মাধবদীতে বণিক সমিতির পদ থেকে পৌর মেয়রকে অব্যাহতি

০৬ জানুয়ারি ২০২১, ০৬:২৭ পিএম | আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২৪, ০৭:৪৫ এএম


মাধবদীতে বণিক সমিতির পদ থেকে পৌর মেয়রকে অব্যাহতি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

নরসিংদীর মাধবদীতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আত্মসাতের ৮২ লাখ টাকা ফিরিয়ে না দেওয়ায় মাধবদী বাজার মার্চেন্ট এসোসিয়েশনের কার্যকরী সদস্যের পদ থেকে মাধবদী পৌর মেয়র মোশাররফ হোসেন প্রধান মানিককে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। বুধবার (০৬ জানুয়ারি) সকালে পদাধিকার বলে প্রাপ্ত পদ থেকে পৌর মেয়রকে অব্যাহতি দেওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেন সংগঠনটির সভাপতি সফি উদ্দিন আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ার হোসেন।

ওই দুই ব্যবসায়ী নেতা জানান, গত ৮ ডিসেম্বর আমাদের কার্যালয়ে ব্যবসায়ীদের নিয়ে ডাকা জরুরি সভায় আত্মসাতের ওই টাকা প্রদানের জন্য পৌর মেয়রকে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়। ওই সময়ের মধ্যে উল্লেখিত টাকা প্রদানে ব্যর্থ হলে কার্যকরী সদস্যের পদ থেকে অব্যাহতির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পৌরমেয়র মোশাররফ হোসেন প্রধান টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় তাকে তার পদাধিকার বলে প্রাপ্ত পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

এর আগে গত ২১ ডিসেম্বর পৌর মেয়রের বিরুদ্ধে ৮২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সংগঠনটি সংবাদ সম্মেলন করে। এর প্রতিক্রিয়ায় বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেওয়া বক্তব্যে পৌরমেয়র জানিয়েছিলেন, ব্যবসায়ীদের গচ্ছিত কোন টাকা তার কাছে নেই। মেয়রের এমন বক্তব্যে পাওনাদার ব্যবসায়ীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভ ও উত্তেজনা দেখা দেয়।

ব্যবসায়ী সংগঠনটির বিভিন্ন নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিবুনাথ ও ভোলানাথ নামের দুই ব্যবসায়ী স্থানীয় অন্যান্য ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নগদ টাকা ও কাপড় কেনা বাবদ প্রায় ১৮ কোটি টাকা দেনা হওয়ার পর দেউলিয়া হয়ে যান। পাওনাদার ব্যবসায়ীদের অভিযোগের ভিত্তিতে বিষয়টি সমাধানের জন্য আমরা এক বৈঠকে বসেন ব্যবসায়ী নেতারা। সেখানে পৌরমেয়র মোশাররফ হোসেন প্রধান ওই দুই ব্যবসায়ীর পক্ষে ৪ কোটি টাকা প্রদানের দায়িত্ব নেন। পরে পৌরমেয়র দেউলিয়া হওয়া শিবুনাথ ও ভোলানাথের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে মজুদ থাকা ৮২ লাখ টাকার কাপড় বিক্রি করেন। কিন্তু কাপড় বিক্রি করে প্রাপ্ত ৮২ লাখ টাকার বিষয়টি মৌখিকভাবে স্বীকার করলেও আমাদের কাছে ওই টাকা বুঝিয়ে না দিয়ে তা আত্মসাত করেন। এ ব্যাপারে দফায় দফায় ওই টাকা বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য পৌরমেয়রকে তাগিদ দেওয়া হলে তিনি দেই-দিচ্ছি বলে সময়ক্ষেপন করতে থাকেন।

মাধবদী বাজার মার্চেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি সফিউদ্দিন আহমেদ বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, মেয়রকে বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে তিনি কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় সংগঠনের নীতিমালা অনুযায়ী কার্যকরী পরিষদের সিদ্ধান্তে গত সোমবার মেয়রকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

তাকে সংগঠনটি থেকে অব্যাহতির ঘোষণা দেওয়ার পর ওই টাকা পরিশোধের ব্যাপারে সংগঠনটি বরাবর চিঠি দেন পৌরমেয়র।

এদিকে গত সোমবার মাধবদী পৌরসভার প্যাডে মেয়র মোশাররফ হোসেন প্রধান স্বাক্ষরিত এক চিঠি মাধবদী বাজার মার্চেন্ট এসোসিয়েশন বরাবর পাঠানো হয়। এতে পৌরমেয়র বলেন, প্রায় তিনবছর আগে ওই দুই ব্যবসায়ীর কাপড় বিক্রি করে মোট ৮১ লাখ টাকা আমার কাছে গচ্ছিত ছিল। ওই টাকা থেকে আড়াই বছর পূর্বে চারজনকে মোট ৩৭ লাখ টাকা দেওয়া হয়। অবশিষ্ট ৪৪ লাখ টাকা আগামীকাল (গতকাল) মঙ্গলবার (৫ জানুয়ারি) বিকেল ৩টার দিকে আপনাদের উপস্থিতিতে ব্যবসায়ীদের মধ্যে বণ্টন করে দেওয়া হবে।

তবে ব্যবসায়ী নেতারা জানান, ব্যবসায়ীদের পাওনা টাকা পরদিন মঙ্গলবার বুঝিয়ে দেওয়ার কথা জানানো হয়। তার প্রেরিত চিঠিটি স্থানীয় ব্যবসায়ী মহলে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে।

মো. শফিউদ্দিন ও আনোয়ার হোসেন জানান, পাওনাদার ব্যবসায়ীদের চাপে আমরা প্রথমে পৌরমেয়রকে টাকা পরিশোধের জন্য চিঠি পাঠাই। চিঠির জবাবে মেয়র গত ৩০ নভেম্বরের মধ্যে ওই টাকা পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু সময়মতো সে টাকা পরিশোধ না করে উল্টো আমাদের অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। পরে জরুরি সভা ডেকে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এ ব্যাপারে জানতে মাধবদীর পৌরমেয়র মোশাররফ হোসেন প্রধানকে বারবার ফোন করা হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।



এই বিভাগের আরও