নরসিংদীতে দুই স্পিডবোটের সংঘর্ষ: তিনদিনেও সন্ধান মেলেনি নিখোঁজ শিশুর

১৫ এপ্রিল ২০২১, ০৭:২০ পিএম | আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:২৯ পিএম


নরসিংদীতে দুই স্পিডবোটের সংঘর্ষ: তিনদিনেও সন্ধান মেলেনি নিখোঁজ শিশুর

নিজস্ব প্রতিবেদক:

নরসিংদীর মেঘনা নদীতে দুই স্পিডবোটের মুখোমুখি সংঘর্ষের ৭৫ ঘণ্টা পার হলেও সন্ধান মেলেনি নিখোঁজ দুই বছর বয়সী শিশু নাহিদ মিয়ার। গত তিনদিন ধরে ঢাকা থেকে আগত ডুবুরি দল, স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস ও নৌ পুলিশের সদস্যদের চেষ্টায়ও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি শিশুটিকে। নৌ পুলিশ জানিয়েছে, এখন লাশ ভেসে উঠার অপেক্ষা করা ছাড়া আর বিকল্প কিছু করার নেই।

এর আগে সোমবার (১২ এপ্রিল) সন্ধ্যায় সদর উপজেলার চরাঞ্চল করিমপুরের চম্পকনগর এলাকায় মেঘনা নদীতে দুই স্পিডবোটের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় নিখোঁজ দুইবছর বয়সী নাহিদ মিয়া নরসিংদী শহরের বানিয়াছল এলাকার ব্যবসায়ী ফারুক মিয়ার ছেলে।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, সোমবার সন্ধ্যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সলিমগঞ্জ থেকে যাত্রীবাহী একটি স্পিডবোট নরসিংদীর থানারঘাটের দিকে এবং যাত্রীবাহী আরেকটি স্পিডবোট নরসিংদী শহরের থানারঘাট থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরের মরিচাকান্দির দিকে যাচ্ছিল। নরসিংদী সদর উপজেলার চরাঞ্চল করিমপুরের চম্পকনগর এলাকার মেঘনা নদীতে স্পিডবোট দুটি পরষ্পরকে অতিক্রম করার সময় অন্ধকারের মধ্যে তাদের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই সময় মরিচাকান্দিগামী স্পিডবোটটি ডুবে যায় এবং অপর স্পিডবোট থেকে শিশুসহ নদীর পানিতে ছিটকে পড়েন মোট ৬ জন। তাদের মধ্যে ডুবে যাওয়া স্পিডবোটের যাত্রী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর থানার পাহাড়িয়াকান্দি গ্রামের মৃত সুরুজ মিয়ার ছেলে হানিফ মিয়া (৬০) ঘটনাস্থলেই নিহত হন। এরপর থেকেই নিখোঁজ শিশুকে উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছে রাজধানী ঢাকা থেকে আগত ডুবুরি দল, স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস ও করিমপুর নৌ ফাঁড়ির পুলিশ।

নিখোঁজ শিশুর পরিবারের সদস্যরা জানান, ঘটনার দিন সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নাহিদ মিয়াকে সঙ্গে নিয়ে তার বড়বোন ফারিয়া আক্তার (১৬) বাড়ির কাউকে কিছু না জানিয়ে বের হন। তারা দুজন নরসিংদী শহরের থানারঘাট থেকে একটি স্পিডবোটে করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সলিমগঞ্জে এক স্বজনের বাড়িতে ঘুরতে যান। শেষ বিকেলে বাড়িতে ফেরার জন্য আবার সলিমগঞ্জ ঘাট থেকে নরসিংদীর উদ্দেশ্যে স্পিডবোটে করে রওনা হন। ফেরার পথেই করিমপুরের চম্পকনগর এলাকায় দুই স্পিডবোটের মধ্যে মুখোমুখি এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই দুর্ঘটনায় শিশু নাহিদ মিয়া স্পিডবোট থেকে ছিটকে নদীতে পড়ে যায়। এরপর থেকেই সে নিখোঁজ। প্রায় একবছর আগে এই ভাইবোন তাদের মাকে হারায়।

এদিকে বুধবার (১৪ এপ্রিল) দুপুরে রায়পুরার আমিরগঞ্জের নলবাটা এলাকায় মেঘনা নদীতে কচুরিপানায় আটকে ছিল এক শিশুর লাশ। স্থানীয় লোকজন ওই লাশ দেখতে পেয়ে তার ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দেন। এর সূত্র ধরে বিকেলে নৌ পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা নলবাটা এলাকায় যান লাশ উদ্ধারের জন্য। কিন্তু তারা ওই স্থানে যাওয়ার আগেই নদীতে ভাটার টানে ওই লাশ ভেসে অন্যত্র চলে যায়। নৌ পুলিশ বলছে, লাশটি উদ্ধার করা গেলে নিশ্চিত হওয়া যেত তা ওই নিখোঁজ শিশুর লাশ কী না!

নিখোঁজ শিশুর বাবা ফারুক মিয়া জানান, নলবাটা এলাকায় কচুরিপানায় আটকে থাকা ওই শিশুর লাশের বর্ণনা শুনে আমি নিশ্চিত হয়েছি এটি আমার ছেলে নাহিদ মিয়ারই লাশ ছিল। ফেসবুকে ছবি দেখে ওই এলাকায় গিয়ে যারা লাশ দেখেছেন তাদের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। আমার ছেলের শরীরে সাদা শার্ট ও গলায় একটি চেইন ছিল, যা তাদের বর্ণনার সঙ্গেও মিলেছে। 

আজ বৃহস্পতিবার (১৫ এপ্রিল) রাত ৯টার দিকে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তাকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

জানতে চাইলে নরসিংদীর করিমপুর নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক মাহবুব আলম জানান, নিখোঁজের পর থেকে শিশুটিকে উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছে ডুবুরি দল, ফায়ার সার্ভিস ও নৌ পুলিশের সদস্যরা। নলবাটা এলাকায় কচুরিপানায় এক শিশুর লাশ আটকে থাকার খবর পেয়ে সেখানে গিয়েও লাশ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। আমরা সেখানে যাওয়ার আগেই ভাটার টানে ওই লাশ অন্যত্র ভেসে গেছে। 



এই বিভাগের আরও