মানুষের দোরগোড়ায় বই পৌঁছে দেন মোয়াজ্জেম হোসেন

২৮ জুলাই ২০২১, ০৪:০৪ পিএম | আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২৪, ১২:৫৭ পিএম


মানুষের দোরগোড়ায় বই পৌঁছে দেন মোয়াজ্জেম হোসেন

আসাদুজ্জামান রিপন:
নরসিংদীতে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে গ্রামে ও শহরের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের হাতে বই পৌঁছে দেন নরসিংদী প্রেসিডেন্সি কলেজ এর প্রতিষ্ঠাতা ড. মো. মোয়াজ্জেম হোসেন। শিক্ষার্থীদেরকেও পাঠ্যপুস্তকের বাইরে বই পড়ায় উদ্বুদ্ধ করতে নিজের কেনা বিভিন্ন লেখকের বই বিতরণ করে থাকেন তিনি। বই পড়া আন্দোলনের অংশ হিসেবে বই পড়ার জন্য মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে নানামুখী কর্মসূচি গ্রহণ করে যাচ্ছেন এই শিক্ষাবিদ। তিনি ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠা করেছেন নরসিংদী পাবলিক লাইব্রেরি। এতে রক্ষিত ৫ হাজারের বেশি বই পড়ে জ্ঞানসমৃদ্ধ হচ্ছেন পাঠকেরা।


স্থানীয় পাঠক, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, শিক্ষাবিদ ও বই পড়া আন্দোলনের সংগঠক ড. মোয়াজ্জেম হোসেন এর সাথে কথা বলে জানা গেছে, বইয়ের পাঠক বাড়ানো ও বই পড়ার গুরুত্ব তুলে ধরতেই বই পড়া আন্দোলনের সাথে যুক্ত হয়েছেন ড. মো. মোয়াজ্জেম হোসেন। এজন্য লাইব্রেরির পাশাপাশি গ্রামে গ্রামে ঘুরে ছোট-বড় সবার দোরগোড়ায় বই পৌঁছে দিয়ে থাকেন তিনি। নিজের টাকায় বই কিনে পাঠকের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিয়ে বই পড়ার একটি আন্দোলন গড়ে তুলেছেন মোয়াজ্জেম হোসেন। তিনি বই নিয়ে শহরের পথে পথে হাঁটেন। নরসিংদী শহরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধান থেকে শুরু করে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে নিজে বই দিয়ে আসেন এবং এক সপ্তাহ পর আবার তা ফেরৎ নিয়ে অন্য বই দেন। এভাবে তিনি শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত জ্ঞানের আলো বিতরণ করে চলেছেন। নরসিংদী শহরে ৫/৬টি সেলুন লাইব্রেরিও গড়ে তুলেন তিনি। ড. মো. মোয়াজ্জেম হোসেন বই পড়ার জন্য বিভিন্ন শ্রেণিপেশার সচেতন মানুষ নিয়ে নরসিংদীতে মানববন্ধনের আয়োজনও করেন। তাছাড়া তিনি ১০০ প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেন- লাইব্রেরি না হোক অন্তত বইভর্তি সেলফ রাখার জন্য। তিনি অসংখ্য শিক্ষার্থীকে তাঁর নিজের লেখা বই উপহার দিয়েছেন।


