নরসিংদীতে বাড়ছে ট্রেনে কাটাপড়ে মৃত্যুর সংখ্যা, ১ বছরে ৪৭ জন নিহত

১০ এপ্রিল ২০২৩, ১২:৩৭ পিএম | আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১:২৬ পিএম


নরসিংদীতে বাড়ছে ট্রেনে কাটাপড়ে মৃত্যুর সংখ্যা, ১ বছরে ৪৭ জন নিহত

নিজস্ব প্রতিবেদক:
নরসিংদীতে অসতর্কতা ও অবাধে রেললাইন ধরে চলাফেরায় বাড়ছে ট্রেনে কাটাপড়ে মৃত্যুর সংখ্যা। রেললাইনে আড্ডা দেয়া, ফোনে কথা বলতে বলতে চলাচল, ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করা ও অসতর্কতায় রেলক্রসিং পার হতে গিয়ে মুহুর্তেই প্রাণ হারাচ্ছেন নানা বয়সী মানুষ। দুর্ঘটনা এড়াতে সচেতন হওয়ার তাগিদ রেলওয়ে পুলিশের।


রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, ঢাকা-চট্রগ্রাম, ঢাকা-কিশোরগঞ্জ, ঢাকা-সিলেটসহ পূর্বাঞ্চলীয় রেলপথে দৈনিক ৫২টি ট্রেন চলাচল করে নরসিংদী জেলা হয়ে। নরসিংদী জেলার সদর, পলাশ ও রায়পুরা উপজেলায় ৪০ কিলোমিটার ব্যস্ততম এই ডবল রেলপথে ১০টি রেলওয়ে স্টেশনসহ রয়েছে ২৩ টি বৈধ-অবৈধ রেলক্রসিং। ট্রেন যাত্রা নিরাপদ হলেও সামান্য অসতর্কতায় বাড়ছে ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা। রেলওয়ে পুলিশের হিসাবমতে চলতি বছরের ২২ মার্চ পর্যন্ত প্রায় ৩ মাসে নরসিংদী জেলায় ট্রেনে কাটাপড়ে মারা গেছেন ৯ জন, স্থানীয়দের তথ্যমতে এই পরিসংখ্যান আরও বেশি।


স্থানীয়রা জানান, প্রতিনিয়ত রেললাইনে বসেই আড্ডা দেয়া, ছবি তোলা, ইয়ারফোনে গান শোনা, ফোনে কথা বলতে বলতে রেললাইন ধরে চলাচল, রেলব্রীজ পারাপার, ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করা ও অসতর্কতায় রেলক্রসিং পার হতে গিয়ে মুহুর্তেই প্রাণ হারাচ্ছেন নানা বয়সী মানুষ। কখনও কখনও একই দিনে ঘটছে একাধিক ট্রেনে কাটাপড়ে মৃত্যুর সংখ্যা।


আশংকাজনক হারে বেড়ে চলা এসব ট্রেন দুর্ঘটনায় প্রায়ই পরিচয় মিলছে না অনেকের। প্রচার চালানোর পরও পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় অনেককে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করতে হচ্ছে। পরবর্তীতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর মাধ্যমে প্রযুক্তির সহায়তায় পরিচয় শনাক্ত হলে রেলওয়ের পাশের কবরস্থান থেকে উত্তোলন করতে হয় এসব মরদেহ।


গাজীপুরের কালিগঞ্জ থানার মুক্তারপুর এলাকার মো: আজহার হোসেন বলেন, বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর আমার স্ত্রীর খোঁজ পাচ্ছিলাম না। পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে জানতে পারি আমার স্ত্রী রেললাইন ধরে হাটার সময় ঘোড়াশালে ট্রেনেকাটা পড়েন। পরিচয় না পেয়ে তাকে বেওয়ারিশ মরদেহ হিসেবে দাফন করে রেলওয়ে পুলিশ।


রায়পুরার আমিরগঞ্জ এলাকার রফিকুল ইসলাম বলেন, আমিরগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনের দুই পাশেই ট্রেনে কাটাপড়ার দুর্ঘটনা বেশি ঘটছে। প্রতি মাসেই দুর্ঘটনা ঘটছে। এসব দুর্ঘটনার বেশিরভাগই অসচেতনতার কারণে ঘটছে।


পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল এলাকার বাসিন্দা ফজলুল হক বলেন, ট্রেনে কাটাপড়ে একই দিনে একাধিক প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। স্থানীয় হলে পরিচয় মেলে, দূরের হলে তাৎক্ষনিক পরিচয় শনাক্ত করতে পারে না পুলিশ ও স্থানীয়রা। ব্যস্ততম এই রেলপথে দুর্ঘটনা বেড়েই চলছে।


নরসিংদী রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক সাইফুল ইসলাম বলেন, ২০২২ সালে ট্রেন দুর্ঘটনায় ৯৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করে ভৈরব রেলওয়ে থানা পুলিশ। এরমধ্যে ৪৭ জনের মরদেহ উদ্ধার হয় নরসিংদী থেকে।


তিনি জানান, বেশিরভাগ দুর্ঘটনা-ই ঘটছে অসতর্কভাবে রেলপথে চলাচলের কারণে। রেলপথে পায়ে হেটে চলাচল ও অবস্থান করা আইনত অপরাধ। রেলপথে চলাচল নিরাপদ করতে বিট পুলিশিং এর মাধ্যমে করা হচ্ছে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম। দুর্ঘটনা এড়াতে সচেতন হওয়ার তাগিদ দেন তিনি।



এই বিভাগের আরও