মনোহরদীর গোতাশিয়ায় নৌকার প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল

০৫ ডিসেম্বর ২০২১, ০৮:১২ পিএম | আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪০ এএম


মনোহরদীর গোতাশিয়ায় নৌকার প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল

নিজস্ব প্রতিবেদক:

নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার গোতাশিয়া ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মতিউর রহমানের মনোনয়ন বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। এর আগে তথ্য গোপনের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাঁর মনোনয়ন অবৈধ ঘোষণা করেছিলেন ওই ইউপির রিটার্নিং কর্মকর্তা। আজ রোববার বিকালে আপিল নিষ্পত্তি শেষে তাঁর মনোনয়ন বাতিল ঘোষণা করে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়। চতুর্থ ধাপে গোতাশিয়া ইউপিতে আগামী ২৬ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

এর সত্যতা নিশ্চিত করে সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মেছবাহ উদ্দিন জানান, গত ২৯ নভেম্বর ছিল চতুর্থ ধাপের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের শেষ দিন। ওই দিন দুপুরে রিটার্নিং কর্মকর্তা নাজমুল আনোয়ারের কাছে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে তথ্য গোপনের অভিযোগ তোলেন। পরে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তার মনোনয়ন অবৈধ ঘোষণা করা হয়। এই ঘটনায় তিনি জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে আপিল করলে আজ বিকেলে তা নিষ্পত্তি শেষে তাঁর মনোনয়ন বাতিল করা হয়।

মতিউর রহমান গোতাশিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। তৃণমূল থেকে কেন্দ্রে পাঠানো তালিকায় প্রথমেই তাঁর নাম ছিল। ওই তালিকায় নাম থাকা অন্য দুজন হলেন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আবুল বরকত ও সিনিয়র সহসভাপতি আলতাফ হোসেন মাস্টার। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সভায় মতিউর রহমানকে নৌকার প্রার্থী করা হয়।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকর্মী জানান, যাচাই-বাছাই চলাকালে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে তথ্য গোপনের চ্যালেঞ্জ করেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বিদ্রোহী প্রার্থী মো. আবুল বরকত। মো. আবুল বরকত তাকে চ্যালেঞ্জ করেন, আপনি একজন ট্যাক্সদাতা হিসেবে আপনার টিন সার্টিফিকেট মনোনয়নপত্রে নেই কেন? মতিউর রহমান জবাব দেন, তিনি ট্যাক্সদাতা নন। এরপরেই মো. আবুল বরকত তাঁর সঙ্গে থাকা মতিউর রহমানের টিন সার্টিফিকেট বের করে মনোনয়ন বোর্ডে জমা দেন। পরে সেটি যাচাই করে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় মতিউর রহমানের মনোনয়ন অবৈধ বলে ঘোষণা দেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।

ওই ইউপির রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নাজমুল আনোয়ার জানান, মনোনয়নপত্র বাছাইকালে বিধি মোতাবেক প্রার্থী, প্রস্তাবকারী ও সমর্থনকারীরা উপস্থিত ছিলেন। মতিউর রহমান একজন করদাতা হয়েও তিনি তাঁর মনোনয়নপত্রে তা উল্লেখ করেননি, যা বিধি বহির্ভূত। স্থানীয় সরকার নির্বাচন বিধিমালা ২০১৯ এর বিধি ১২ এর উপবিধি (৩) (ক) অনুযায়ী দাখিলকৃত মনোনয়নপত্র ফরম- ‘ক’ এর তৃতীয় অংশের অনুচ্ছেদ (৩) অনুযায়ী মতিউর রহমান একজন আয়কর দাতা হওয়া সত্বেও তিনি তা অস্বীকার করার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট বিধির ব্যত্যয় ঘটিয়েছেন। তাই স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) নির্বাচন বিধিমালা ২০১০ এর বিধি ১৪ এর উপবিধি (৩) (গ) অনুসারে তাঁর মনোনয়ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে বাতিল করা হয়েছে।

ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বিদ্রোহী প্রার্থী মো. আবুল বরকত জানান, আমি আওয়ামী লীগের একজন একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলাম কিন্তু পাইনি। দল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমানের ওপর আস্থা রেখেছিল। তিনি তাঁর টিন সার্টিফিকেট জমা না দিয়ে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন। বিষয়টি উত্থাপন করার পর অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাঁর মনোনয়ন বাতিল করা হয়। নৌকা প্রতীক পেয়েও নির্বাচনের মাঠে থাকতে না পারার বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মতিউর রহমান জানান, একটি ভুলের কারণে আমার মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। প্রকৃতপক্ষে এই ভুলের কারণে মনোনয়ন বাতিল হতে পারে না, এটা সংশোধনযোগ্য। কিন্তু আপিল বোর্ড আমাকে কোন সুযোগ দেয়নি। মনে হচ্ছে, সামথিং ইজ রং। এই ব্যাপারে আমি আইনী পদক্ষেপ চালিয়ে যাব। 

নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মতিউর রহমানের মনোনয়ন বাতিলের পর নির্বাচনের মাঠে আছেন মাত্র দুজন প্রার্থী। তাদের একজন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বিদ্রোহী প্রার্থী মো. আবুল বরকত ও অন্যজন ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মো. শাহাবুদ্দীন।