্বার্থে ট্রাস্ট গঠন করতে পারেন না। ‘এই ট্রাস্ট গঠনের সময় সোনালী ব্যাংকে যে হিসাব করা হয়েছে, সেখানে খালেদা জিয়া তাঁর প্রধানমন্ত্রী পদ গোপন করেছেন। কিন্তু তিনি ঠিকানা হিসেবে ব্যহার করেছেন তৎকালীন মঈনুল রোডের বাড়ির ঠিকানা।’ রাষ্ট্রপক্ষের এই আইনজীবী আরো বলেন, ‘খালেদা জিয়া ট্রাস্ট আইন ভঙ্গ করেছেন। এ বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে চারবার চিঠি দেওয়া হলেও তিনি এর কোনো উত্তর দেননি। পরে অবশ্য স্বীকার করে নিয়েছেন, ট্রাস্ট আইন অনুযায়ী জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট হয়নি। এই অভিযোগে সংবিধান অনুযায়ী খালেদা জিয়ার সাত বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।’ মোশাররফ হোসেন কাজল আরো বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া যে উদ্দেশ্যে ট্রাস্ট গঠন করেছেন, পরবর্তী সময়ে তা টাকা সংগ্রহের মধ্য দিয়ে তা প্রাইভেট ট্রাস্টে পরিণত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীর একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না তাঁরাও সরকারি পদে ছিলেন। ট্রাস্টে তাঁরা সরকারি পদ ব্যবহার করতে পারেন না।’ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার যুক্তিতর্ক আজ মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে। রাজধানীর পুরান ঢাকার বকশীবাজারে কারা অধিদপ্তরের প্যারেড মাঠে স্থাপিত ৫ নম্বর বিশেষ জজ ড. আখতারুজ্জামানের আদালতে এ মামলায় যুক্তিতর্ক শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। আজ দুপুর ১২টার দিকে আদালতে হাজির হন বিএনপির প্রধান। এর আগে বেলা ১১টা ১০ মিনিটে গুলশানের নিজ বাসা থেকে আদালতের উদ্দেশে রওনা দেন তিনি। রাষ্ট্রপক্ষে মোশাররফ হোসেন কাজল দুপুর ১২টা ১১ মিনিটে যুক্তিতর্কের কাজ শুরু করেন। তিনি বক্তব্য উপস্থানের একপর্যায়ে আদালত দুপুরের বিরতি দেন। এ সময় খালেদা জিয়া আদালতের সামনে একটি চেয়ারে বসা ছিলেন। খালেদা জিয়ার আইনজীবী আবদুর রেজাক খান, এ জে মোহাম্মদ আলীসহ বিএনপির নেতারা আদালতে উপস্থিত রয়েছেন। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ২০০৫ সালে কাকরাইলে সুরাইয়া খানমের কাছ থেকে ‘শহীদ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট’-এর নামে ৪২ কাঠা জমি কেনা হয়। কিন্তু জমির দামের চেয়ে অতিরিক্ত এক কোটি ২৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা জমির মালিককে দেওয়া হয়েছে বলে কাগজপত্রে দেখানো হয়, যার কোনো বৈধ উৎস ট্রাস্ট দেখাতে পারেনি। জমির মালিককে দেওয়া ওই অর্থ ছাড়াও ট্রাস্টের নামে মোট তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা অবৈধ লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। ২০১০ সালের ৮ আগস্ট জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ চারজনের নামে তেজগাঁও থানায় দুর্নীতির অভিযোগে এ মামলা করেছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুন-অর রশিদ। ওই মামলার অন্য আসামিরা হলেন—খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান। এ ছাড়া আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায় ঘোষণার দিন নির্ধারিত রয়েছে।


এই বিভাগের আরও