আজ মেয়র লোকমান হত্যার ৮ম বার্ষিকী: পুন:তদন্তের অপেক্ষায় মামলার বাদী

৩১ অক্টোবর ২০১৯, ১১:১৩ পিএম | আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৩৮ এএম


আজ মেয়র লোকমান হত্যার ৮ম বার্ষিকী: পুন:তদন্তের অপেক্ষায় মামলার বাদী

নিজস্ব প্রতিবেদক:
আজ ১ নভেম্বর। নরসিংদীর জনপ্রিয় পৌর মেয়র ও শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেন হত্যাকাণ্ডের ৮ম বার্ষিকী। ২০১১ সালের এইদিনে দলীয় কার্যালয়ে তাকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা।
দীর্ঘ ৮ বছর পেরিয়ে গেলেও শেষ হয়নি লোকমান হত্যার বিচার কাজ। প্রায় ৭ বছর পর উচ্চ আদালতের নির্দেশে আলোচিত এ মামলার অভিযোগপত্রের উপর বাদীর করা নারাজি আবেদন গ্রহণ করেছেন আদালত। এ আবেদনের ফলে মামলাটির পুনঃতদন্তের নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছেন মামলার বাদী। পুনঃতদন্ত হলেই লোকমান হত্যার প্রকৃত রহস্য উদঘাটিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন নিহত লোকমানের ছোট ভাই মামলার বাদী ও বর্তমান পৌর মেয়র মো. কামরুজ্জামান কামরুল।

লোকমান হত্যার ৮মবার্ষিকী উপলক্ষে তার সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, দোয়া মাহফিল, গণভোজসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে জনবন্ধু শহীদ লোকমান পরিষদ।

মামলার বাদী ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালের এইদিনে (১ নভেম্বর) জেলা আওয়ামীলীগ কার্যালয়ে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয় লোকমান হোসেনকে। চাঞ্চল্যকর এ হত্যার ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই কামরুজ্জামান তৎকালীন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদের ছোট ভাই সালাহউদ্দিন আহমেদ বাচ্চুকে প্রধান আসামী করে ১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। পুলিশ তদন্তের পর এজাহারভুক্ত সালাহউদ্দিন বাচ্চুসহ ১১ আসামীকে বাদ দিয়ে ১২ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে।
এতে মামলার এজাহারভুক্ত ৩ নম্বর আসামি শহর আওয়ামী লীগের সাবেক কোষাধ্য মোবারক হোসেন, এজাহারভুক্ত ২ নম্বর আসামি নরসিংদী পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি আবদুল মতিন সরকার, তাঁর ছোট ভাই শহর যুবলীগের সাবেক সভাপতি আশরাফুল ইসলাম সরকারসহ ১২ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। এদিকে অভিযোগপত্র দাখিলের আগেই মোবারক হোসেন ছাড়া সবাই আদালতের মাধ্যমে জামিনে মুক্তি পান। দীর্ঘ ৭ বছর পর গত বছরের ২৯ অক্টোবর মোবারক হোসেনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনিও বর্তমানে জামিনে মুক্ত রয়েছেন।
পুলিশী তদন্তে এ হত্যা মামলার এজাহারবহির্ভূত আসামি কিলার শরিফ বলে খ্যাত শরিফুল ইসলাম শরিফ ও তার অপর তিন সহযোগীকে অস্ত্র মামলায় ১০ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করেন আদালত।

এদিকে পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে ২০১২ সালের ২৪ জুলাই নরসিংদীর চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে নারাজি দেন মামলার বাদি মো. কামরুজ্জামান কামরুল। আদালত ২৫ জুলাই নারাজি আবেদন খারিজ করে অভিযোগপত্র বহাল রাখেন। পরবর্তীতে ২৮ আগস্ট নারাজি আবেদন খারিজের বিরুদ্ধে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আপিল করেন বাদী। আদালত ২ সেপ্টেম্বর সেই আবেদন গ্রহণ করে ৪ নভেম্বর শুনানি শেষে ফের নারাজি আবেদন খারিজ করেন। এরপর উচ্চ আদালতে যান বাদী কামরুল।
তিনি ওই অভিযোগপত্র বাতিল করে বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়ে নিম্ন আদালতে বিচারকার্য স্থগিত রাখতে রিট পিটিশন দাখিল করেন। আদালত বাদির আবেদনটি আমলে নিয়ে নিম্ন আদালতে বিচারকার্য স্থগিত করে দেন। এ ঘটনায় জামিনে বের হয়ে আসামিরা সুপ্রীম কোর্টের আপিল ডিভিশনে মামলার কার্যক্রম স্থগিত রাখতে রিট পিটিশন দাখিল করেন। এরই ধারাবাহিকতায় দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে শুনানীর অপেক্ষায় থাকার পর আদালত চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি আসামীদের করা রিট পিটিশনটি নিষ্পত্তি করে বাদির নারাজি আবেদন গ্রহণ করতে এবং বাদী ও সাক্ষীগণের জবানবন্দি গ্রহণ করে মামলাটি পুনঃতদন্তের নির্দেশ দেন। গত ২৫ জুন দুপুরে নরসিংদী জজ আদালতের মূখ্য বিচারিক হাকিম মো. রকিবুল ইসলাম মামলার বাদী কামরুজ্জামানের জবানবন্দি গ্রহণের মাধ্যমে মামলার কার্যক্রম শুরু করেন।

বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. আসাদ আলী বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশে অভিযোগপত্রের উপর বাদীর দায়ের করা নারাজি আবেদন আদালত গ্রহণ করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করেছেন। এখন মামলাটি পুনঃতদন্তের নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছে। আদালতের মর্জি অনুযায়ী মামলাটি মূখ্য বিচারিক হাকিম নিজে কিংবা অন্য কোন সংস্থা কর্তৃক পুনঃতদন্তের আদেশ হতে পারে।

মামলার বাদী নরসিংদী পৌরসভার মেয়র কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রটি সঠিক ছিল না। সেখানে অভিযুক্ত ১৪ আসামির মধ্যে ১১ আসামিকেই বাদ দেওয়া হয়েছিল। তাই আমরা নারাজি দিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়ে আসছিলাম। উচ্চ আদালত আমাদের আবেদন গ্রহণ করে পুনঃতদন্তের নির্দেশ দেয়। আমার বিশ্বাস বিচার বিভাগের পুনঃতদন্তের মাধ্যমে জনবন্ধু লোকমান হোসেন হত্যার প্রকৃত রহস্য বের হয়ে আসবে।

নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার পলাশতলী ইউনিয়নের মেঝেরকান্দি গ্রামের শাহ্ নেওয়াজ ভূঁইয়ার ছেলে লোকমান হোসেন কলেজ জীবন থেকেই জড়িয়ে পড়েন ছাত্র রাজনীতিতে। পরে নরসিংদী জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক থাকাকালীন ২০০৪ সালে প্রথমবারের মতো নরসিংদী পৌরসভা নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন লোকমান হোসেন। জনপ্রিয়তার কারণে ২০১১ সালের পৌর নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে দ্বিতীয়বার মেয়র নির্বাচিত হন লোকমান। এসময় অবহেলিত নরসিংদী পৌরসভার রাস্তাঘাট প্রশস্থকরণ, ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ বিভিন্ন উন্নয়নের ফলে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান।
দ্বিতীয়বার মেয়র নির্বাচিত হওয়ার মাত্র ৮ মাসের মাথায় ২০১১ সালের ১ নভেম্বর সন্ধ্যায় জেলা আওয়ামীলীগ কার্যালয়ে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয় তাকে।



এই বিভাগের আরও