ড. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এলাকা হিসেবে খ্যাত নরসিংদী শহরের ১০২, পশ্চিম ব্রাহ্মন্দীতে অল্প সংখ্যক বই দিয়ে নিজ উদ্যোগে ২০০০ সালে গড়ে তুলেন নরসিংদী পাবলিক লাইব্রেরি। বর্তমানে এ লাইব্রেরিতে পাঁচ হাজারের বেশি বই রয়েছে। লাইব্রেরিটি শুক্রবার বাদে সপ্তাহে ছয়দিনই খোলা থাকে। ২০২০ সালে গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর হতে রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্ত হয় লাইব্রেরিটি। তাঁর লাইব্রেরিতে বিভিন্ন দুর্লভ বই, প্রাচীন পুঁথি, নরসিংদীর প্রাচীন ইতিহাস, ঢাকার ইতিহাস, বিক্রমপুরের ইতিহাস,বাংলাদেশের ইতিহাস, রাজনীতি, বিখ্যাত কবি সাহিত্যিকদের রচনাবলী, মোটিভেশনাল, কবিতা, প্রবন্ধ, উপন্যাস, আত্মজীবনী, স্মৃতিচারণ, সম্মাননা, স্মারকগ্রন্থ, ইংরেজি সাহিত্য, বাংলা সাহিত্য,বাংলা-ইংরেজি অভিধান, বাংলা ইংরেজি ব্যাকরণ, মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা-আন্দোলন, দুর্লভ ম্যাগাজিন, ইতিহাস ঐতিহ্য, অনুবাদ, ধর্মীয় সংক্রান্ত আলাদা আলাদা বইয়ের সেলফ রয়েছে। নরসিংদী বিষয়ে কেউ জানতে চাইলে বা গবেষণা করতে চাইলে এ লাইব্রেরির বিকল্প নেই বলে মনে করেন অনেকে। বিভিন্ন শ্রেণির পাঠক বিশেষ করে স্থানীয় শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কবি লেখকগণ নরসিংদী পাবলিক লাইব্রেরিতে বই পড়তে বেশি আসেন।


তিনি আরও বলেন, বই মানুষের চেতনাকে নাড়া দেয়। মানুষের চিন্তার জগতের পরিবর্তন ঘটায়। নরসিংদী পাবলিক লাইব্রেরিতে সবই বাছাইকৃত বই। তাছাড়া নরসিংদীর প্রায় ২০০ লেখকের বই রয়েছে এ লাইব্রেরিতে। এছাড়া এই লাইব্রেরিতে রয়েছে ইন্টারনেট সুবিধাও। কারো প্রয়োজনে ইন্টারনেট ব্যবহার করেও প্রয়োজনীয় তথ্য জানতে পারছেন। লাইব্রেরিতে বই পড়ার পাশাপাশি বাসায় বই নিয়েও পড়া যায়। লাইব্রেরিতে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা, জনসচেতনতামূলক অনুষ্ঠান, বিশিষ্ট ব্যক্তির জন্ম-মৃত্যু বার্ষিকী পালন, গোল টেবিল বৈঠকসহ নানা অনুষ্ঠান হয়ে থাকে।


নরসিংদী পাবলিক লাইব্রেরির নিয়মিত পাঠক কলেজ শিক্ষার্থী আফসানা আক্তার বলেন, পাঠ্যবইয়ের বাইরে পড়ার অভ্যাস আমার ছিল না, মোয়াজ্জেম স্যারের কথায় পাবলিক লাইব্রেরিতে এসে বই পড়ার অভ্যাস হয়েছে। তিনি একজন জ্ঞানের ফেরিওয়ালা। তিনি সব সময়ই জ্ঞানের কথা ও বই পড়ার কথা বলেন, মানুষের দ্বারে বই নিয়ে যান।


নরসিংদী ইনডিপেনডেন্ট কলেজের অধ্যক্ষ কবি ও লেখক ড. মশিউর রহমান মৃধা বলেন, জ্ঞান অর্জন করার কেবল দুটি উপায়, একটি হচ্ছে বই পড়ে আরেকটি হচ্ছে জীবনযাপনকে দেখে অর্থাৎ ভ্রমন করে। মানুষ বই পড়া থেকে দূরে সরে আসছে। এই মুহুর্তে নানা সীমাবদ্ধতার পরও ড. মোয়াজ্জেম হোসেনের বই পড়া আন্দোলন নি:সন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে।


প্রত্ন সংগ্রাহক ও লেখক হাবিবুল্লাহ পাঠান বলেন, মোয়াজ্জেম হোসেন শহরের বুকে নরসিংদী পাবলিক লাইব্রেরি নামে একটি বিশাল গ্রন্থভান্ডার গড়ে তুলেছেন। লাইব্রেরিটি আমি একাধিকবার পরিদর্শন করে অনেক বইয়ের সংগ্রহ দেখতে পেয়েছি। তিনি শুধু লাইব্রেরি করেই ক্ষান্ত হননি এই অবক্ষয়ের যুগে মানুষের দোরগোড়ায় গিয়ে হাতে হাতে বই বিতরণ করে পাঠক সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছেন। এটি অত্যন্ত সুন্দর উদ্যোগ।


বিভাগ : শিক্ষা


এই বিভাগের আরও