বেলাবতে সংযোগ সড়ক না থাকায় কাজে আসছেনা একাধিক সেতু 

০৭ মার্চ ২০২০, ০২:৩৬ পিএম | আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০১:২২ এএম


বেলাবতে সংযোগ সড়ক না থাকায় কাজে আসছেনা একাধিক সেতু 

শেখ আব্দুল জলিল:

নরসিংদীর বেলাব উপজেলার বিন্নাবাইদ ইউনিয়ন এলাকায় সংযোগ সড়ক না থাকায় কাজে আসছে না দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর নির্মিত একাধিক সেতু। এতে বাঁশের সাকো বা বিকল্প পথে চলাচল করতে গিয়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন এলাকাবাসী। অপরিকল্পিতভাবে এসব সেতু নির্মাণ করায় সরকারের অর্থ অপচয় হয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।  


সরেজমিন গেলে স্থানীয়রা জানান, বিন্নাবাইদ ইউনিয়নের চরকাশিম নগর বাজারের কাছে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের উপর ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সেতু কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ২৯ লাখ ৬১ হাজার ছয়শ সাত টাকা ব্যয়ে ২৯ মিটার দৈর্ঘ্য একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। সেতু নির্মাণের পর অ্যাপ্রোচ ও সংযোগ সড়ক তৈরী না করায় এই সেতুটি ব্যবহার করতে পারছেন না স্থানীয়রা। এতে বর্ষাকালে নৌকা আর শুকনো মৌসুমে সেতুর নিচ দিয়ে তৈরী বাঁশের সাঁকোই হলো এলাকাবাসীর ভরসা।  একই ইউনিয়নের উত্তরপাঁড়া ভাওয়ালের চর গ্রামের ইয়াসিন মাষ্টারের বাড়ির কাছে কোন সড়ক না থাকলেও আড়িয়াল খাঁ নদের এক পাঁড়ে খালি জায়গায় অপরিকল্পিতভাবে ২০ ফুট দৈর্ঘের আরও একটি সেতু নির্মাণ করে স্থানীয় দুর্যোগ ও ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর। সড়কবিহীন জঙ্গলে আবৃত এমন একটি জায়গায় ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১৬ লাখ ৭৫ হাজার ৫শ ৪৬ টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মাণ করা হয়। সেতু নির্মাণের প্রায় ৫ বছর পেরিয়ে গেলেও এই সেতুটিও জনগণের কোন উপকারে আসছে না। এই সেতুটিরও দুই পাশে উঠানামার জন্য কোন মাটি নেই। 


এছাড়া দীঘলদীকান্দা স্লুইচ গেইট সংলগ্ন স্থানে আরেকটি সেতু মূল সড়ক থেকে বিছিন্ন থাকায় প্রায় ২০ বছর ধরে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। এই সেতুটি নির্মাণ করার কিছুদিন পরই তার পাশ দিয়ে একটি স্লুইচ গেইট নির্মাণ করা হয়। ফলে মূল সড়ক পরিবর্তন হয়ে স্লুইচ গেইটের উপর দিয়ে পাকা নতুন আরেকটি সড়ক নির্মাণ করে সংশ্লিষ্ট দপ্তর। নতুন এই সড়কের ফলে অকেজো হয়ে পড়ে ঐ সেতুটি। 
এছাড়াও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের আরেকটি সেতু বিন্নাবাইদ ইউনিয়নের বিন্নাবাইদ সুতিঘাট খালের উপর নির্মাণ করা হয়েছে। অ্যাপ্রোচ না থাকায় এই সেতুটি দিয়েও মানুষ চলাচল করতে পারছেন না। ফলে অকেজো হয়ে পড়ে আছে এই সেতুটিও। 


স্থানীয়দের অভিযোগ, বেলাবতে প্রতিবছরই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সেতু ও কালভার্ট প্রকল্পের আওতায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় একাধিক সেতু নির্মাণ করা হয়। এরমধ্যে বেশিরভাগ সেতু অপরিকল্পিত ও অপ্রয়োজনীয় স্থানে নির্মাণ করা হয়। বেশিরভাগ সেতুই অ্যাপ্রোচ ও সংযোগ সড়ক ছাড়াই নির্মাণ করায় কোন কাজে আসছে না জনগণের। কোন রকম সমীক্ষা, বিশেষজ্ঞ দলের নকশা ছাড়াই শুধু স্থানীয় এমপি, ইউপি ও উপজেলা চেয়ারম্যানের চাহিদা অনুযায়ী একের পর এক এসব সেতু ও কালভার্ট দায়সারাভাবে নির্মান করা হয়। যার বেশিরভাগই জনগনের কোন কাজে আসে না। 


মাতুয়াকান্দি গ্রামের ব্যবসায়ী আবু হানিফ ও লক্ষ্মীপুর গ্রামের কুষক সাফিউদ্দীন বলেন, সেতুগুলোর দুই পাশে কোন মাটি বা সড়ক না থাকায় ৬ বছরেও এই সেতু দিয়ে কোন মানুষ পারাপার হতে পারেননি। জনগণ যদি ব্যবহার করতে না পারেন, তাহলে কেন সরকারের লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে এসব সেতু নির্মাণ করা হলো? সেতুগুলো চলাচল উপযোগী করার দাবি করছি।  

 


ভাওয়ালের চর গ্রামের ব্যবসায়ী নাজমুল হোসেন বলেন, রাস্তা নির্মাণ হলেইতো সেতুর প্রয়োজন হয়। যেখানে সেতুর দরকার সেখানে তৈরী না করে অপরিকল্পিতভাবে যেখাসে সেখানে সেতু নির্মাণ করায় আমাদের কোন উপকারে আসছে না। এতে চলাচলে আমাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। 


বিন্নাবাইদ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ গোলাম মোস্তুফা গোলাপ বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদের উপর ব্রিজটি অ্যাপ্রোচ ও সংযোগ সড়ক ছাড়া করা ঠিক হয়নি। তাছাড়া ব্রহ্মপুত্র নদের উপর আরো বড় ব্রিজ তৈরী করা দরকার ছিল। কিন্তু তা না করে যতটুকু ব্রিজই তৈরী করা হয়েছে তা অপরিকল্পিতভাবে অ্যাপ্রোচ ও সংযোগ সড়ক ছাড়া তৈরী করা হয়েছে। আর ভাওয়ালের চরে যে ব্রিজটি তৈরী করা হয়েছে সেখানে ঐ এলাকার লোকজন জায়গা না দেওয়ায় রাস্তা তৈরী করা সম্ভব হয়নি। আশা করছি এ সমস্যার সমাধান হবে। 


যোগাযোগ করা হলে বেলাব উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোসাঃ নায়েমা তাবাছসুমা শাহ বলেন, আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি। ব্রিজগুলো সম্পূর্ণ অপরিকল্পিতভাবে তৈরী করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। আ্যাপ্রোচ ও সংযোগ সড়ক তৈরী করা ছাড়া কিভাবে ঠিকাদাররা প্রকল্পের টাকা তুলে নিয়েছেন সেটা আমারও বোধগম্য নয়। আমি ব্রিজগুলো পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবো।



এই বিভাগের আরও