লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে চালু হয়েছে ‘বাংলা টাকা বন্ড’

১২ নভেম্বর ২০১৯, ০১:৩৯ পিএম | আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৪৯ পিএম


লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে চালু হয়েছে ‘বাংলা টাকা বন্ড’

টাইমস অর্থনীতি ডেস্ক:

লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে ‘বাংলা’ নামে বাংলাদেশি মুদ্রা টাকার বন্ড তালিকাভুক্তির মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক পুঁজিবাজারে টাকার অন্তর্ভুক্তি ঘটলো। যা বিশ্ব অর্থনীতে বাংলাদেশের একটি বড় পদক্ষেপ। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানান, বাংলা বন্ড চালু বিশ্ব অর্থনীতিতে বাংলাদেশের একটি বড় পদক্ষেপ এবং এই বন্ড চালুর মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রবাসী বিনিয়োগ আরো সহজতর হবে। সোমবার লন্ডন স্টক মার্কেটে স্থানীয় সময় সকাল ৭ টা ৫৫ মিনিটে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলা টাকা বন্ডকে লিস্টিং করার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এসব কথা বলেন।

রিং দ্যা বেল নামের এই অনুষ্ঠান উদ্বোধনকালে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, আজকে বাংলাদেশের জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন। বাংলা বন্ড চালুর পেছনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদান, এমনকি বাংলা বন্ড নামকরনটিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া বলেও জানান তিনি। আইএফসি ও লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে আজকের এমন একটি ঐতিহাসিক দিনকে তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে উৎসর্গ করেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, আইএফসির এশিয়া এবং প্যাসিফিক অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট নেনা স্টেলকোভিক, ব্রিটেনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনার সাঈদা মুনা তাসনীম, বিডার চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মনোয়ার আহমেদ এবং আইএফসি ডিরেক্টরবৃন্দ।

লন্ডন সময় সকাল সাড়ে নয়টায় লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জ সেমিনার রুমে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। এসময় তিনি বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশীদের বিনিয়োগে উৎসাহ দেয়ার জন্য লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে চালু হয়েছে ‘বাংলা টাকা বন্ড’। এটি হবে একটি টাকা বন্ড। এই বন্ডের আকার হবে ১০০ কোটি ডলার। কিন্তু প্রাথমিকভাবে বাজার থেকে তোলা হবে ১ কোটি মার্কিন ডলার বা ৮৪ কোটি টাকা। প্রবাসীরা ডলারে এই বন্ড কিনলেও প্রথমবারের মতো তা টাকায় রূপান্তর করে দেশের বিভিন্ন অবকাঠামোগত প্রকল্পে বিনিয়োগ করা হবে। বিশ্বব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি) হবে এই বন্ডের ইস্যু ম্যানেজার।

এসময় অর্থমন্ত্রী আরো বলেন, এটির মাধ্যমে আমাদের দীর্ঘ মেয়াদী অর্থায়নের সম্ভাবনার পথ চলার একটি ধাপ শুরু হলো। যা আমাদেরকে ২০৪১ এর স্বপ্ন, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মানে সহায়তা করবে। এই প্রথম বাংলাদেশের টাকা কোনো আন্তর্জাতিক ফাইন্যান্সিয়াল মার্কেটের সঙ্গে সংযুক্ত হতে যাচ্ছে। টাকা লন্ডন স্টক মার্কেটে লেনদেন হবে। যে কেউ এই বন্ড কিনতে পারবে। ডলার দিয়ে এই বন্ড কিনতে হবে। সেই ডলার টাকায় কনভার্ট হয়ে তা বিনিয়োগ করা হবে। আইএফসি বাংলাদেশে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগ করেছে। এই ১ বিলিয়ন ডলার ‘টাকা বন্ড’ ছাড়ার মাধ্যমে তাদের বিনিয়োগ আরো বাড়বে। ৫ বছর এবং সর্ব্বোচ্চ ১০ বছর করা হতে পারে। ভারতের ক্ষেত্রে দেখা গেছে রুপি বন্ড প্রথম ৩ বছর মেয়াদি ছাড়া হয়েছিল।

পরে তার সময়সীমা বাড়িয়ে ৫ বছর করা হয়। এখন তা ১০ বছর পর্যন্ত হয়েছে। প্রবাসী ভারতীয়রা এই বন্ডে বিপুল হারে বিনিয়োগও করেছে। ২০১১ সাল থেকে এ ধরনের বন্ড ছাড়ার উদ্যোগ নেয়া হয়। পরে ২০১৫ সালে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ’র বার্ষিক সভায় তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সাথে আইএফসি’র নেতৃবৃন্দের এক বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে এই বন্ড ছাড়ার প্রস্তাব দিলে তখনই প্রাথমিক সম্মতি দিয়েছিল বাংলাদেশ সরকার।

এর আগে আইএফসি বাংলাদেশ সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পাঠায় এবং তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে অর্থমন্ত্রণালয় একই বছর (২০১৫) ৪ অক্টোবর এক চিঠিতে ‘টাকা বন্ড’ ছাড়ার অনুমোদনের বিষয়টি জানায়। প্রবাসীদের জন্য ‘ডলার বন্ড’ থাকলেও বাংলাদেশে এই প্রথমবারের মতো ‘টাকা বন্ড’ ছাড়া হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে এই বন্ডের মাধ্যমে যে অর্থ উত্তোলন করা হবে তা আইএফসি অর্থায়নের পরিচালিত বিভিন্ন অবকাঠামোগত প্রকল্পে বিনিয়োগ করা হবে।


বিভাগ : অর্থনীতি