মাধবদীতে মেয়র পন্থী দুই গ্রুপের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ ২

১৪ ডিসেম্বর ২০২০, ০৪:১৫ পিএম | আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৪৪ এএম


মাধবদীতে মেয়র পন্থী দুই গ্রুপের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ ২

নিজস্ব প্রতিবেদক:

আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নরসিংদীর মাধবদী পৌরসভার মেয়র মোশাররফ হোসেন প্রধান মানিক এর আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত তার ভাগিনা আরিফ ও আহাদ গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। রবিবার (১৩ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত পৌনে এগারোটার দিকে মাধবদী এসপি ইনস্টিটিউশনের ভিতরের মাঠে দুই গ্রুপের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

এতে আহাদ গ্রুপের সদস্য পৌরশহরের বিরামপুর এলাকার জাকির হোসেনের ছেলে সাব্বির (২৪) ও আরিফ গ্রুপের সদস্য মেয়র মোশাররফের আরেক ভাগিনা নুরালাপুর গ্রামের কাইয়ুম মিয়ার ছেলে আশিক(২৮) গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

খবর পেয়ে মাধবদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দুজ্জামান ও ওসি তদন্ত তানভীর আহমেদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এদিকে ঘটনাটিকে ধামাচাপা দিতে ঘটনার পরপর মাধবদী পৌরসভার মেয়র মোশাররফ হোসেন মানিক ও তার ভাই নরসিংদী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের প্রেসিডেন্ট আলী হোসেন শিশির পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে ঘন্টাব্যাপী বৈঠক করেন।

এসময় মাঠের ভিতরে সাংবাদিকসহ সুধী সমাজের কাউকে ঢুকতে দেয়া হয়নি। খবর পেয়ে সেখানে যাওয়ার পর ঘটনাস্থলে কাউকে না পাওয়া গেলেও ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ কর্তৃক একটি গুলির খোসা উদ্ধারের কথা জানিয়েছেন ওসি সৈয়দুজ্জামান।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ব্যাডমিন্টন খেলাকে কেন্দ্র করে রবিবার সন্ধ্যার পরে মাধবদী এসপি স্কুলের ভিতর মাঠে আহাদ গ্রুপের লোকজন কর্তৃক আরিফ গ্রুপের লোকজন মারধরের শিকার হওয়ার খবর পেয়ে আরিফ ঘটনাস্থলে এসে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ে। এতে তারই খালাতো ভাই আশিক ও প্রতিপক্ষ গ্রুপের সাব্বির গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়। আহতদেরকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে ও পরে একজনকে ঢাকার অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। 

খবর পেয়ে নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) শাহেদ আহমেদ, জেলা গোয়েন্দা শাখার পুলিশ পরিদর্শক রুপণ কুমার সরকার, মাধবদী থানার ওসি সৈয়দুজ্জামানসহ পুলিশ বিভাগের বিভিন্ন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

স্থানীয়রা জানায়, খেলাকে উপলক্ষ করে এ সংঘর্ষ হলেও মাধবদীতে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আহাদ গ্রুপের সাথে আরিফ গ্রুপের দীর্ঘদিনের শত্রুতাই এর মূল কারণ।

জানা যায়, মাধবদী পৌরসভার মেয়র মোশাররফ হোসেন মানিক পৌরসভার দায়িত্ব গ্রহণের পরপর পৌরসভার টেন্ডার থেকে শুরু করে হাট-বাজার ইজারা, ঠিকাদারিসহ সবকিছু এককভাবে নিয়ন্ত্রণ শুরু করে আরিফ। মামার ক্ষমতায় পাকাপোক্ত হাতিয়ার হিসেবে কাজ করতে তখন সে নরসিংদী সদর থানা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদকের পদ ছেড়ে তার দুই মামা মাধবদী পৌর মেয়র মোশাররফ হোসেন মানিক  ও নরসিংদী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের প্রেসিডেন্ট আলী হোসেন শিশিরের নেতৃত্বে তৎকালীন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও নরসিংদী সদরের এমপি লেঃ কঃ (অবঃ) নজরুল ইসলাম হিরুর হাতে ফুল দিয়ে আওয়ামীলীগে যোগদান করেন। এরপর থেকেই সে চরম বেপরোয়া হয়ে ওঠে। কারণে অকারণে মানুষকে ধরে এনে মারধর, গোলাগুলিসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত হয়ে পড়ে। থানায় জমা হয় তার নামে একের পর এক অভিযোগ।

মেয়রের আস্কারায় পৌরসভার এক কর্মকর্তার বিশ্রামকক্ষ দখল করে নিজের অফিস বানিয়ে সেখানে নিয়মিত অবস্থান করতে থাকে আরিফ। পরবর্তীতে আরিফের জায়গায় মেয়র মোশাররফ তার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত নারী বিরামপুরের হাজী নান্নু মিয়ার স্ত্রীর ছেলে আহাদকে পৌরসভার বিভিন্ন কাজের দায়িত্ব দেয়। এনিয়ে আহাদ এর প্রতি আরিফের ক্ষোভ তৈরি হতে থাকে। এছাড়া আগে থেকেই আহাদদের বাড়িতে মেয়রের যাওয়া আসার বিরোধিতা করতো  আরিফ। সবমিলিয়ে মেয়র মোশাররফের সাথে আরিফের দূরত্ব বাড়তে থাকে। মামা-ভাগিনার এই দূরত্বের পুরো ফায়দা নিয়ে অর্থ এবং ক্ষমতায় ক্রমেই আহাদ গ্রুপ শক্তিশালী হয়ে উঠে।

সম্প্রতি,  আহাদ জার্মানির বিখ্যাত ওডি কোম্পানির নতুন মডেলের একটি ব্র্যান্ড নিউ প্রাইভেট কার ক্রয় করে। এসব নিয়ে আরিফ গ্রুপের সাথে তার বিরোধ চরম পর্যায়ে পৌঁছে। এর জের ধরেই এই গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এঘটনায় গোটা এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

এর আগে খোদ মেয়র মোশারফের বিরুদ্ধেও পিস্তল উঁচিয়ে এক ব্যবসায়ীকে ধাওয়া করার অভিযোগ উঠে।

এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে ফোন ধরেননি মেয়র মোশাররফ হোসেন মানিক।

মাধবদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দুজ্জামান বলেন, খেলার মধ্যে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে গুলির ঘটনা ঘটেছে। আমরা ঘটনাস্থল থেকে একটি গুলির খোসা উদ্ধার করেছি। আরিফের বাড়িতে রাতভর অভিযান চালানো হয়েছে। তবে সে পলাতক থাকায় তাকে আটক করা যায়নি। তাকে আটকের চেষ্টা চলছে।



এই বিভাগের আরও