শিশু ধর্ষণের অভিযোগে মসজিদের ইমামসহ ০৬ জন গ্রেফতার

০৭ আগস্ট ২০১৯, ০৫:৪৯ পিএম | আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৪৪ পিএম


শিশু ধর্ষণের অভিযোগে মসজিদের ইমামসহ ০৬ জন গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
ঝাড়ফুঁকের নামে ৮ বছরের শিশু ধর্ষণের অভিযোগে মসজিদের এক ইমামসহ ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১১। বুধবার (০৭ আগস্ট) সকালে নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানাধীন উত্তর চাষাড়া চাঁনমারীস্থ এলাকা হতে তাদের গ্রেফতার করা হয়।


গ্রেফতারকৃতরা হলো- ধর্ষক মোঃ ফজলুর রহমান ওরফে রফিকুল ইসলাম (৪৫), পিতা-মৃত রিয়াজ উদ্দিন, সাং-সরাপাড়া, থানা-কেন্দুয়া, জেলা-নেত্রকোনা এবং তার সহযোগী মোঃ রমজান আলী, মোঃ গিয়াস উদ্দিন, হাবিব এ এলাহী ওরফে হবি, মোঃ মোতাহার হোসেন ও মোঃ শরিফ হোসেন।


র‌্যাব-১১ এর মিডিয়া অফিসার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলেপ উদ্দিন জানান, মঙ্গলবার (০৬ আগস্ট) রাতে বোরকা পরিহিত অবস্থায় এক ব্যক্তি র‌্যাব-১১ এর অফিসে এসে এই মর্মে একটি অভিযোগ করেন যে, তার ৮ বছর বয়সী মেয়ে বর্তমানে ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতাল, নারায়ণগঞ্জে চিকিৎসাধীন। স্থানীয় মসজিদের এক ইমাম কর্তৃক শিশুটি ধর্ষণের শিকার হওয়ায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ধর্ষণের পর ইমামের অনুসারীরা ওই শিশু ও তাকে মেরে ফেলার জন্য বার বার হাসপাতালে গিয়ে খুঁজছে।


ঘটনাটি শোনার পর তাৎণিকভাবে র‌্যাব-১১ এর একটি অভিযানিক দল ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতালে ছুটে যায়। ভিকটিম ও তার পরিবারের সাথে কথাবলে ঘটনার সত্যতা পেয়ে হাসপাতালে তাদের নিরাপত্তায় নিরাপত্তা চৌকি বসানো হয়। এরপর আভিযানিক দলটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও ধর্ষককে গ্রেফতারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে। বুধবার সকালে অভিযুক্ত ইমাম ও তার সহযোগীদের গ্রেফতার করা হয়।


র‌্যাবের কর্মকর্তা আলেপ উদ্দিন আরও জানান, নির্যাতনের শিকার শিশুটি মাদ্রাসায় ২য় শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। শিশুটি রাতের বেলায় বিভিন্ন প্রকার দুঃস্বপ্ন দেখে কান্না কাটি করতো। বিভিন্ন প্রকার কবিরাজি চিকিৎসা করে ভালো না হওয়ায় শিশুটির বাবা জানতে পারেন যে, অভিযুক্ত ইমাম মোঃ ফজলুর রহমান @ রফিকুল ইসলাম দীর্ঘদিন যাবৎ ঝাড়ফুঁক ও পানিপড়া দেয়। এরই প্রেেিত শিশুটি এর আগে ০২ থেকে ০৩ বার ধর্ষক ফজলুর রহমানের কাছে ঝাড়পফুঁক নেয়। তারপরও তেমন উপকার না হওয়ায় ইমাম ফজলুর রহমান শিশুর বাসায় গিয়ে ""বাড়ী বন্দি'' নামক চিকিৎসা করে আসে। ঘটনার আগের দিন মাগরিবের সময় ওই শিশুর বাবা ইমাম ফজলুর রহমানকে ফোন দিয়ে মেয়ের চিকিৎসার ব্যাপারে আসতে চাইলে সে পরের দিন ফজরের আযানের সাথে সাথে মসজিদে আসতে বলে। কথা অনুযায়ী পরের দিন সকালে শিশুটিকে নিয়ে মসজিদে চলে আসেন তার বাবা। ফজরের নামাজের পর ইমাম শিশু ও তার বাবাকে নিয়ে মসজিদের ৩য় তলায় ইমামের বেড রুম নিয়ে যায়।


