রাজধানীতে পাসপোর্ট জালিয়াতি চক্রের ০২ জন গ্রেফতার 

১০ অক্টোবর ২০১৯, ১০:৫৬ পিএম | আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৩০ এএম


রাজধানীতে পাসপোর্ট জালিয়াতি চক্রের ০২ জন গ্রেফতার 
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
রাজধানীর ফকিরাপুল ও মতিঝিল থেকে পাসপোর্ট জালিয়াতি চক্রের দুইজনকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব ১১। বুধবার (০৯ অক্টোবর) দিবাগত রাতে বিশেষ অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলো-মোঃ হেদায়েতুর রহমান (৪৫), পিতাঃ মৃত বদরল আলম এবং মোঃ ইব্রাহীম (৩০), পিতাঃ মোঃ জমির উদ্দিন।
এ সময় তাদের কাছ থেকে ৬০টি ভুয়া জন্মসনদপত্র, ১০টি ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র, ০৭টি পাসপোর্ট ও জালিয়াতির কাজে ব্যবহৃত ০১টি মনিটর, ০১টি সিপিইউ এবং ০১টি স্ক্যানার  জব্দ করা হয়।
 
র‍্যাব জানায়, আটককৃত হেদায়েতুর রহমান উক্ত জালিয়াতি চক্র'র মূলহোতা এবং ইব্রাহীম ফকিরাপুলের একটি কম্পিউটার কম্পোজ দোকানের কর্মচারী ও উক্ত জালিয়াতি চক্রের সহযোগী। হেদায়েতুর রহমান এর বাড়ী কক্সবাজার জেলার চকোরিয়া থানাধীন কাকারা গ্রামে। সে দীর্ঘ ০১ যুগ ধরে ঢাকার ফকিরাপুল এলাকায় বসবাস করে আসছে। শুরুতে পাসপোর্ট অফিসের দালালির কাজ ও ভিসা প্রসেসিং এর কাজ করলেও পরবর্তীতে পাসপোর্ট জালিয়াতি চক্রের সাথে জড়িয়ে পড়ে হেদায়েত। তার বাড়ী কক্সবাজার জেলাতে হওয়ায় কক্সবাজার এলাকার কয়েকজন পাসপোর্ট এর দালালের সাথে তার ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। কক্সবাজারের উক্ত দালাল চক্র মূলত মায়ানমারের বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের (রোহিঙ্গা) ভুয়া পাসপোর্ট তৈরির মাধ্যমে বিদেশ যাওয়ার সুযোগ করে দিত। 
 
সম্প্রতি কক্সবাজার জেলার জন্ম নিবন্ধন, জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট তৈরিতে সরকারী বিধি নিষেধের কারণে উক্ত এলাকার জালিয়াতি চক্রগুলো হেদায়েতুর রহমানের মাধ্যমে ঢাকায় পাসপোর্ট তৈরি করত।  ঢাকায় হেদায়েতুর রহমান এর ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসাবে কাজ করত তার ভাতিজা সুমন। হেদায়েত কক্সবাজার ও অন্যান্য এলাকায় দালাল চক্রের চাহিদা মোতাবেক ভাতিজা সুমনের মাধ্যমে ব্যক্তির নাম, ঠিকানা ও জন্ম তারিখ দিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলার আজিম নামের এক ব্যক্তির নিকট হতে অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সংগ্রহ করত। প্রতিটি অনলাইন জন্ম নিবন্ধনের জন্য ১৩০০ টাকা দিত। 
অভিযানে উদ্ধারকৃত অধিকাংশ জন্ম নিবন্ধন নারায়ণগঞ্জ জেলার রপগঞ্জ উপজেলার রপগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সচিবের স্বাক্ষর রয়েছে এবং যাদের নামে উক্ত জন্ম নিবন্ধন সনদ ইস্যু করা হয়েছে তাদের অধিকাংশের স্থায়ী ঠিকানা কক্সবাজার জেলার বিভিন এলাকায়।
 
রপগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান ও সচিবের সাথে কথা বলে ও সরেজমিন যাচাই করে র‍্যাব জানতে পারে, জালিয়াতি চক্র তাদের স্বাক্ষর ও সীল জাল করেছে। ইস্যুকৃত জাল জন্মসনদে উল্লেখিত ১৭ ডিজিটের নিবন্ধন নাম্বার দিয়ে ওয়েব সাইট যাচাই করে দেখা যায় উক্ত নাম্বারের অনুকূলে উল্লেখিত ব্যক্তির নাম, ঠিকানা ও জন্ম তারিখ মিল রয়েছে।
উল্লে­খ্য উক্ত তথ্য ভান্ডারে কোন ছবি থাকে না পরবর্তীতে উক্ত জন্মনিবন্ধন সনদ দিয়ে পাসপোর্ট এর আবেদন করলে আবেদনকারীর উল্লেখিত তথ্য জন্ম নিবন্ধনের ডাটাবেসের সাথে মিল থাকলে তারা সহজেই পাসপোর্ট পেয়ে যেত। একইভাবে ব্যক্তির নাম, পিতার নাম, ঠিকানা, বয়স পরিবর্তন করেও পাসপোর্ট করিয়ে নিত এই জালিয়াতি চক্র। 
কোন ব্যক্তির নামে বিরূপ তথ্য থাকলে কিংবা সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী হলেও নতুন পাসপোর্ট করেও সহজে বিদেশ চলে যাওয়া যায় বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানায় আটককৃতরা। 
 
অভিযানকালে আসামীদের নিকট হতে জব্দকৃত ও তাদের কম্পিউটারে রক্ষিত জন্ম সনদগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যায় যাদের নামে জন্ম সনদগুলা তৈরী করা হয়েছে সেই সনদ গ্রহণকারী লোকগুলো সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিদা নন। বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের সচিব ও উদ্যোক্তা সদস্য, সিটি করপােরেশনের নিবন্ধন কর্মকর্তা-কর্মচারী, জেলা পরিষদ ও বিভিন্ন উপজলা পরিষদের জন্ম মৃত্যু রেজিস্টেশন কার্যালয়ের কর্মচারীদের যােগসাজশে জন্ম নিবন্ধন সনদ ন্যাশনাল সার্ভার হতে তৈরী করে সরবরাহ করতো। এই জন্ম সনদ দিয়ে কয়েক শতাধিক পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়েছে বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়। তাদের এই কাজে পাসপোর্ট অফিসের কয়কজন অসাধু কম্পিউটার অপারেটর ও অফিস সহকারীর যোগসাজশ রয়েছে বলেও জানা যায়। তাদের বিরদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং এই জালিয়াতি চক্রের অন্যান্য সদস্যদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত থাকবে।  

বিভাগ : বাংলাদেশ


এই বিভাগের আরও