ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত ৩৩৩ স্বাস্থ্যকর্মী ও ১০৫ চিকিৎসক

২৫ আগস্ট ২০১৯, ০২:১৩ পিএম | আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৫ এএম


ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত ৩৩৩ স্বাস্থ্যকর্মী ও ১০৫ চিকিৎসক

নিজস্ব প্রতিবেদক:
আমাদের দেশে অতীতের সব পরিসংখ্যান ছাড়িয়ে যাচ্ছে ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা। ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছেন হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসা দিতে ব্যস্ত চিকিৎসক, নার্সসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীরাও। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ১০৫ জন চিকিৎসক দেশের হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন।

এছাড়াও ১৩৭ জন নার্স ও ৯১ জন স্বাস্থ্যকর্মী ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। শনিবার (২৪ আগস্ট) স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার এসব তথ্য জানিয়েছেন।


ডা. আয়শা আক্তার জানান, বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন দু’জন চিকিৎসক, নয়জন নার্স ও চারজন স্বাস্থ্যকর্মীসহ ১৫ জন। ইতোমধ্যেই চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন ১০৩ জন চিকিৎসক, ১২৮ জন নার্স, ৮৭ জন স্বাস্থ্যকর্মীসহ মোট ৩১৮ জন।
ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা দেওয়া সরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি হয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এই হাসপাতালের ২৫ জন চিকিৎসক, ২২ জন নার্স ও ১৫ জন স্বাস্থ্যকর্মীসহ মোট ৬২ জন এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। বর্তমানে এই হাসপাতালে একজন ডাক্তার ও তিনজন নার্সসহ মোট চারজন চিকিৎসা নিচ্ছেন।


রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালে ছয়জন নার্স ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। বর্তমানে দুইজন নার্স চিকিৎসাধীন আছেন। চারজন সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন।
ঢাকা শিশু হাসপাতালে দুইজন চিকিৎসক ও চারজন নার্স ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিলেও বর্তমানে এই হাসপাতালে কোনো স্বাস্থ্যকর্মী ভর্তি নেই।


শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের ১১ জন চিকিৎসক, ১৩ জন নার্স এবং ছয়জন স্বাস্থ্যকর্মী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। বর্তমানে এই হাসপাতালে একজন নার্স চিকিৎসাধীন আছেন।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে হাসপাতালের চারজন চিকিৎসক চিকিৎসা নিলেও বর্তমানে এই হাসপাতালে কোনো ডেঙ্গু আক্রান্ত স্বাস্থ্যকর্মী নেই।
মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৪ জন চিকিৎসক এবং ২২ জন নার্স ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন বিভিন্ন সময়ে। বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছেন দুইজন নার্স।
রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে চলতি বছরে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছেন দুইজন চিকিৎসক ও তিনজন নার্স। বর্তমানে এই হাসপাতালে কোনো স্বাস্থ্যকর্মী চিকিৎসাধীন নেই। পিলখানা বিজিবি হাসপাতালে চারজন নার্সসহ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ১৮ জন স্বাস্থ্যকর্মী। বর্তমানে এখানেও কোনো স্বাস্থ্যকর্মী চিকিৎসাধীন নেই। একইভাবে কুয়েত বাংলাদেশ সরকারি মৈত্রী হাসপাতালেও কোনো চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মী চিকিৎসাধীন নেই। এই হাসপাতালে দুইজন ডাক্তার ও পাঁচজন স্বাস্থ্যকর্মী চিকিৎসা নিয়েছেন।


কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চারজন চিকিৎসক, তিনজন নার্স ও সাতজন স্বাস্থ্যকর্মী চিকিৎসাধীন ছিলেন। বর্তমানে হাসপাতালটিতে ভর্তি আছেন একজন নার্স ও দুইজন স্বাস্থ্যকর্মী।
এছাড়াও ঢাকা বিভাগের বাইরের শহরগুলোতে চলতি বছরে ১ জন স্বাস্থ্যকর্মী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন।
বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুইজন চিকিৎসক, দুইজন নার্স ও পাঁচজন স্বাস্থ্যকর্মী চিকিৎসা নিলেও সবাই সুস্থ হয়ে হাসপাতালের ছাড়পত্র পেয়েছেন। হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে তিনজন স্বাস্থ্যকর্মী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন থাকলেও সবাই সুস্থ হয়ে হাসপাতালের ছাড়পত্র পেয়েছেন।
রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে সাতজন চিকিৎসক, ২৭ জন নার্স ও ছয়জন স্বাস্থ্যকর্মীসহ মোট ৪০ জন এবং ল্যাবএইড হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন একজন চিকিৎসক ও তিনজন নার্সসহ চারজন। তবে বর্তমানে একজন স্বাস্থ্যকর্মী চিকিৎসাধীন থাকলেও এই হাসপাতাল থেকে বাকিরা সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র পেয়েছে। ল্যাব এইড হাসপাতালেও কোনো চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মী চিকিৎসাধীন নেই।
সিরাজুল আলম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুইজন চিকিৎসক, একজন নার্স ও একজন স্বাস্থ্যকর্মী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। বর্তমানে এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন একজন চিকিৎসক ও একজন স্বাস্থ্যকর্মী।
ধানমন্ডির কমফোর্ট নার্সিংয়ে দুইজন স্বাস্থ্যকর্মী চিকিৎসা নিলেও বর্তমান কেউ চিকিৎসাধীন নেই।
এছাড়াও সেন্ট্রাল হাসপাতালের তিনজন চিকিৎসক ও ১৭ জন নার্স ও চারজন স্বাস্থ্যকর্মীসহ ২৪ জন, খিদমা হাসপাতালে পাঁচজন চিকিৎসক, দুই জন নার্স এবং তিন জন স্বাস্থ্যকর্মীসহ ১০জন, শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৩জন চিকিৎসক, চার জন নার্স ও ১৩জন স্বাস্থ্যকর্মী সহ ৩০জন, আদদিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছয়জন চিকিৎসক ও চারজন স্বাস্থ্যকর্মীসহ ১০জন, হাই কেয়ার হাসপাতালে দুই জন নার্স, পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুইজন চিকিৎসক, দুইজন নার্সসহ চারজন এবং উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে একজন স্বাস্থ্যকর্মী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন।


ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছেন চিকিৎসক, নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীরাও স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৬২ হাজার ২১৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ৫৫ হাজার ৮৮১ জন রোগী সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছেন ৬ হাজার ২৮৯ জন রোগী। শুক্রবার (২৩ আগস্ট) এই সংখ্যা ছিল ৬ হাজার ৩৫ জন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) মোট ৮০টি মৃত্যু পর্যালোচনা করে মোট ৪৭ জনের ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছে। কিন্তু এদের মধ্যে কোনো স্বাস্থ্যসেবা দানকারী কোনো চিকিৎসক, নার্স বা স্বাস্থ্যকর্মী আছেন কিনা তা জানা যায়নি।
তবে, বেসরকারি প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চারজন চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে।
এছাড়া, ১৫ আগস্ট বেলা ১১টার দিকে বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন তপন কুমার মণ্ডল নামে এক স্বাস্থ্য সহকারী। তিনি রাজধানীতে সরকারি আদেশে ডেঙ্গু প্রতিরোধ কার্যক্রমে অংশ নিতে এসেছিলেন। তপন কুমার মণ্ডল মাদারীপুর সদর উপজেলার স্বাস্থ্য সহকারী ছিলেন।


বিভাগ : বাংলাদেশ


এই বিভাগের আরও