এসময় হালকা ঝাড়ফুঁক করে পরিকল্পিতভাবে শিশুর বাবাকে ভোর ০৫টা ২০ মিনিটের দিকে এক প্যাকেট আগরবাতি ও একটি মোমবাতি আনার জন্য দোকানে পাঠিয়ে দেয়। ঐ সময় দোকানপাট খোলা না থাকায় শিশুটির বাবা কোনো ভাবেই মোমবাতি ও আগরবাতি কিনতে পারছিলেন না। এরমধ্যে সময় পেন করার জন্য ফজলুর রহমান শিশুটির বাবাকে ফোন করে ১টি পান আনতে বলে ও মসজিদের মোয়াজ্জিন কে ফোন করে নিচের গেটে তালা মারতে বলে।
এদিকে শিশুটির বাবা ফিরে আসতে ৪০ থেকে ৪৫ মিনিট সময় লেগে যায়। এ সুযোগে শিশুটির দুই হাত পিছনে বেধে ও মুখে টেপ মেরে নির্মমভাবে পাশবিক নির্যাতন করে ইমাম নামধারী ফজলুর রহমান। এসময় প্রমাণ মুছে ফেলার জন্য মসজিদের ছাদে নিয়ে শিশুটিকে পানি দিয়ে পরিস্কার করে দেয়। এরপরে শিশুটির গলায় ছুরি ধরে তার বাবা মাকে না বলার হুমকি দেয়।


শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাড়াহুড়ো করে তার বাবাকে বুঝিয়ে দিয়ে বিদায় করে দেয় ওই ইমাম। শিশুটি বাসায় গিয়ে তার বাবা মাকে সবকিছু খুলে বললে এবং ধীরে ধীরে তার শারিরীক অবস্থার অবনতি হওয়া শুরু করলে ভূক্তভোগী পরিবারটি শিশুটিকে নিয়ে মসজিদে এসে বিচার চেয়ে অভিযোগ করেন। এসময় মসজিদ কমিটির কিছু সংখ্যক লোক ও আশেপাশের ধর্ষকের কিছু ভক্ত মিলে সেখানেও শিশু ও পরিবারটিকে মারাত্মকভাবে হেনস্থা করে।


ধর্ষক ফজলুর রহমান তার অনুসারীদের দিয়ে এমন একটি পরিস্থিতির সৃষ্টি করে যে, ভূক্তভোগী পরিবারটি যেন থানা বা হাসপাপতালে যেতে না পারে। এরপর শিশুটির অবস্থা আরো খারাপ হলে শিশুটিকে নিয়ে পরিবারটি নারায়ণগঞ্জের ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে চুপি চুপি ভর্তি করেন। খবর পেয়ে ধর্ষক ফজলুর রহমান ও তার অনুসারীরা শিশুটিকে হত্যা ও অপহরণ করার উদ্দেশ্যে কয়েক দফায় হাসপাতালে যাওয়ার চেষ্টা চালায়। ধর্ষকের অনুসারীরা হাসপাতালে এমন একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি করে যে শিশুটিকে হাসপাতালে লুকিয়ে রেখে শিশুটির বাবা মাকে দীর্ঘসময় ধরে হাসপাতালের টয়লেট ও বেডের নিচে লুকিয়ে থাকতে হয়েছে। এরই এক পর্যায়ে শিশুটির বাবা হাসপাতালের নার্স এর বোরকা পড়ে র‌্যাব অফিসে এসে অভিযোগ দেয়।

 


বিভাগ : বাংলাদেশ


এই বিভাগের আরও