দেশের দুর্যোগকালে দায়িত্ব পালনে ইসলামের নির্দেশনা
১৬ এপ্রিল ২০২০, ০৯:৫১ পিএম | আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৫৮ পিএম
জীবনযাপন ডেস্ক:
ইসলাম মানুষের ওপর অর্পিত দায়িত্বকে আমানত আখ্যা দিয়ে তা যথাযথভাবে পালনের নির্দেশ দিয়েছে। সাধারণ সময়েই ইসলাম দায়িত্বে শিথিলতাকে ‘খেয়ানত’ আখ্যা দিয়েছে। আর দেশে দুর্যোগ তৈরি হলে এই দায়িত্বের ভার আরো বেড়ে যায়। সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালনে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট হয় মহানবী (সা.)-এর একটি হাদিস থেকে। তিনি গোরখোদককে তা সুন্দরভাবে খোঁড়ার নির্দেশ দিয়ে বলেন, এটি মৃত ব্যক্তির কোনো উপকার বা ক্ষতি করতে পারবে না। কিন্তু আল্লাহ সুন্দরভাবে কাজ করা পছন্দ করেন। (শুআবুল ঈমান, হাদিস : ৪৯৩২)
দায়িত্ব পবিত্র আমানত: ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতে নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তির ওপর অর্পিত দায়িত্ব তাঁর জন্য পবিত্র আমানত। চুক্তি অনুযায়ী শরিয়ত অনুমোদিত এমন দায়িত্ব পালনে ব্যক্তি বাধ্য এবং তা মুমিনের ঈমানি দায়িত্ব। (আল-মাউসুআতুল ফিকহিয়্যা আল-কুয়েতিয়্যা : ৪৪/৬৩)
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে আদর্শ শ্রমিকের দুটি বিশেষ গুণের কথা উল্লেখ করেছেন। তা হলো, আমানতদার ও শক্তি-সামর্থ্যের অধিকারী হওয়া। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমার মজুর হিসেবে উত্তম হবে সেই ব্যক্তি, যে শক্তিশালী, বিশ্বস্ত।’ (সুরা : কাসাস, আয়াত : ২৬)
অন্য আয়াতে আল্লাহ অর্পিত দায়িত্ব ও অঙ্গীকার পূরণে তাগিদ দিয়ে বলেন, ‘যারা নিজেদের আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে।’ (সুরা : মুমিনুন, আয়াত : ৮)
আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘যাদের কাছে কিছু আমানত রাখা হলে তা সে যথাযথ ব্যক্তির কাছে পৌঁছে দেয় এবং যারা চুক্তিবদ্ধ হলে ও অঙ্গীকার করলে তা পূরণ করে।’
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে আমানত রক্ষা করে না তার ঈমানের দাবি যথাযথ নয় এবং যে অঙ্গীকার পূরণ করে না তার দ্বিন যথাযথ নয়।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ১৩১৯৯)
চুক্তি অনুযায়ী কাজের বাধ্যবাধকতা: ইসলামী শরিয়ত নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে চুক্তি অনুযায়ী তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিয়ে থাকে। ইসলামী আইনজ্ঞরা এ ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় বিবেচনা করার কথা বলেছেন। তা হলো, নিয়োগের সময় সম্পাদিত চুক্তি, ব্যক্তির অঙ্গীকার, কল্যাণকামিতা, নিয়োগপ্রাপ্তের সামর্থ্য, সময় ও পরিস্থিতির দাবি এবং ব্যক্তির প্রাতিষ্ঠানিক অবস্থান। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘সে মুসাকে বলল, আমি আমার এই কন্যাদ্বয়ের একজনকে তোমার সঙ্গে বিয়ে দিতে চাই এই শর্তে যে তুমি ৮ বছর আমার কাজ করবে। যদি তুমি ১০ বছর পূর্ণ করো তবে সেটা তোমার ইচ্ছা। আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাই না। আল্লাহ ইচ্ছা করলে তুমি আমাকে সদাচারী পাবে।’ (সুরা : কাসাস, আয়াত : ২৭)
ড. আবদুল্লাহ বিন রাশেদ আস-সুনাইদি এটাকে ‘কর্মনিষ্ঠা’ শব্দ দ্বারা ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, ‘পেশাগত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করার অর্থ তাতে নিষ্ঠার পরিচয় দেওয়া। সুতরাং পেশা যদি শিক্ষকতা হয় তবে ব্যক্তি পাঠদান পদ্ধতি ও শিক্ষার্থীদের কল্যাণ নিশ্চিত করতে নিষ্ঠাবান হবেন, পেশা যদি চিকিৎসা সংক্রান্ত হয়, তবে ব্যক্তি রোগ নির্ণয়, রোগীর আরোগ্য ও সুস্থতার ব্যাপারে নিষ্ঠাবান হবে, পেশা যদি সামাজিক শৃঙ্খলাবিষয়ক হয়, তবে শৃঙ্খলা রক্ষা ও বিশৃঙ্খলা দূর করতে তিনি নিষ্ঠাবান হবেন।’ https://bit.ly/3edCRW3)
