হাজীপুরে অগ্নিদগ্ধ গৃহবধুর মৃত্যু: আদালতের পর থানায় মামলা, আটক ৬

১৬ জুন ২০১৯, ০৭:২৪ পিএম | আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:২০ এএম


হাজীপুরে অগ্নিদগ্ধ গৃহবধুর মৃত্যু: আদালতের পর থানায় মামলা, আটক ৬
অগ্নিদগ্ধ হয়ে নিহত জান্নাতি

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
নরসিংদীর হাজিপুরে শ্বশুর শাশুড়ির মাদক ব্যবসায় রাজি না হওয়ায় গৃহবধু জান্নাতি আক্তারকে (১৮) আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় আদালতের পর এবার থানায় মামলা রুজু করা হয়েছে। শনিবার (১৫ জুন) রাতে নিহত জান্নাতির বাবা শরিফুল ইসলাম খান বাদী হয়ে শাশুড়ি শান্তি বেগমকে প্রধান আসামি করে ৪ জনের বিরুদ্ধে নরসিংদী সদর মডেল থানায় হত্যা মামলাটি দায়ের করেন। মামলার পরে পুলিশ বিভিন্নস্থানে অভিযান চালিয়ে ৬ জনকে আটক করেছে।
মামলায় এজাহারনামীয় আসামিরা হলো, নিহত জান্নাতির শাশুড়ি শান্তি বেগম (৪৫), স্বামী শিপলু ওরফে শিবু (২৩), ননদ ফাল্গুনী বেগম (২০) ও শ্বশুর হুমায়ুন মিয়া (৫০)। তারা সবাই সদর উপজেলার চর হাজিপুরের খাসেরচর গ্রামের বাসিন্দা।
মামলায় আটককৃতরা হলো, মাদক ব্যবসীয় শান্তি বেগমের বোন সাথী আক্তার, দেবর নওশের মিয়া, খালা পারুল বেগম, খালাতো ভাই টিউলিপ, মামা রতন মিয়া ও খালাত ভাই জাহাঙ্গীর।
মামলার এজাহার ও নিহতের পারিবারের লোকজন জানায়, প্রায় এক বছর আগে নরসিংদী সদর উপজেলার হাজিপুর গ্রামের শরীফুল ইসলাম খানের দশম শ্রেণিতে পড়ুুয়া মেয়ে জান্নাতি আক্তারের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী খাসেরচর গ্রামের হুমায়ুন মিয়ার ছেলে শিপলু মিয়ার প্রেমের সম্পর্ক হয়। কিছুদিন পরই পরিবারের অমতে তারা পালিয়ে বিয়ে করেন। বিয়ের কিছুদিন যেতে না যেতেই স্বামীর পরিবারের মাদক ব্যবসার কথা জানতে পারেন জান্নতি। পরে তাঁর শ্বশুর শাশুড়ি ও স্বামী জান্নাতিকে পারিবারিক মাদক ব্যবসায় সম্পৃক্ত করতে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। এতে রাজি না হওয়ায় জান্নাতির উপর নেমে আসে শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন। একপর্যায়ে চলতি বছরের ২১ এপ্রিল গভীর রাতে শাশুড়ি শান্তি বেগম, ননদ ফাল্গুনী বেগম ও স্বামী শিপলু মিলে রাতে ঘুমন্ত জান্নতির শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। দগ্ধ হয়ে ছটফট করলেও তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়নি। পরে এলাকাবাসীর চাপে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে ভর্তি করা হয়।

এ ঘটনায় জান্নাতির দাদা মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম খান থানায় মামলা করতে গেলে গড়িমসি করে পুলিশ। পরে বাধ্য হয়ে তিনি আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। কিন্তু পৌনে দুই মাসেও আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেনি পিবিআই। এরই মধ্যে দীর্ঘ ৪০দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে গত ৩০ মে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয় জান্নাতির। কিন্তু অগ্নিদগ্ধের ঘটনার পৌণে দুই মাস পার হলেও অজ্ঞাত কারণে কোন আসামি গ্রেপ্তার হয়নি।
সর্বশেষ গত শনিবার রাতে জান্নাতিকে যৌতুকের জন্য নির্যাতন ও মাদক ব্যবসায় সম্পৃক্ত না হওয়ায় পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগে শাশুড়ি শান্তি বেগম ,স্বামী শিপলু ওরফে শিবু, ননদ ফাল্গুনী বেগম ও শ্বশুর হুমায়ুন মিয়াকে আসামি করে সদর মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন জান্নতির বাবা। মামলা দায়েরের পরপরই সন্দেহভাজন হিসেবে ৬জনকে আটক করে পুলিশ।
নরসিংদী সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দুজ্জামান বলেন, থানায় মামলা দায়ের করার পর পরই আসামি গ্রেপ্তারে পুলিশের চিরুনি অভিযান শুরু হয়। তাদের গ্রেপ্তার করতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ৬ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তদন্তের স্বার্থে এখনই সব বলা যাচ্ছে না। তবে অচিরেই এজাহার নামীয় আসামিদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।



এই বিভাগের আরও