নরসিংদীতে ছাত্রীর সঙ্গে পরকীয়ার জেরে কলেজ শিক্ষকের আত্মহত্যা

২২ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৬:৩২ পিএম | আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২৪, ০৬:৪০ এএম


নরসিংদীতে ছাত্রীর সঙ্গে পরকীয়ার জেরে কলেজ শিক্ষকের আত্মহত্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক:

নরসিংদীতে ছাত্রীর সঙ্গে পরকীয়া প্রেমের সম্পর্কের জেরে আবদুল্লাহ আলী (২৮) নামের এক কলেজ শিক্ষক আত্মহত্যা করেছেন। বুধবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে সদর উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের মৌলভীপাড়া এলাকার বাড়ি থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এই সময় ঘটনাস্থলে থাকা ওই ছাত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।

আবদুল্লাহ আলী নরসিংদী মডেল কলেজের রসায়ন বিভাগের প্রভাষক ও সদর উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের মৌলভীপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তাঁর পাঁচমাসের অন্তসত্ত্বা স্ত্রী সিরাতুন নাহার ও চার বছর বয়সী ছেলে সন্তান রয়েছে। ওই ছাত্রী একই কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী। তার বাড়ি নরসিংদী শহরের ব্রাহ্মন্দী এলাকায়।

পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুই বছরের প্রেমের সম্পর্কের পরিণতিতে ২০১৭ সালে পারিবারিকভাবে বিয়ে করেন আবদুল্লাহ আলী ও সিরাতুন নাহার। পরের বছরই তাদের সংসারে এক ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। গতবছর একই কলেজের এক ছাত্রীর সঙ্গে পরকীয়া প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন ওই শিক্ষক। এই পরকীয়া সম্পর্কের কথা তাঁর স্ত্রী জানতে পারেন চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে। এ নিয়ে তিনজনের মধ্যেই দ্বন্দ্ব চলছিল।

ঘটনাস্থলে পৌঁছার পর পুলিশ নিহতের স্ত্রী ও ওই ছাত্রীর কাছে 'ঘটনা কিভাবে ঘটেছে' জানতে চায়। এ সময় তারা ঘটনার বিস্তারিত পুলিশ সদস্যদের কাছে বলেন। সেখানে উপস্থিত থাকা কয়েকজন তাদের বরাত দিয়ে জানান, চলতি মাসের ৬ তারিখে আবদুল্লাহ আলীর স্ত্রী সিরাতুন নাহার জানতে পারেন, ওই ছাত্রীর সঙ্গে শিক্ষকের শারীরিক সম্পর্ক রয়েছে। গত এক সপ্তাহ আগে এই তিনজন একসঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নেন, সিরাতুন নাহার তাঁর স্বামী আবদুল্লাহকে ডিভোর্স দেবেন, অন্যদিকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশের পর ওই ছাত্রীকে বিয়ে করবেন আবদুল্লাহ। এরপর থেকে সিরাতুন নাহার ছেলেকে নিয়ে রায়পুরায় বাপের বাড়িতে ছিলেন।

পুলিশের কাছে দেওয়া ওই ছাত্রীর ভাষ্যমতে, গত মঙ্গলবার ছিল তার জন্মদিন। এ উপলক্ষে তার কয়েকজন সহপাঠীকে নিয়ে স্থানীয় একটি রেস্টুরেন্টে কেক কাটেন আবদুল্লাহ। পরে তাকে বাড়ি ফিরে যেতে বলা হলেও সে তা না করে ছেলে বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে যায়। এ নিয়ে প্রেমিকার প্রতি প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ ছিল আবদুল্লাহ। পরদিন সকালে আবদুল্লাহ 'আই এম ডেসট্রয়িং মাইসেল্ফ' লিখে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে একটি স্টোরি দেন। দুপুরে তাদের মধ্যে কথা হলে আবদুল্লাহ বলেন, 'যা হইছে হইছে, তুমি আর আমার বাসায় আইসো না, লোক জানাজানি করারও দরকার নেই, আমি নিজেকে শেষ করে দিচ্ছি'। পরে সন্ধ্যার পর বাড়ি ফিরে স্ত্রী ও ছাত্রীকে একটি এসএমএস পাঠান আবদুল্লাহ।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ৯টার মধ্যবর্তী কোন এক সময়ে আলমারি থেকে বউয়ের শাড়ি বের করে ঘরের পাখায় ঝুলে পড়েন আবদুল্লাহ। এদিকে এসএমএস পেয়ে ওই ছাত্রী তাঁর বাড়িতে চলে আসেন এবং তাঁর কক্ষের দরজা বন্ধ দেখতে পান। কিছুক্ষণের মধ্যে স্ত্রী সিরাতুন নাহারও বাপের বাড়ি থেকে ওই বাড়িতে চলে আসেন। দীর্ঘক্ষণ তাদের ডাক-চিৎকারের পরও দরজা না খোলায় পরে স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় রাত ৯টার দিকে ওই কক্ষের দরজা ভেঙে ফেলা হয়। এ সময় তাঁর ঝুলন্ত লাশ দেখতে পান তারা। পরে খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ফারিয়া আফরোজ ও নরসিংদী মডেল থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়।

এদিকে দরজা ভেঙে ওই কক্ষে প্রবেশের পর পুলিশ আসার আসার মধ্যবর্তী সময়ে মৃত ব্যক্তি, তাঁর স্ত্রী ও ওই ছাত্রীর তিনটি মোবাইল ফোন চুরি হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। কান্নাকাটির মধ্যে কে এই ঘটনা ঘটিয়েছেন তা এখনো নিশ্চিত করা যায়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, ওই ছাত্রীর কাছের কেউ ঘটনাস্থলে আসার কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনটি ফোন কৌশলে লুকিয়ে ফেলেছেন। সকল প্রমাণ নষ্ট করে দেওয়ার জন্যই এই কাজটি করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ আলামত হিসেবে মোবাইল ফোন তিনটি উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।

নরসিংদী মডেল কলেজের অধ্যক্ষ কামরুল ইসলাম বলেন, রসায়নের শিক্ষক আবদুল্লাহ আলী একজন জনপ্রিয় শিক্ষক ছিলেন। তার এমন মৃত্যুতে আমরা কলেজ পরিবার শোকাহত। আমাদের কলেজেরই এক ছাত্রীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেওয়ার কথা শুনেছি।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ফারিয়া আফরোজ জানান, এক শিক্ষকের আত্মহত্যার খবর পেয়ে বুধবার রাত ১২টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ওই ছাত্রী আমাদের কাছে তাদের মধ্যে সম্পর্ক থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। অধিকতর তদন্তের স্বার্থে ওই ছাত্রীকে আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেওয়া হয়েছে। এই ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ও ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয় হবে।



এই বিভাগের আরও