বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে দেশের ২৫ নদ-নদীর পানি

১৫ জুলাই ২০১৯, ০১:৫৩ পিএম | আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২৪, ০৪:৪৬ পিএম


বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে দেশের ২৫ নদ-নদীর পানি

টাইমস ডেস্ক:

দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। রবিবারও (১৪ জুলাই) বিভিন্ন জেলার নতুন নতুন এলাকা পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এতে হাজার হাজার মানুষ হয়েছে পানিবন্দী হয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন। বন্যার্ত এলাকাগুলোতে খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও ওষুধের সঙ্কট বাড়ছে। রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ভেঙ্গে পড়েছে বন্যাকবলিত এলাকাগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থা। বন্যা কবলিত এলাকায় দেখা দিয়েছে পানিবাহিত নানা রোগের প্রাদুর্ভাব। সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে গেছে শত শত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রোপা আমনের বীজতলাসহ বিভিন্ন ফসল ও শাক-সবজির ক্ষেত।

অধিকাংশ জেলায় আজ সোমবারও মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণ হয়েছে। সীমান্তবর্তী ভারতের রাজ্যসমূহে ভারি বর্ষণ ও বন্যা অব্যাহত রয়েছে। ফলে বাংলাদেশের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটতে বেশ সময় লাগতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। রবিবার দেশের ২৫ নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। দেশের ওপর মৌসুমি বায়ু সক্রিয় রয়েছে এবং বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আনিসুজ্জামান ভূইয়া রবিবার বিকেলে জানান, সুরমা ব্যতীত দেশের সকল প্রধান নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর ও ভারতের আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল তৎসংলগ্ন ভারতের অসম ও মেঘালয়ে বিস্তৃত এলাকায় আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় মাঝারি হতে ভারি এবং কোথাও কোথাও অতি ভারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল সংলগ্ন ভারতের বিহার এবং নেপালে ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী ৭২ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও গঙ্গা-পদ্মা নদীসমূহের পানি সমতল বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে যমুনা বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। সিলেট ও রংপুর বিভাগের সুরমা, কুশিয়ারা, কংস, সোমেশ্বরী, ধরলাসহ প্রধান নদীসমূহের পানি সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, সিলেট, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া ও সিরাজগঞ্জ জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে।

চট্টগ্রামে সপ্তাহেরও বেশি টানা বর্ষণের পর রবিবার কিছুক্ষণের জন্য সূর্য দেখা গেছে। আগের রাতে ভারি বৃষ্টিপাত হলেও সকাল থেকে পরিস্থিতির উন্নতি হয়। মহানগরীর নিচু এলাকার সড়কগুলো থেকে পানি অনেকটাই নেমে যায়। পানির নিচ থেকে বেরিয়ে এসেছে অসংখ্য খানাখন্দে ভরা সড়ক। তবে সন্ধ্যায় আবারও বর্ষণ শুরু হয়।

শঙ্খ নদীর পানিতে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া ও চন্দনাইশ উপজেলা এলাকায় প্রায় তিন লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। নারী, পুরুষ ও শিশুরা গৃহবন্দী রয়েছেন। অনেক পরিবার সদস্যদের আত্মীয় স্বজনের কাছে পাঠিয়ে দিলেও কিছু কিছু পরিবার এখনও ঘরের চালের ওপর আতঙ্কে সময় কাটাচ্ছেন।

কক্সবাজারের চকরিয়ায় পাহাড় ধসে স্বামী-স্ত্রীর মৃত্যু ঘটেছে। মাটির নিচে চাপা পড়া অবস্থা থেকে মাটি সরিয়ে তাদের উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতরা হলেন- স্বামী মোঃ আনোয়ার সাদেক (৩৫) ও তার স্ত্রী ওয়ারেসা বেগম (৩০)। শনিবার রাত ৩টায় চকরিয়া বমুবিলছড়ি বমুরকুল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

কুড়িগ্রামে অবিরাম বৃষ্টি আর পাহাড়ী ঢলের কারণে ধরলা, তিস্তা, দুধকুমোর, ব্রহ্মপুত্রসহ ১৬ নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। একের পর এক গ্রাম প্লাবিত হয়ে পড়ছে চর-দ্বীপচরসহ নদ-নদী তীরবর্তী নতুন নতুন এলাকা। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ৪শ’ গ্রামে প্রায় তিন লক্ষাধিক মানুষ।