সেবা প্রদান ঐচ্ছিক বিষয় নয়: নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তির জন্য সেবা প্রদান কোনো ঐচ্ছিক বিষয় নয়। কেননা ইসলামী শরিয়ত পেশাগত দায়িত্বকে ‘আমানত’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে এবং আল্লাহ তা যথাযথ ব্যক্তির কাছে পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন আমানত তার হকদারের কাছে পৌঁছে দিতে এবং তোমরা যখন মানুষের মধ্যে বিচার করবে, তখন ন্যায়পরায়ণতার সঙ্গে বিচার করবে।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৫৮)
বিশেষত যারা রাষ্ট্রীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত তাদের সেবা প্রদানের বিষয়টি মোটেই ঐচ্ছিক নয়। সেলজুক শাসক মালিক শাহের প্রধানমন্ত্রী নিজামুল মুলক বাগদাদে পৌঁছানোর পর আবু সাদ ইবনে আবি উমামা তাঁকে বলেন, ‘সদরুল ইসলাম! আপনি জানেন, মানুষের মধ্যে কেউ কেউ (নিয়োগপ্রাপ্ত নয় এমন) দায়িত্ব পালনে ইচ্ছাধীন। তারা ইচ্ছা করলে মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে পারে, আবার নাও রাখতে পারে। কিন্তু যারা দায়িত্বের জন্য নির্বাচিত, মানুষের জীবনোপকরণ যাদের হাতে অর্পিত, দায়িত্ব পালন তাদের ইচ্ছাধীন নয়। কেননা যে প্রকৃতার্থে মানুষের ‘আমির’ (দায়িত্বপ্রাপ্ত) সে একজন ‘আজির’ (শ্রমিক)। সে নিজেকে বিক্রি করেছে এবং বিনিময় গ্রহণ করেছে। সুতরাং দিনের কোনো অংশ নিজের ইচ্ছামতো ব্যয় করতে পারবে না, এই সময়ে সে নফল নামাজ আদায় করবে না, রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব ছেড়ে মসজিদে ইতিকাফ করবে না—কেননা এসব কাজ নফল আর দায়িত্ব পালন অত্যাবশ্যক ও ফরজ।’ (শামসুদ্দিন মুহাম্মদ ইবনে আহমদ জাহবি, তারিখুল ইসলাম : ৩৫/১৫০-৫১)
উপযুক্ত ব্যক্তির হাতে সেবা পৌঁছে দিতে হবে: দুর্যোগকালে দায়িত্ব পালনকারীদের জন্য উপযুক্ত ব্যক্তি পর্যন্ত সেবা পৌঁছে দেওয়া আবশ্যক। উপযুক্ত ব্যক্তিকে সেবা না দিয়ে অন্য কাউকে সুযোগ দেওয়া আমানতের খেয়ানত হিসেবে গণ্য। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! তোমরা জেনে-শুনে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সঙ্গে বিশ্বাস ভঙ্গ করবে না এবং তোমাদের পরস্পরের আমানত সম্পর্কেও বিশ্বাস ভঙ্গ কোরো না।’ (সুরা : আনফাল, আয়াত : ২৭)
আর কেউ যদি মানুষের প্রাপ্য সেবা ও অধিকার প্রদান না করে, তবে কিয়ামতের দিন এ জন্য জবাবদিহি করতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নিঃসন্দেহে (পরকালে) সব হকদারের হক আদায় করা হবে। এমনকি শিংবিহীন বকরির পক্ষে শিংবিশিষ্ট বকরির (গুঁতোর) বদলা নেওয়া হবে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৫৮২)
দুর্যোগকালে দায়িত্বে অবহেলা নয়: দুর্যোগ-দুর্ভিক্ষ ও মানুষের অসহায়ত্বের সময় দায়িত্বে অবহেলা নিন্দনীয়। বিশেষত যাদের অবহেলা ও গাফিলতির কারণে সামাজিক সংকট আরো বৃদ্ধি পায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) এমন লোকদের সতর্ক করে বলেন, মহান আল্লাহ কোনো ব্যক্তিকে মুসলমানের কোনো দায়িত্ব দিলে যদি সে তাদের প্রয়োজন পূরণ ও অভাবের সময় দূরে, আড়ালে থাকে, তবে মহান আল্লাহও তার প্রয়োজন পূরণ ও অভাব-অনটন দূর করা থেকে দূরে থাকবেন।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ২৯৪৮)
দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হলে পদত্যাগ করবে: কেউ যদি শারীরিক, মানসিক অথবা অন্য কোনো কারণে দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হয় তবে সে উপযুক্ত ব্যক্তির হাতে নিজ পদ ছেড়ে দেবে। আর সে সরে না গেলে প্রশাসন তাকে সরিয়ে দেবে। যেন সংকট বৃদ্ধি না পায়। এটাই হবে ব্যক্তি ও সমাজের জন্য কল্যাণকর। রাসুলুল্লাহ (সা.) আবু জর (রা.)-কে বলেন, ‘হে আবু জর! আমি তোমাকে দুর্বল দেখছি। আমি আমার জন্য যা ভালোবাসি তা তোমার জন্যও ভালোবাসি। তুমি কখনো দুই ব্যক্তির ‘আমির’ (পরিচালক) হবে না এবং এতিমের মালের ‘তত্ত্বাবধায়ক’ হবে না।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৮২৬)
আবু বকর সিদ্দিক (রা.) জায়েদ বিন সাবিত (রা.)-এর কর্মদক্ষতার প্রশংসা করে বলেন, ‘তুমি একজন বুদ্ধিমান যুবক। তোমার ব্যাপারে আমার কোনো সংশয় নেই।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৪৯৮৬)
আর ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) আল্লাহর কাছে ‘ক্ষমতাশীল পাপাচারী ও কল্যাণহীন অক্ষমতা’ থেকে আশ্রয় চাইতেন। (মিনহাজস-সুন্নাহ : ৬/৪০১)
দুর্যোগকালে দায়িত্ব পালনের পুরস্কার: দুর্যোগকালে যারা মানুষকে প্রয়োজনীয় সেবা প্রদান করেন এবং মানুষের দুঃখ-কষ্ট দূর করতে সচেষ্ট হন, আল্লাহ তাদের ইহকালে ও পরকালে পুরস্কৃত করবেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি দুনিয়ায় কোনো মুমিনের কোনো অসুবিধা দূর করে দেয়, আল্লাহ তার পরকালের অসুবিধা দূর করে দেবেন। যে কোনো মুসলমানের দোষত্রুটি গোপন রাখে, আল্লাহ দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষত্রুটি গোপন রাখেন। যে পর্যন্ত বান্দা তার ভাইকে সাহায্য করতে থাকে সে পর্যন্ত আল্লাহ তাকে সাহায্য করতে থাকেন।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১৪২৫)
(লেখক: আতাউর রহমান খসরু)
বিভাগ : জীবনযাপন
- রেডি টু কুক মৎস্যপণ্য উৎপাদন গবেষণা আরও জোরদার করতে হবে: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা
- নরসিংদীতে পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশনের আহবায়ক কমিটি গঠন
- নরসিংদীতে সততা চর্চার অভ্যাস গড়তে শিক্ষার্থীদের বিতর্ক প্রতিযোগিতা
- বেলাবতে অনুপস্থিতিসহ দুর্নীতির অভিযোগে কলেজ অধ্যক্ষের অপসারণ দাবি
- মাধবদীতে জুট ব্যবসা নিয়ে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ৩
- এক দফার আন্দোলন শুধু দুই মাসের নয়, ১৬ বছরের আন্দোলন: খায়রুল কবির খোকন
- নরসিংদীতে বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে জেলা বিএনপির বর্ণাঢ্য র্যালি
- স্ত্রীর সঙ্গে কলহের জেরে ট্রেনের নীচে ঝাঁপ দিয়ে স্বামীর আত্মহত্যা
- যক্ষ্মারোগ নিয়ন্ত্রণে সাংবাদিকদের ভূমিকা শীর্ষক মতবিনিময়
- আওয়ামী লীগ ভেবেছিল তারা চিরকাল ক্ষমতায় থাকবে: খায়রুল কবির খোকন
- রেডি টু কুক মৎস্যপণ্য উৎপাদন গবেষণা আরও জোরদার করতে হবে: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা
- নরসিংদীতে পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশনের আহবায়ক কমিটি গঠন
- নরসিংদীতে সততা চর্চার অভ্যাস গড়তে শিক্ষার্থীদের বিতর্ক প্রতিযোগিতা
- বেলাবতে অনুপস্থিতিসহ দুর্নীতির অভিযোগে কলেজ অধ্যক্ষের অপসারণ দাবি
- মাধবদীতে জুট ব্যবসা নিয়ে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ৩
- এক দফার আন্দোলন শুধু দুই মাসের নয়, ১৬ বছরের আন্দোলন: খায়রুল কবির খোকন
- নরসিংদীতে বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে জেলা বিএনপির বর্ণাঢ্য র্যালি
- স্ত্রীর সঙ্গে কলহের জেরে ট্রেনের নীচে ঝাঁপ দিয়ে স্বামীর আত্মহত্যা
- যক্ষ্মারোগ নিয়ন্ত্রণে সাংবাদিকদের ভূমিকা শীর্ষক মতবিনিময়
- আওয়ামী লীগ ভেবেছিল তারা চিরকাল ক্ষমতায় থাকবে: খায়রুল কবির খোকন