অগণতান্ত্রিক সরকারগুলো বঙ্গবন্ধুর খুনীদেরকে পুনর্বাসন করেছে: গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী

২৮ আগস্ট ২০১৯, ০৪:০৭ পিএম | আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৪৩ এএম


অগণতান্ত্রিক সরকারগুলো বঙ্গবন্ধুর খুনীদেরকে পুনর্বাসন করেছে: গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী

 

নিজস্ব প্রতিবেদক:

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেছেন, “স্বাধীনতাবিরোধী ও প্রতিক্রিয়াশীলরা মিলে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড সংগঠিত করেছে। আর বঙ্গবন্ধুর খুনীদেরকে অগণতান্ত্রিক সরকারগুলো পুনর্বাসন করেছে। জিয়াউর রহমান নিজে বঙ্গবন্ধু হত্যার উপকারভোগী এবং মদদ দাতা। তিনি বঙ্গবন্ধুর খুনীদেরকে দেশের বাইরে পুনর্বাসন করেছেন। আত্মস্বীকৃত খুনীদের বিচার না করে তাদেরকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ইনডেমনিটি অডিন্যান্সকে সংবিধানের অংশে পরিণত করেছেন।

এরপর এরশাদ বঙ্গবন্ধুর খুনীদের সরাসরি রাজনীতিতে পুনর্বাসন ও প্রটেকশন দিয়েছেন। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনীদেরকে বিভিন্ন মিশনে চাকরী ও পদোন্নতি দিয়েছেন। জিয়াউর রহমান, এরশাদ ও খালেদা জিয়া একইরূপে কলঙ্কজনক অধ্যায় রচনা করে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনীদেরকে সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা দিয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কর্মীদেরকে ধ্বংস করতে সহায়তা করেছেন”।

বুধবার (২৮ আগস্ট) রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অডিটোরিয়ামে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৪তম শাহাদত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আয়োজিত জাতির পিতার জীবন, কর্ম ও আদর্শ নিয়ে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এর চেয়ারম্যান ড. সুলতান আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন রাজউকের সদস্য (পরিকল্পনা) সাঈদ নূর আলম, মুখ্য আলোচক হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান, বিশেষ অতিথির বক্তব্য প্রদান করেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ শহীদ উল্লা খন্দকার এবং অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য প্রদান করেন স্থাপত্য অধিদপ্তরের প্রধান স্থপতি কাজী গোলাম নাসির ও রাজউক কর্মচারী শ্রমিক লীগের সভাপতি মোঃ আব্দুল মালেক মিয়া। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ ও রাজউকের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

প্রধান অতিথি আরও বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশকে, বাঙালি সত্ত্বাকে, একাত্তরের চেতনাকে ধ্বংস করার জন্য আগস্ট মাসেই বড় অভিযান চালিয়েছে স্বাধীনতাবিরোধী, প্রতিক্রিয়াশীল দেশীয় ও বিদেশী চক্র। ৭৫ এর ১৫ই আগস্টের ঘটনা শুধু বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। ১৯৭১ সালে যারা পরাজিত হয়েছিলো, তারা পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতেই ১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে এবং তার সহযোদ্ধাদের সাথে নিষ্ঠুর, নৃশংস ও বর্বরভাবে হত্যা করে। এরপর ০৩রা নভেম্বর জেলখানায় জাতীয় চার নেতাকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। তারপরও তারা শঙ্কামুক্ত হতে পারেনি বলে আবার ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট আঘাত হানে শেখ হাসিনাসহ  গোটা আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করার জন্য। ৭১, ৭৫ এর ১৫ই আগস্ট ও ০৩রা নভেম্বর, ২০০৪ এর ২১শে আগস্ট এর আঘাতকারীরা এবং অন্তত ১৯ বার শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টাকারীরা একইসূত্রে গ্রোথিত। ১৭৫৭ সালে এসেছিলো মীর জাফর নামে, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশী ঐ জাতীয় বিশ্বাসঘাতকরা পশ্চিম পাকিস্তানীদের দোসর হিসেবে, ৭৫ এর ১৫ই আগস্ট মোস্তাক-জিয়া নামে, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট এসেছে খালেদা জিয়া, মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মুজাহিদ, তারেক রহমানের নামে।”

মন্ত্রী আরো বলেন, “বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা মানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে হত্যা করা, বাঙালিত্বকে হত্যা করা, ৩০ লক্ষ শহিদের প্রত্যাশা ও স্বপ্নকে হত্যা করা। বাংলাদেশের সমস্ত উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় দুটি বাধা। তার একটি হলো স্বাধীনতাবিরোধী, আরেকটি হলো প্রতিক্রিয়াশীল, যারা তত্ত্ব কথা বলেন সব সময়। স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে তাদের কোনো ভূমিকা নেই”।

 

রাজউকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে কখনো বিচ্যুত হবেন না। আমি চাই আরো স্বচ্ছতা, জবাবদিহি আরো দায়িত্বশীলতার সাথে আপনারা কাজ করবেন। মনে রাখবেন সাধারণ মানুষের ট্যাক্সের টাকায় আপনাদের বেতন দেয়া হয়। একজন মানুষও যেনো সেবা নিতে এসে রাজউক থেকে কষ্ট নিয়ে বেরিয়ে না যায়। সেই কষ্ট ৩০ লক্ষ শহিদের চেতনার পরিপন্থী, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের পরিপন্থী, অবিরাম পরিশ্রম করা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিশ্রম পরিপন্থী। আসুন রাজউক পরিবারকে একটা দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী, জনবান্ধব প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করি। রাজউকের গৌরবকে সকলে মিলে পুনরুদ্ধার করি”।

এসময় মুখ্য আলোচক ড. মীজানুর রহমান বলেন, “বঙ্গবন্ধু পরিবারের আত্মত্যাগকে আমরা শক্তিতে পরিণত করে এগিয়ে যাবো। একটি রাষ্ট্রের মালিকানা আমরা পেয়েছি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে। সেটি হারিয়ে যায় ৭৫ সালের ১৫ই আগস্টে। শেখ হাসিনার নেতৃত্ব আমাদের জন্য এখন গৌরবের। তার নেতৃত্বে আমরা অসম্প্রদায়িক বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, উন্নত বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। শেখ হাসিনার সবচেয়ে বড় অবদান ক্যান্টনমেন্ট থেকে বের করে আনা গণতন্ত্র। অপশক্তির ব্যাপারে আমাদের সাবধান থাকতে হবে, সজাগ থাকতে হবে। এটা হোক জাতীয় শোক দিবসের অঙ্গীকার। কারণ অপশক্তি আবার আঘাত হানতে পারে।”

অনুষ্ঠান শেষে রাজউক ভবনে আয়োজিত বঙ্গবন্ধুর উপর চিত্রকর্ম প্রদর্শনীতে স্থান পাওয়া বিভিন্ন চিত্রকর্মের শিল্পীদের মধ্য থেকে নির্বাচিত ০৫ জনকে পুরস্কার দেয়া হয়। পরবর্তীতে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয় এবং রাজউক কর্মচারী শ্রমিক লীগের উদ্যোগে গণভোজের আয়োজন করা হয়।


বিভাগ : বাংলাদেশ


এই বিভাগের আরও