নরসিংদীতে তিন সপ্তাহে ৩ হাজার ৭৫৫ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত

০৩ এপ্রিল ২০২২, ০৫:১৯ পিএম | আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০১:০১ এএম


নরসিংদীতে তিন সপ্তাহে ৩ হাজার ৭৫৫ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক:

নরসিংদীতে অব্যাহতভাবে বেড়ে চলেছে ডায়রিয়ার প্রকোপ। গত তিন সপ্তাহে আক্রান্তের হার বিগত যেকোন সময়ের চেয়ে অনেক বেশি দেখা গেছে। মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে চতুর্থ সপ্তাহ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে জেলার সবকটি সরকারী হাসপাতালে ডায়রিয়ার চিকিৎসা নিয়েছেন ৩ হাজারেরও বেশি মানুষ। এছাড়াও এই সময়ের মধ্যে জেলায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন এক শিশুসহ তিনজন। একসঙ্গে এত রোগীকে চিকিৎসা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে জেলার স্বাস্থ্য বিভাগকে।

সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের অধিকাংশকেই চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে ১০০ শয্যা বিশিষ্ট নরসিংদী জেলা হাসপাতাল ও নরসিংদী সদর হাসপাতালে। তবে  উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর সংখ্যা ছিল তুলনামূলক খুবই কম। শুধু জেলা সদরের দুই প্রধান হাসপাতালেই গত তিন সপ্তাহে তিন হাজার ৭৫৫ জন ডায়রিয়ার রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। একদিনেই জেলা হাসপাতালে ডায়রিয়ার রোগী ভর্তি ছিল ১৫০ জন। অন্যদিকে সদর হাসপাতালে বারান্দায় রোগীদের রাখতে হয়েছে। বেড ও স্যালাইন সংকটের মধ্যে এসব রোগীদের পর্যাপ্ত সেবা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডায়রিয়ায় মারা যাওয়া তিনজনের মধ্যে পলাশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও নরসিংদী সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের বয়স ৪০-৫০ এর মধ্যে। এছাড়া পৌর শহরের এক শিশু তাঁর বাসায় মারা গেছে। তাদের প্রত্যেকেরই প্রচণ্ড পাতলা পায়খানা ও বমি হচ্ছিল। ফলে দ্রুত পানি শূন্যতা তৈরি হয়, এতে কিডনি বিকল হয়ে তাদের মৃত্যু হয়।

নরসিংদী সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) লোপা চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের শুরুর দিকে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসতে থাকেন। প্রথম দিকে প্রতিদিন গড়ে চার-পাঁচ জন করে রোগী চিকিৎসা নিতে এলেও ১২ তারিখ থেকে এক ধাক্কায় ৮০-৮৫ জন করে রোগী আসা শুরু হয়। তাদের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি হন অন্তত ২০-২২ জন। প্রতিদিনই এই পরিমান রোগী ভর্তি হতে শুরু করলে তৃতীয় সপ্তাহে গিয়ে হিমশিম খেতে শুরু করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অন্যান্য রোগীর পাশাপাশি একদিনেই ডায়রিয়ার রোগী ভর্তি ছিলেন শতাধিক। হাসপাতালের বারান্দায়ও তাদের ভর্তি রেখে চিকিৎসা দিতে হয়েছে। তবে বর্তমানে রোগী ভর্তির সংখ্যা ওই তুলনায় কিছুটা কম।

স্বাস্থ্য বিভাগের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলায় ডায়রিয়ায় আক্রান্তদের অধিকাংশই নরসিংদী পৌর এলাকার বাসিন্দা ও নিন্ম মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ। যেহেতু ডায়রিয়া একটি পানিবাহিত রোগ তাই ধারণা করা হচ্ছে, পৌর এলাকার পানির সোর্সে কোন সমস্যা হয়ে থাকতে পারে। এছাড়াও পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা ও সচেতনতার অভাব তো রয়েছেই। সমস্যা ও উত্তরণের বিষয়ে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ও পৌরসভাকে নিয়ে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কয়েকদফা মিটিং করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। শহরের যেসব এলাকায় ডায়রিয়ার প্রকোপ বেশি দেখা গেছে সেসব স্থানের পানি এরই মধ্যে পরীক্ষা করেছে আইইডিসিআর এর একটি গবেষণা দল। খুব দ্রুতই সে প্রতিবেদন পেলেই সমস্যা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে বলে জানায় জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। 

নরসিংদীর সিভিল সার্জন মো. নূরুল ইসলাম জানান, গত তিন সপ্তাহে জেলাজুড়ে ডায়রিয়ার চিকিৎসা নিয়েছেন ৩ হাজার ৭৫৫ জন। অন্যদিকে মারা গেছেন তিনজন। তাদের মধ্যে এক শিশু তাঁর নিজের বাসায় ও অন্য দুই ব্যক্তি শেষ মুহূর্তে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে মারা যান। ডায়রিয়ার এত রোগীকে একসঙ্গে চিকিৎসা দিতে গিয়ে আমরা হিমশিম খাচ্ছি। তবে স্যালাইনসহ পর্যাপ্ত চিকিৎসা সামগ্রী আমাদের কাছে রয়েছে।

সিভিল সার্জন আরও বলেন, শিশুসহ সব বয়সী ব্যক্তিদেরকে এখন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হতে দেখা যাচ্ছে। এই সময় ডায়রিয়ার হাত থেকে বাঁচতে বাইরের খোলা খাবার বর্জন করতে হবে এবং অবশ্যই পানি ফুটিয়ে খেতে হবে। সর্বোপরি সচেতন হওয়ার বিকল্প নেই।



এই বিভাগের আরও