খাগড়াছড়ির পার্বত্য জেলায় বৈরী আবহাওয়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। দীঘিনালার মেরু এলাকার নিম্নাঞ্চলের কিছু জায়গায় এখনও জলাবদ্ধতার ফলে সড়ক তলিয়ে গিয়ে রাঙ্গামাটির লংগদু উপজেলার সঙ্গে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। এদিকে বৈরী আবহাওয়ায় পাহাড়ধস ও বন্যার আশঙ্কায় রাঙ্গামাটির সাজেকসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে ভ্রমণে সর্তকতা জারি করে পর্যটকদের নিরুৎসাহিত করছে স্থানীয় প্রশাসন।

গাইবান্ধা জেলায় তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, ঘাঘট ও করতোয়া নদীর পানি অব্যাহত থাকায় জেলার সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও সদর উপজেলার ১১৩টি গ্রামের নতুন নতুন এলাকা বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। এতে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। ফলে এসব এলাকার বিভিন্ন ফসলি জমি ও রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। ফলে বন্যাকবলিত এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

বগুড়ায় যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সারিয়াকান্দি ও ধুনট উপজেলায় নদী ভাঙ্গনসহ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। যমুনার পানি বিপদসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া যমুনার পাশাপাশি বাঙালী নদীর পানিও বাড়ছে। যমুনা তীরবর্তী নিচু এলাকা প্লাবিত হওয়ায় এসব এলাকার অনেক লোক বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ওপর আশ্রয় নিচ্ছেন। সারিয়াকান্দি ও পার্শ্ববর্তী ধুনট উপজেলার দু’শতাধিক পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। এছাড়া দুই উপজেলার প্রায় ১২ হাজার পরিবার পানিবন্দী রয়েছে।

নীলফামারীতে দেশের সর্ববৃহৎ তিস্তা ব্যারাজের বন্যা বাইপাস ঘিরে উজানের ঢলের পানির চাপ বাড়ছে। এটি বিধ্বস্ত হলে তিস্তা নদী গতিধারা পাল্টে যেতে পারে। এমনই আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী। ’৮৮ ও ’৯৬ সালের চেয়েও ভয়াবহ বন্যা মোকাবেলা করছে নীলফামারী ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার লাখো মানুষ।

রাঙ্গামাটিতে অবিরাম ভারি বষর্ণ রবিবার থেকে কমে যাওয়ায় রাঙ্গামাটিতে পাহাড়ধস ও বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছে। কাপ্তাই হ্রদে পাহাড়ী ঢল নামা অব্যাহত থাকায় রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি, বরকল, লংগদু, নানিয়াচর , কাপ্তাই ও জুরাইছড়ি উপজেলার নিম্নাঞ্চচল প্লাবিত হওয়া অব্যাহত রয়েছে।

নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা ও দুর্গাপুর উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। এদিকে বারহাট্টার বাউশি ও রায়পুর ইউনিয়নের পর আসমা, চিরাম ও সাহতা ইউনিয়নের কিছু গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। সব মিলিয়ে তিন উপজেলার তিন শতাধিক গ্রামের মানুষ পানিবন্দী হয়ে আছে।

ঠাকুরগাঁওয়ে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ঠাকুরগাঁওসহ আশপাশের জেলাগুলোতে গত কয়েকদিন ধরে অবিরাম বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। ফলে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে দিন-মজুর-শ্রমিকেরা কাজে যেতে না পারায় পরিবার-পরিজন নিয়ে পড়েছে চরম দুর্ভোগে। শিক্ষার্থীরাও পড়েছে চরম বিপাকে। টানা এ বৃষ্টিতে শহর ও গ্রামের নিম্নাঞ্চলগুলো জলাবদ্ধ হওয়ায় দেখা দিয়েছে পানিবাহিত নানা রোগের প্রাদুর্ভাব।

পঞ্চগড়ে গত রাতের বৃষ্টির সঙ্গে ঝড়ো হাওয়ায় পঞ্চগড়ের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সড়কের ওপর কয়েক হাজার গাছ উপড়ে পড়েছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ ভেঙ্গে পাঁচ শতাধিক ঘরবাড়ি। বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। মোবাইল নেটওয়ার্কও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

জামালপুরে যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, জিঞ্জিরাম ও ঝিনাই নদীর পানি হু হু করে বাড়তে থাকায় জেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। রবিবার বিকেল থেকে যমুনার পানি দেওয়ানগঞ্জের বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে বিপদসীমার ৯০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে জেলার দেওয়ানগঞ্জ, ইসলামপুর, মেলান্দহ, মাদারগঞ্জ, সরিষাবাড়ী ও বকশীগঞ্জ উপজেলায় ব্যাপক বন্যা দেখা দিয়েছে। বন্যায় বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে ছয়টি উপজেলার শতাধিক গ্রামের অন্ততপক্ষে ৬০ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে চরম দুর্ভোগে রয়েছেন।


বিভাগ : বাংলাদেশ


এই বিভাগের আরও