বেলাব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ছাত্রলীগের হামলা, ভাংচুর

১৬ নভেম্বর ২০২২, ০৫:০৪ পিএম | আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৫২ এএম


বেলাব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ছাত্রলীগের হামলা, ভাংচুর
হামলার পর মানববন্ধন করেন হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও চিকিৎসকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক:

নরসিংদীর বেলাব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করেছে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সারোয়ার হোসেন অপু ও সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার তৌফিক এবং তাদের সহযোগীরা। বুধবার বেলা ১১টার দিকে এই হামলার ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হঠাৎ করে ছাত্রলীগের দুইজন কর্মী প্রথমে হাসপাতালে ঢুকে সিসিটিভির লাইন কেটে ফেলে। পরে অর্ধশতাধিক ছাত্রলীগ কর্মী হাসপাতালে ঢুকে দ্বিতীয় তলার সিসিটিভির লাইনও কেটে ফেলে এবং কিছু আসবাবপত্র ভাংচুর করে। পরে হামলাকারীরা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার অফিস কক্ষে ঢুকতে চাইলে হাসপাতালের কর্মচারীরা গেইটে তালা ঝুলিয়ে দেয়। এসময় তারা ঢিল ছুঁড়ে হাসপাতালের অবকাঠামোর গ্লাস ভাংচুর করে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের খাদ্য সরবরাহসহ তিন ক্যাটাগরিতে দরপত্র আহবান করা হয়। এতে অন্য ঠিকাদারদের লাইসেন্স এর নামে একাধিক দরপত্র জমা দেয় অপুসহ ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত নেতাকর্মীরা। এই দরপত্র ছাত্রলীগের পক্ষের ঠিকাদারদের অনুকূলের যাচ্ছে না এমন খবর পেয়ে ছাত্রলীগের সভাপতি সারোয়ার হোসেন অপু ও সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার তৌফিকের সহযোগীরা হাসপাতালে ভাংচুর শুরু করে। এ সময় হাসপাতালের সিসিটিভির সংযোগকারী তার ছিড়ে ফেলাসহ, হাসপাতালের দরজা, জানালার গ্লাস ভাংচুর ও হাসপাতালের ভিতরে রক্ষিত বিভিন্ন সরকারি সম্পদ নষ্ট করা হয়। এতে হাসপাতালে আগত সেবাপ্রত্যাশী ও রোগীদের মধ্যে সেবাদান বন্ধ ও আতংক ছড়িয়ে পড়ে।

খবর পেয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মনিরুজ্জামান খানসহ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার পর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সারোয়ার হোসেন অপু ও সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার তৌফিক এবং তাদের সহযোগীরা হাসপাতাল ত্যাগ করে।

এই হামলার প্রতিবাদে তাৎক্ষনিক হাসপাতালে কর্মরত সকল চিকিৎসক, সেবিকা ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সেবাদান ও তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেন। এসময় হাসপাতালের সামনে মানববন্ধন করেন তারা।

এসময় মানববন্ধকারীদের হাতে "বেলাব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সন্ত্রাসী হামলা, সরকারি সম্পত্তি ভাংচুর, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রাণনাশের অপচেষ্টার প্রতিবাদে মানববন্ধন" লিখিত একটি করে প্রিন্ট করা কাগজ দেখা যায়। তবে এসময় হামলার বিষয়ে কেউ কোন বক্তব্য দেননি।

যোগাযোগ করা হলে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সারোয়ার হোসেন অপু সাংবাদিকদের বলেন, কোন হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটেনি। ছাত্রলীগের কয়েকজনের সাথে স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কার্যালয়ে বাগবিতণ্ডার খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে তাদের সরিয়ে নিয়ে আসি। হাসপাতালের খাদ্য সরবরাহকারী হিসেবে নয়ন নামে একজন ঠিকাদার বছরের পর বছর ধরে কাজ করে আসছেন বলেও অভিযোগ তার। এ নিয়ে বাগবিতণ্ডা হয় বলে দাবি করেন ছাত্রলীগের এই সভাপতি।  

হামলার ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে জানিয়ে সাংবাদিকদের সাথে আর কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নূর আসাদুজ্জামান।

নরসিংদীর সিভিল সার্জন ডা. মো: নূরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, হাসপাতালে হামলার ঘটনায় উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নূর আসাদুজ্জামান থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। এতে ৫ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৪০-৫০ জন দুস্কৃতিকারীকে আসামী করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে বেলাব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানভীর আহমেদকে ফোন দেয়া হলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় মামলা গ্রহণের তথ্য জানা সম্ভব হয়নি।



এই বিভাগের আরও