বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে দিতে চায় ৫০ হাজার কোটি টাকা ঋণ

২১ অক্টোবর ২০১৯, ০৬:০৯ পিএম | আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:১৩ পিএম


বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে দিতে চায় ৫০ হাজার কোটি টাকা ঋণ
বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সভায় অতিথিরা। ছবি: সংগৃহীত

টাইমস ডেস্ক:

বাংলাদেশকে বাড়তি ঋণ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। দেশের উন্নয়নে নানা ধরনের প্রকল্প বাড়ছে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি), বাস্তবায়ন করা হচ্ছে নানা অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্প। এর সঙ্গে বাড়ছে এডিপি বাস্তবায়নের সক্ষমতা হারও। এখন এডিপি বাস্তবায়নের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ায় এ প্রস্তাব দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।

বিশ্বব্যাংকের অঙ্গভুক্ত প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (আইডিএ) তহবিল বাংলাদেশকে স্বল্প সুদে ঋণ দেয়। শিগগিরই পরবর্তী তিন বছরের জন্য ঋণের পরিসীমা ঘোষণা করবে বিশ্বব্যাংক। এবার আগের চেয়ে বেশি করে ঋণ নিতে চায় বাংলাদেশ। কারণ, এর পর থেকে আর স্বল্প সুদে ঋণ পাবে না তারা। মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হচ্ছে বাংলাদেশ। ফলে, আর স্বল্প সুদে নয়, আইডিএ-২০১৯’র পরে চড়া সুদে ঋণ নিতে হবে বাংলাদেশকে। একারণে শেষ সুযোগটা কাজে লাগাতে চায় বাংলাদেশ। পাঁচ বছরের রেয়াতকালসহ ৪০ বছরে শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ সুদে পরিশোধ যোগ্য এ ঋণ স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে দেওয়া হয়।

মাথাপিছু আয়সহ জাতিসংঘের কয়েকটি সূচকের উন্নতি হওয়ায় বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় যুক্ত হচ্ছে। ফলে, বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে দুই শতাংশ সুদের শর্তে ঋণ চুক্তি করতে হবে। আইডিএ তহবিল থেকে নেওয়া ঋণ পরিশোধে সময় পাওয়া যেতো ৩৮ বছর। অন্যদিকে, আগে ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে ছয় বছরের গ্রেস পিরিয়ড (রেয়াতকাল) ছিল। কিন্তু, এখন এক বছর কমিয়ে পাঁচ বছর করা হয়েছে। এক্ষেত্রে সবদিক দিয়েই বিশ্বব্যাংকের ঋণের শর্ত কঠিন করা হবে।

আইডিএ-২০১৮’র মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২০২০ সালে। তিন বছরে এ প্যাকেজের আওতায় সংস্থাটির প্রতিশ্রুতি ছিল ৪ দশমিক ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। কিন্তু, নিদিষ্ট সময়ের আগেই বাংলাদেশ নির্ধারিত বরাদ্দের অর্থ ঋণ নিয়ে ফেলেছে। বাংলাদেশ সরকার সক্ষমতার কারণে এই ঋণ খরচ করে ফেলেছে। অথচ, একই সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ আইডা-২০১৮ খরচ করতে পারেনি। বিশ্বব্যাংকের ঋণ সঠিকভাবে অনেক দেশ ব্যবহারও করতে পারেনি। ফলে, এসব অব্যাবহৃত ঋণ যেন বাংলাদেশ ব্যবহার করে, এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাব দিয়েছে সংস্থাটি। নতুন ঋণের ভলিউম ছয় বিলিয়ন ছাড়াতে পারে। বাংলাদেশি মুদ্রায় এই ঋণের পরিমাণ হবে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা।

এ বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব মনোয়ার আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ সম্পর্কে বিশ্বব্যাংকের ধারণা পরিবর্তন হয়েছে। সবখানেই বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রশংসায় পঞ্চমুখ বিশ্বব্যাংক। আগে তাদের ঋণের জন্য নানাভাবে বলতে হতো। এখন বিশ্বব্যাংক ঋণ নেওয়ার জন্য বাংলাদেশকে বলে। আইডিএ-১৮ শেষ হয়ে যাচ্ছে, নতুন করে শুরু হবে আইডিএ-১৯। স্বল্প সুদে ঋণ নেওয়ার এটাই শেষ সুযোগ। আমরা এটাকে কাজে লাগাতে চাই। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক আমাদের ছয় বিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে চায়। তবে, তার আগে আমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনা করবো। তিনি রাজি হলেই ছয় বিলিয়ন ডলার ঋণ নেওয়া হবে স্বল্প সুদে।

বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সভায় সবখানেই আলোচনায় মুখ্য বিষয় ছিল যুক্তরাষ্ট্র-চীনের বাণিজ্য নিয়ে বিপরীতমুখী অবস্থান। সেই সঙ্গে বিশ্বমন্দার কবলে থাকা বড় দেশগুলোর উদার বাণিজ্যনীতির ব্যর্থতা ও মুদ্রা পাচারের মতো অপরাধ ঠেকাতে না পারার প্রসঙ্গও। এদিন বৈশ্বিক কর ও ব্যাংক ব্যবস্থারও সমালোচনা করা হয়। সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে মোট ১২টি সেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে। তারমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা ও সক্ষমতা নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ সেশন অনুষ্ঠিত হয়। যেকোনো দেশের অর্থনীতির নিয়ন্ত্রক হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে শক্তিশালী ভূমিকা পালনের পাশাপাশি স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয় এতে।

বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট হার্টউইগ শেফারের সঙ্গে ও সার্কভুক্ত দেশগুলোর অর্থমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেন বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এসময় রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে।

 


বিভাগ : অর্থনীতি


এই বিভাগের আরও