নরসিংদীতে এমপির বিরুদ্ধে মামলা: প্রতিবাদে দলীয় নেতাকর্মীদের সংবাদ সম্মেলন

০৫ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৮:৫৭ পিএম | আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২৪, ১০:১৬ পিএম


নরসিংদীতে এমপির বিরুদ্ধে মামলা: প্রতিবাদে দলীয় নেতাকর্মীদের সংবাদ সম্মেলন

নিজস্ব প্রতিবেদক:

সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগ তুলে নরসিংদীর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সদর আসনের সাংসদ মোহাম্মদ নজরুল ইসলামসহ দুইজনের বিরুদ্ধে মামলার প্রতিবাদ জানিয়েছে দলেরও নেকাকর্মী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। শনিবার (৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে সাংসদ পক্ষের নেতাকর্মীরা এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে এই প্রতিবাদ জানান। সংবাদ সম্মেলনে আগামী সাত দিনের মধ্যে মামলার বাদীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে নেপথ্যের চক্রান্তকারীদের খুঁজে বের করার দাবি জানানো হয়। অন্যথায় দলের পক্ষ থেকে কঠোর কর্মসূচী ঘোষণার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়।

এর আগে জাতীয় শোক দিবসের একটি অনুষ্ঠানে সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে গত ২৬ আগস্ট, বুধবার এমপিসহ দুজনের বিরুদ্ধে নরসিংদীর চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি করেন মোহাম্মদ মোস্তাক আহাম্মদ নামের এক ব্যক্তি। আদালত মামলাটি (নম্বর ৪৯০/২০২০) আমলে নিয়ে আগামী ১২ অক্টোবরের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার আদেশ দেন নরসিংদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিপ্লব কুমার দত্ত চৌধুরীকে। ওই মামলায় আসামি করা হয়, নরসিংদী সদর আসনের সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম এবং জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক (বহিস্কৃত) এস এম কাইয়ুমকে।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, সাংসদ ১৯ আগস্ট দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শহরের বীরপুর এলাকার সিএনজি স্ট্যান্ডে সমাবেশ করে সাংসদ নজরুল ইসলাম হিন্দু ধর্মের লোকজনের উদ্দেশে উস্কানিমূলক, মিথ্যা ও বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য দেন। এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করেছেন। এতে উল্লেখ করা হয়, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে নরসিংদী শহর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে এক গণভোজ ও দোয়া মাহফিল হয়। এ জন্য আগের রাতে ওই কার্যালয়ের সামনে তিনটি গরু ও দুটি খাসি জবাই করা হয়। গণভোজে মামলার বাদীসহ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও বিভিন্ন ধর্মের লোকজন অংশ নেন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ১৯ আগস্ট দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শহরের বীরপুর এলাকার সিএনজি স্ট্যান্ডে সমাবেশ করে সাংসদ নজরুল ইসলাম হিন্দু ধর্মের লোকজনের উদ্দেশে উসকানিমূলক, মিথ্যা ও বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য দেন। এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করেছেন। হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা করেছেন।

শনিবারের সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নরসিংদী সদরের উপজেলা চেয়ারম্যান ও মাধবদী থানা আওয়ামী লীগ এর আহবায়ক সফর আলী ভূঁইয়া। মামলার অপর আসামী ও জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক (বহিস্কৃত) এস এম কাইয়ুমের সঞ্চালনায় এ সময় বক্তব্য দেন, মাধবদী পৌরসভার মেয়র মোশারফ হোসেন প্রধান মানিক, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক আফতাব উদ্দিন ভূঁইয়া, নরসিংদী পৌরসভার প্যানেল মেয়র মো. রিপন সরকার, শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মোন্তাজ উদ্দিন ভূঁইয়া ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ওয়ালিউর রহমান আজিম প্রমুখ।

লিখিত ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর করেন ৫ জন উপজেলা চেয়ারম্যান, সদর উপজেলার ১১ জন ইউপি চেয়ারম্যান ও নরসিংদী পৌরসভার ৮ জন কাউন্সিলরসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের মোট ৪৬ জন নেতাকর্মী।

এতে বলা হয়, গত ১৫ আগস্ট শোক দিবসের এক অনুষ্ঠানে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক দীপক সাহা ও বর্তমান কমিটির সদস্য সচিব সুব্রত কুমার দাস কতিপয় দলীয় নেতাকর্মীদের সাম্প্রতিক কিছু কর্মকাণ্ডে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগার অভিযোগ করেন। এর প্রেক্ষিতে সাংসদ মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম তার বক্তব্যে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মনের কষ্ট দূর করার জন্য বলেন, আমাদের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করতে গিয়ে যেন অন্য ধর্মের অনুভূতিতে আঘাত না করি। যদি করি তবে আল্লাহও ক্ষমা করবেন না। সাংসদের ওই বক্তব্যে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মনের কষ্ট দূর হয়েছিল।

আরও বলা হয়, মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম একজন অসাম্প্রদায়িক মানুষ এবং বীরপ্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাকে তিনবার দলীয় মনোনয়ন দিয়েছেন এবং প্রতিবারই তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। দক্ষতা ও সুনামের সাথে তিনি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সামলেছেন। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে তিনি দল-মত ও ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে একজন সৎ ও অসাম্প্রদায়িক ব্যক্তি হিসেবে স্বীকৃত। সাম্প্রদায়িক উস্কানির কাল্পনিক অভিযোগে তাকে আদালত পর্যন্ত যারা নিয়ে গেছেন তারা দল ও সরকারকে বিব্রত করেছেন। এছাড়া ওই মামলায় তার ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিচয় গোপন করা হয়েছে যা আদালতের সাথে প্রতারণার সামিল।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, মন্দিরের পাশে গরু জবাইয়ের বিষয়ে সাংসদ কোন সাম্প্রদায়িক বক্তব্য দেননি। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মত অত্যন্ত ষ্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে এই মিথ্যা মামলা করায় আমরা তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। মামলার বিষয়টি চূড়ান্ত সীমা লংঘন এবং দলীয় ভাবমূর্তি বিনষ্ট ও নরসিংদীকে অস্থিতিশীল করার পায়তারা। মামলার মদদদাতারাই প্রকৃতপক্ষে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার অপচেষ্টায় লিপ্ত।

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলছেন, নরসিংদীতে জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক দ্বন্দ্বে মূলত দুই ভাগে বিভক্ত। একপক্ষে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সদর আসনের সাংসদ মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম অন্যপক্ষে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মতিন ভূঁইয়া এবং শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র কামরুজ্জামান। দুই পক্ষই নিজেদের নেতাকর্মীদের নিয়ে আলাদা আয়োজনে জাতীয় অনুষ্ঠান ও দলীয় কর্মসূচি পালন করেন। দলীয় বিভাজনের কারণে জেলা আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে ক্রমে দুর্বলতর হচ্ছে।

নরসিংদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিপ্লব কুমার দত্ত চৌধুরী বলেন, মামলা সংক্রান্ত আদালতের কাগজপত্র হাতে পেয়েছি। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়া হবে।

জানতে চাইলে সদর আসনের সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম জানান, বিষয়টিকে নিয়ে কেউ যেন ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করে দল ও সরকারকে বিব্রত করতে না পারে এবং কারো ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার অপচেষ্টা করতে না পারে সে বিষয়ে সকল মহলকে সজাগ দৃষ্টি রাখার আহবান জানাচ্ছি।



এই বিভাগের আরও