নরসিংদীতে মার্কেটগুলোতে বাড়ছে ভিড়, উপেক্ষিত হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি

০৬ মে ২০২১, ১২:০৩ পিএম | আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০২:১৫ পিএম


নরসিংদীতে মার্কেটগুলোতে বাড়ছে ভিড়, উপেক্ষিত হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি
রাত ৮টায় নরসিংদী কালিবাজারের একটি দোকান থেকে তোলা ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

নরসিংদীতে করোনা পরিস্থিতিতেও সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলছে ঈদের কেনাকাটা। ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে ততই ভিড় বাড়ছে পৌর শহরের মার্কেটগুলোতে। ভিড়ের কারণে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্য বিধি উপেক্ষিত হওয়ায় বাড়ছে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি। ক্রেতা বিক্রেতারা বলছেন, স্বাস্থ্য বিধি মেনেই বেচাকেনার চেষ্টা করছেন তারা। স্বাস্থ্য বিধি মানাতে বণিক সমিতি ও মার্কেট কর্তৃপক্ষ সচেতনতা সৃষ্টির চালালেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে নজরদারি না থাকায় কেউ মানতে চাইছেন না স্বাস্থ্য বিধি।

সরেজমিন নরসিংদী শহরের কালি বাজার, সদর ও স্টেশন রোডের বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকেই ঈদের কেনাকাটা করতে ভিড় জমাচ্ছেন ক্রেতারা। বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাড়ছে ক্রেতা সমাগমও। প্রতিটি মার্কেটেই রাত পর্যন্ত কেনাকাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন ক্রেতা বিক্রেতারা। কাপড়ের দোকান, জুতার দোকান ও কসমেটিক্সের দোকানগুলোতেও চলছে কেনাকাটার ধুম। সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্য বিধি না মেনে পাশাপাশি বসে পোশাক ও প্রয়োজনীয় ঈদ সামগ্রী কিনছেন ক্রেতারা।

শহরের ইনডেক্স প্লাজা, সবুজধরা কমপ্লেক্স, খন্দকার টাওয়ার, ইসলাম প্লাজা, মুন্সী নিয়াজ মার্কেট, বাজির মোড়ের সুলতান শপিং কমপ্লেক্স, সিএন্ডবি বোডের কাজী মার্কেট, শশী প্লাজা, নরসিংদী বড় বাজারের কালিবাড়ি ও শহরের জুতাপট্রিসহ বিভিন্ন ব্রান্ডশপের শো-রুমেও ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়।

বেশিরভাগ মার্কেটেই ক্রেতাদের মধ্যে নারী ক্রেতার ভিড় ছিল লক্ষণীয়। এসব নারী ক্রেতাদের বেশিরভাগের কাপড়ে মুখ ঢাকা থাকলেও মুখে দেখা যায়নি মাস্ক। কারও কারও মুখে মাস্ক থাকলেও পণ্যের দরদাম করার সময় খুলে ফেলছেন মাস্ক। ক্রেতার ভিড় সামলাতে নিজের মুখে মাস্ক পরা ও স্বাস্থ্য স্বাস্থ্য বিধি মানার কথা ভুলে যাচ্ছেন বিক্রেতারাও। অনেকে ভিড় এড়াতে রাতে কেনাকাটা করতে এসেও ভিড়ের মুখোমুখী হয়েই কেনাকাটা করতে বাধ্য হচ্ছেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে শপিংমল ও দোকানপাট খোলার সরকারি ঘোষণার পর থেকেই ক্রেতার ভিড় বাড়লেও ঈদ ঘনিয়ে আসায় দিনদিন ক্রেতার ভিড় বাড়ছেই।

প্রায় মার্কেটের প্রবেশ মুখে নো মাস্ক সার্ভিস লেখা ছাড়া করোনা সংক্রমণ ঝুঁকি ঠেকাতে মার্কেট কর্তৃপক্ষ আর কিছুই করতে পারছে না। স্বাস্থ্য বিধি মানাতে প্রশাসনের পক্ষ থেকেও লক্ষ্য করা যাচ্ছে না কোন প্রকার তৎপরতা।

রায়পুরা থেকে শহরের কালিবাজারে আসা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গৃহিনী বলেন, মার্কেটে ভিড় কম মনে করে অতিব প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করতে এসেছিলাম। মাস্ক ব্যবহার করলেও বাজারে প্রবেশ করে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে না। মানুষের ভিড়ের কারণে কেনাকাটা কম করেই ফিরে যাচ্ছি।

দিলরুবা আক্তার নামে এক ক্রেতা বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে ঈদের কেনাকাটা করার ইচ্ছে ছিল না কিন্তু বাচ্চাদের আবদার রক্ষা করার জন্য বাধ্য হয়ে পোশাক ও জুতা কিনতে এসেছি। বাচ্চাদের সঙ্গে না নিয়ে এসে ঠিকঠাক মত পোশাক ও জুতা কেনা সম্ভব হয় না তাই তাদেরও সঙ্গে নিয়ে বের হতে হয়েছে।

নাজমুল হক নামে এক ক্রেতা বলেন, করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি জেনেও বাধ্য হয়েই মার্কেটে আসতে হয়েছে। মাস্ক ব্যবহার ও স্বাস্থ্য বিধি যতটা সম্ভব মেনে চলার চেষ্টা করছি। তবে অনেককেই এক্ষেত্রে উদাসীন দেখা গেছে।

নরসিংদীর কোভিড ডেকিটেডেট জেলা হাসপাতালের চিকিৎসক মিজানুর রহমান বলেন, সামাজিক দূরত্ব বজায় না রাখা তথা স্বাস্থ্য বিধি না মেনে ভিড় করে কেনাবেচায় করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি খুবই বেশি। একজন আক্রান্ত ব্যক্তির দ্বারা অনেকেই আক্রান্ত হতে পারেন।  সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিশেষ করে মাস্ক ব্যবহার করে কেনাকাটা করতে হবে। সরকার যে কঠোর নির্দেশনা দিয়ে মার্কেট পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছেন সেটি সবাইকে মেনে চলতে হবে নয়তবা পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে। করোনা পরিস্থিতিতে অতিব প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে না যাওয়াই নিরাপদ।

নরসিংদী বাজার বণিক সমিতির সভাপতি বাবুল সরকার বলেন, সরকারের সব নির্দেশনা মেনে দোকান খোলা ও বেচাকেনার জন্য আমরা বাজারের ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের সতর্ক করছি, প্রচারনা চালাচ্ছি। অনেকে ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য বিধি না মানা হলেও আমরা কোন পদক্ষেপ নিতে পারছি না। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও কোন কঠোর তদারকি নেই।  

এ ব্যাপারে জানতে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে ফোন রিসিভ করেননি নরসিংদীর জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন।



এই বিভাগের আরও