নিম্নশ্রেণির পরিবারে নেই জন্ম নিয়ন্ত্রণের সঠিক পরিকল্পনা

২৭ জুন ২০১৯, ০১:৩৫ পিএম | আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:১৮ পিএম


নিম্নশ্রেণির পরিবারে নেই জন্ম নিয়ন্ত্রণের সঠিক পরিকল্পনা
সংগৃহিত ছবি

মরিয়ম সেঁজুতি:

একটি সুস্থ, সবল ও সুখী পরিবার সবার প্রত্যাশা। আর এ জন্য চাই সঠিক পরিকল্পনা। যে কোনো পরিকল্পনার লক্ষ্য হলো সুন্দর ভবিষ্যৎ গঠন করা। বিয়ের পর কখন প্রথম সন্তান নেবেন, পরবর্তী সন্তান আবার কবে নেবেন, কয়টি সন্তান নেবেন এসব বিষয় নিয়ে স্বামী-স্ত্রী দুজনে মিলে আলাপ করে জন্মবিরতিকরণের সিদ্ধান্ত নেয়া প্রয়োজন। সঠিক পরিকল্পনায় গড়ে উঠবে সুস্থ, সবল ও সুখী পরিবার। আমাদের দেশে এ বিষয়ে সচেতনতার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। বিশেষ করে নিম্নশ্রেণির মানুষের মধ্যে এ বিষয়ে ধারণা নেই বললেই চলে।
প্রায় ৩২ বছর বয়সী রিনা বেগম, সাত সন্তানের মা। দুপুরের দিকে তার সর্বশেষ সন্তান ৯ মাস বয়সী শরীফকে কোলে নিয়ে তেজগাঁওয়ে তিব্বত বস্তির রাস্তায় বসে আছেন। দেখতে মোটাসোটা গড়নের। তবে তার কথায় ফুটে উঠল দীর্ঘদিনের শারীরিক দুর্বলতার কথা।

রিনা জানান, তার কোনো সন্তান এখনো প্রাপ্তবয়স্ক হয়নি। তার বড় যমজ ছেলে মাসুদ ও মাসুমের বয়স মাত্র ১৫ বছর। আর সবচেয়ে ছোট ছেলে শরীফের বয়স ৯ মাস। রিনার ১১ বছর বয়সী ফারজানা আকতার, ৪র্থ সন্তান ছাড়া বাকি সবাই এক বছরের ব্যবধানে জন্ম নিয়েছে। তৃতীয় সন্তান জন্মের ৩ বছর পর মেয়ে জন্ম দিয়েছেন তিনি। অন্যদিকে ৯ বছর বয়সী আরমানের জন্মের ৮ বছর পর তার সবচেয়ে ছোট সন্তান জন্ম নিয়েছে। খুব ছোট বয়সে রিনা বেগমের বিয়ে হয়েছে। কিন্তু গর্ভনিরোধক কি তা জানতেন না। রিনা বলেন, এসব কথা তো কেউ ‘আমারে কয় নাই।’ আমার স্বামী রিকশাচালায়। তিনি মনে করেন, আল্লাহ যা দিছে তার ওপরে কারও হাত নেই।
দেশের বেশিরভাগ মানুষই ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে পরিবার পরিকল্পনা করতে অনিচ্ছুক। তারা বিশ্বাস করেন আল্লাহ মুখ দিয়েছেন, তিনিই খাওয়াবেন। একই বস্তিতে থাকেন করিমন নেসা। গর্ভনিরোধক না নেয়ার পেছনের কারণ জিজ্ঞেস করলে উত্তরে বলেন, বিয়ের পর ৩ মাস তিনি পিল খেয়েছেন। কিন্তু তার স্বামী মো. মোতালেব নিষেধ করছেন। এমনকি তার শ্বশুর-শাশুড়ি পর্যন্ত তাকে পরিবার পরিকল্পনা করতে নিষেধ করেছেন। নিজের জীবনকে বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন কিনা এ ব্যাপারে জানতে চাইলে করিমন নেসা জানান, এত কিছু বুঝি না। তবে মাঝে মাঝে খুব দুর্বল লাগে। মাথা ঘুরে, কোনো ভারী কাজ করতে পারি না আগের মতো।
শুধু রিনা বেগম এবং করিমন নেসাই নন, বস্তির অধিকাংশ নারী গর্ভনিরোধক নিয়ে সতর্ক নন। তেজগাঁও, তিব্বত, মালিবাগ, কড়াইল ও কিছু ফুটপাতে থাকা অধিকাংশই মানুষই গর্ভনিরোধক সম্পর্কে ধারণা নেই। ক্লিনিক্যাল সার্ভিস ডেলিভারি প্রোগ্রামের প্রোগ্রাম ম্যানেজার, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. নুরুন নাহার বেগম রোজী বলেন, জন্ম নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার অনেক উদ্যোগ নিয়েছেন। কিন্তু প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ঢাকায় পারি জমাচ্ছে। তাদের অনেকেই ভাসমান জনসংখ্যার অংশ হয়ে উঠেছে, যাদের চিহ্নিত করা খুবই কঠিন। তা ছাড়া কিছু মানুষ এখনো কুসংস্কারে বিশ্বাসী।
এদিকে অধিকাংশ ক্লিনিকে পর্যাপ্ত পরিমাণে গর্ভনিরোধক পণ্য না থাকায় তারা সেবা দিতে পারছেন না।

 এ প্রসঙ্গে ক্লিনিক ম্যানেজার নাসিমা আক্তার জানান, গত ৩ মাস ধরে আমরা গর্ভনিরোধক ব্যবস্থা দিতে পারছি না। গর্ভনিরোধক পণ্যের সরবরাহে ঘাটতি থাকায় আমরা সবাইকে সেবা দিতে পারছি না। গত ৩ মাসে আমরা ১১০ জনকে সেবা দিয়েছি, যা আগে প্রতি মাসে ১৫০ থেকে ২০০ জন ছিল।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ১০ কোটি ২৫ লাখ ১০ হাজার ৪১৩ জন কাপোলকে ৮ কোটি ১ লাখ ৯৯ হাজার ৭৯৬টি জন্ম নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থা দেয়া হয়েছে। ২০১৮ সালে ১০ কোটি ৮৮ লাখ ২৭ হাজার ৩৭০
জন কাপোলের মধ্যে ৮ কোটি ৬০ লাখ ৩২ হাজার ১টি জন্ম নিয়ন্ত্রক দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক এন্ড হেলথ সার্ভে-২০১৪ অনুযায়ী, গত সাত বছর ধরে দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৩৭ শতাংশ এবং নেট প্রজনন হার ২ দশমিক ৩ শতাংশ হয়েছে। প্রজননের হার কমিয়ে ১ শতাংশে নিয়ে আসতে হবে। তবে দেশের বাকি অংশের তুলনায় ঢাকা বিভাগের মধ্যে জন্ম নিয়ন্ত্রক ব্যবহার খুবই কম।
তা ছাড়া প্রত্যন্ত অঞ্চলে এবং বস্তিবাসীদের কাছে জন্ম নিরোধকসামগ্রী পৌঁছানোর ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা রয়েছে।

সূত্র: দৈনিক ভোরের কাগজ


বিভাগ : জীবনযাপন


এই বিভাগের আরও