মাদ্রাসা ছাত্রীর লাশ উদ্ধার: হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন  

০৫ ডিসেম্বর ২০২২, ০৬:১০ পিএম | আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:০৭ পিএম


মাদ্রাসা ছাত্রীর লাশ উদ্ধার: হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন  

মাধবদী প্রতিনিধি:

নরসিংদীর মাধবদীতে মহিলা মাদ্রাসার শৌচাগারে মাইশা আক্তার (১০) নামের এক ছাত্রীর লাশ উদ্ধারের ঘটনাকে হত্যাকাণ্ড দাবি করে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে। এ সময় স্থানীয়রা ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করলে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মহাসড়কের একপাশে দাঁড়িয়ে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করার আহবান জানালে তারা মহাসড়ক থেকে সরে যান।

সোমবার দুপুরে মাধবদী থানার শেখেরচর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন স্থানে মহাসড়কের দুপাশে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। দুই ঘণ্টাব্যাপী এই মানববন্ধনে মাইশার পরিবার, এলাকাবাসী ও সামাজিক সংগঠনের কর্মীসহ কয়েকশত মানুষ অংশ নেন। 

গত বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে শেখেরচরের কুড়েরপাড় এলাকার জামিয়া কওমিয়া মহিলা মাদ্রাসার শৌচাগার থেকে গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় মাইশা আক্তারকে উদ্ধার করা হয়। পরে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ তাকে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এর দেড়মাস আগে ১৯ অক্টোবর দুপুরে পাঠদান চলাকালে একই কায়দায় মাদ্রাসাটির আরেকটি শৌচাগার থেকে আফরিন আক্তার (১৬) নামের আরেক ছাত্রীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছিল।

মাইশা আক্তার নরসিংদী সদর উপজেলার মাধবদী থানার ভগীরথপুর এলাকার ডাইংশ্রমিক নেছার উদ্দিনের মেয়ে। মাদ্রাসাটির একজন আবাসিক ছাত্রী হিসেবে থেকে মক্তব ২য় শ্রেণিতে পড়ত সে। অন্যদিকে আফরিন আক্তার মাধবদীর দড়িগাজীরগাঁও এলাকার ডালিম মিয়ার মেয়ে ও মাদ্রাসাটির আলিম প্রথম বর্ষের (উচ্চমাধ্যমিক) শিক্ষার্থী ছিল।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, মাইশার পরিবার প্রথম থেকেই বলে আসছে, এটা আত্মহত্যা নয় পরিকল্পিত হত্যা। ১০ বছরের একটি শিশু প্রায় ৭ ফুট উঁচুতে উড়না ও গামছা জোড়া দিয়ে কোনোভাবেই আত্মহত্যা করতে পারে না। তাঁর শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্নও পাওয়া গেছে। তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে এখন আত্মহত্যা বলা হচ্ছে। দেড়মাস আগে এই মাদ্রাসার আরেকটি শৌচাগার থেকে আরেকটি ১৬ বছরের ছাত্রীর লাশ পাওয়া গিয়েছিল। পরপর এমন ঘটনা ঘটতে থাকায় ধারণা করা যাচ্ছে, মাদ্রাসাটির ভেতরে অবশ্যই কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে। মাদ্রাসাটি বন্ধ ঘোষণা করে পুলিশকে রহস্য উদঘাটনের দাবি জানিয়ে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনার অনুরোধ জানান তারা। আর তা যদি না করা হয় তবে আরও বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে। তাদের দাবি মাদরাসা কর্তৃপক্ষ মাইশাকে হত্যা করে পুলিশ ও পরিবারকে না জানিয়ে লাশ হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে এখন আত্মহত্যার নাটক সাজিয়েছে।

মানববন্ধনে বক্তব্য দেন, শিশু মাইশার স্বজন মো. শাহাদাত হোসেন, মো. আলম মিয়া, মো. রোমান মিয়া, মো. বেলায়েত মেম্বার, মো. আল আমিন প্রধান। এ সময় ব্যানার-ফেস্টুন হাতে মানববন্ধনে অংশ নেয় মাধবদী ব্লাড ডোনার ক্লাব, সচেতন নাগরিক সমাজ (সনাক), ভগীরথপুর ওয়ান ক্লাব, যুব জাগরণ সংস্থা, এডভান্স এডুকেয়ার জুনিয়র স্কুল, কান্দাপাড়া সবুজ বাংলা ব্লাড ডোনার ক্লাব, মাধবদী কালচারাল ক্লাব, উই কেয়ার অর্গানাইজেশন, বাংলাদেশ বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড নামের বিভিন্ন সংগঠনের কর্মীরা।

স্থানীয়দের প্রশ্ন, মাইশার শ্রেণিকক্ষ তৃতীয় তলায় হলেও তাকে পাওয়া যায় চতুর্থ তলার শৌচাগারে। তৃতীয় তলার শৌচাগারে না গিয়ে চতুর্থ তলায় সে কেন গিয়েছিল? মাইশার লাশ শৌচাগারে ঝুলে থাকলেও তাঁর পা ফ্লোরের কাছেই পড়ে ছিল। গলায় প্যাঁচানো ওরনা ও রডে বাধা থাকা গামছাটিও তাঁর নিজের নয়। অন্যদিকে মাইশা কপালের দুই দিকে আঘাত পেল কিভাবে? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পেলেই বুঝা যাবে, এটি হত্যাকাণ্ড নাকি আত্মহত্যা।

জানতে চাইলে মাধবদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রকিবুজ্জামান জানান, এই ঘটনায় ছাত্রী মাইশার বাবা নেছার উদ্দিন থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামী করে মামলা করেছেন। এখনো পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। জড়িত যেসব ব্যক্তিদের নাম পুলিশি তদন্তে আসবে তাদের গ্রেপ্তার করা হবে।

উল্লেখ্য, ঘটনার দিন সকালে বাবা নেছারউদ্দিন ওই মাদ্রাসায় গিয়ে দুপুরে খাওয়ার জন্য মাইশার হাতে ঘরে রান্না করা খাবার দিয়ে আসেন। দুপুরে পরিবারটির সবাই পলাশের ঘোড়াশালের এক আত্মীয়বাড়িতে দাওয়াত খেতে যান। সেখানে থাকা অবস্থাতেই বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে নেছারউদ্দিনের মুঠোফোনে মাদ্রাসার এক হুজুরের কল আসে। মুঠোফোনে তিনি নেছার উদ্দিনকে জানান, মাইশাকে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে, আপনি দ্রুত নরসিংদী সদর হাসপাতালে আসেন। তিনিসহ পরিবারটির কয়েকজন সদস্য ওই হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গিয়ে মাইশাকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান। এ সময় তার কপালসহ আঘাতের চিহ্ন দেখতে পান। পরে তাকে জানানো হয়, মাইশা মাদ্রাসাটির শৌচাগারের ভেতরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।



এই বিভাগের আরও