রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে প্রধানমন্ত্রীর ৪ প্রস্তাবনা পেশ

২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১০:২৫ এএম | আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:২৬ এএম


রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে প্রধানমন্ত্রীর ৪ প্রস্তাবনা পেশ

টাইমস ডেস্ক:

রোহিঙ্গা সংকটকে আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই সংকটের স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করে তিনি ৪ দফা প্রস্তাব পেশ করেছেন। নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৪ তম অধিবেশনে এ প্রস্তাবনা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। অধিবেশনে অন্যান্য বারের মত এবারও তিনি বাংলায় ভাষণ দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবাসন এবং আত্মীকরণে মিয়ানমারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে রাজনৈতিক সদিচ্ছার পূর্ণ প্রতিফলন দেখাতে হবে। দ্বিতীয়ত: বৈষম্যমূলক আইন ও রীতি বিলোপ করে মিয়ানমারের প্রতি রোহিঙ্গাদের আস্থা তৈরি করতে হবে এবং রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের উত্তর রাখাইন সফরের আয়োজন করতে হবে। তৃতীয়ত: আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে বেসামরিক পর্যবেক্ষক মোতায়েনের মাধ্যমে মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তার ও সুরক্ষার নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে। শেষ প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই রোহিঙ্গা সমস্যার মূল কারণসমূহ বিবেচনায় আনতে হবে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন ও অন্যান্য নৃশংসতার দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে হবে।

তিনি বলেন, আমি এর আগে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭২তম অধিবেশন রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে কফি আনান কমিশনের সুপারিশসমূহের পূর্ণ বাস্তবায়ন এবং রাখাইন প্রদেশে বেসামরিক তত্ত্বাবধানে সুরক্ষা বলয় প্রতিষ্ঠাসহ পাঁচ-দফা প্রস্তাব পেশ করেছিলাম।

রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান না হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী তার অসন্তুষ্টি ব্যক্ত করে বলেন, এটি বাস্তবিকপক্ষেই দুঃখজনক যে রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধান না হওয়ায় আজ এই মহান সভায় এ বিষয়টি আমাকে পুনরায় উত্থাপন করতে হচ্ছে। ১১ লাখ রোহিঙ্গা আমাদের আশ্রয়ে রয়েছে। যারা হত্যা ও নির্যাতনের মুখে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা প্রলম্বিত হয়ে তৃতীয় বছরে পদার্পণ করেছে, কিন্তু মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সুরক্ষা, নিরাপত্তা ও চলাফেরার স্বাধীনতা এবং সামগ্রিকভাবে অনকূল পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়ায় এখন পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাও মিয়ানমারে ফিরে যায়নি।

এই সমস্যার অনিশ্চয়তার বিষয়টি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অনুধাবনের অনুরোধ করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এখন আর বাংলাদেশে রোহিঙ্গারা ক্যাম্পের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে না। বাংলাদেশের সকল প্রচেষ্টা সত্ত্বেও বিষয়টি এখন আঞ্চলিক নিরাপত্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। উপরন্তু, ক্রমবর্ধমান স্থান সংকট এবং পরিবেশগত অবক্ষয়ের কারণে এই এলাকার পরিবেশ, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে।

রোহিঙ্গা ইস্যুকে মিয়ানমার এবং তাদের নিজস্ব জনগণের সমস্যা আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এমন একটি সমস্যার বোঝা বহন করে চলেছি যা মিয়নামারের তৈরি। এটি সম্পূর্ণ মিয়ানমার এবং তার নিজস্ব নাগরিক রোহিঙ্গাদের মধ্যকার একটি সমস্যা। তাদের নিজেদেরই এর সমাধান করতে হবে।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, সুরক্ষিত ও সম্মানের সঙ্গে স্বেচ্ছায় রাখাইনে নিজ গৃহে ফিরে যাওয়ার মাধ্যমেই এই সমস্যার সমাধান সম্ভব। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন সম্পন্ন করতে মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের আলাপ-আলোচনা অব্যাহত থাকবে।

প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে রোহিঙ্গা সংকট ছাড়াও বিভিন্ন বৈশ্বিক সমস্যা মোকাবেলায় তার সরকারের অবস্থান তুলে ধরেন। বিশেষ করে নিরাপদ অভিবাসন, উদ্বাস্তু সমস্যা, জলবায়ু পরিবর্তন, এসডিজি এবং আর্থসামাজিক উন্নয়নের বিষয়ে কথা বলেন।


বিভাগ : বাংলাদেশ


এই বিভাগের আরও