দ্রুত এইচএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশ করতে সংসদে তিন বিল উত্থাপন

১৯ জানুয়ারি ২০২১, ০২:০৭ পিএম | আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৪১ পিএম


দ্রুত এইচএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশ করতে সংসদে তিন বিল উত্থাপন

টাইমস ডেস্ক:

বিকল্প মূল্যায়নের মাধ্যমে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশের জন্য জাতীয় সংসদে আইন সংশোধনের জন্য তিন বিল উত্থাপিত হয়েছে। করোনাভাইরাসের মহামারীর মধ্যে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব না হওয়ায় এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।  

শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারি) ইন্টারমিডিয়েট অ্যান্ড সেকেন্ডারি এডুকেশন (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল-২০২১, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড (সংশোধন) বিল-২০২১ এবং বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড (সংশোধন) বিল- ২০২১ সংসদে উত্থাপন করেন। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করতে তিনটি পৃথক বিল উত্থাপন করেন শিক্ষামন্ত্রী।

মঙ্গলবার  সকাল সাড়ে ১০টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশন শুরু হয়। এরপর ইন্টারমিডিয়েট এন্ড সেকেন্ডারি এডুকেশন অর্ডিন্যান্স ১৯৯৬ অধিকতর সংশোধন কল্পে আনিত একটি বিল ‘ইন্টারমিডিয়েট এন্ড সেকেন্ডারি এডুকেশন সংশোধন বিল-২০২১, বিলটি এক দিনের মধ্যে এবং বাকি দুটি দুই দিনের মধ্যে পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।

তবে এই বিলের বিরোধিতা করেছেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম। বিলটি সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক কি না তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধী দলীয় এমপিরা।

বিলের বিরোধীতা করে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, সংবিধানের ১৭ (ক) ধরায় বলা আছে ‘একই পদ্ধতির গণমুখী ও সার্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য এবং আইনের দ্বারা নির্ধারিত স্তর পর্যন্ত সকল বালক-বালিকাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষাদান ।’ সেখানে ১২ বছর রাষ্ট্র দায়িত্ব নিয়েছে। এখন আপনি পরীক্ষা উঠায়াই দিবেন এটা সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক হবে কি না? ওখানে পরীক্ষার কথা বলা আছে পদ্ধতির কথা বলা আছে পরীক্ষা ওঠানোর কথা নেই তাই এটা সংবিধানের সাথে সাংঘষিক কি না? তাছাড়া কার্যপ্রণালী বিধির ৭৭ (ঙ) অনুসরণ না করায় সংসদ সদস্যদের অধিকার খর্ব করা হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন বিরোধী দলীয় এই এমপি। তিনি বলেন, এই বিলটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই বিলের বিরুদ্ধে আমি নই। কিন্তু এখানে কার্যপ্রণালী বিধির ৭৭ এর (ঙ) অনুসারে যে কোন বিল ৩ দিন আগে পাওয়ার কথা ছিল আমার। কিন্তু তা আমি পাইনি।

এর জবাবে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, আমার অনুমতি সাপেক্ষেই বিলটি এসেছে। কেননা এর কিছু গুরুত্ব আছে। এই তিনটি বিল আমাদের পাস করে দিতে হবে। সেই বিবেচনায় এই বিলগুলোকে আসার সম্মতি দিয়েছি।

বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, এই বিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এইচএসসি ফলাফলের জন্য শিক্ষার্থী অভিভাবক সবাই অপেক্ষা করছেন এবং আমাদের ফলাফল সব প্রস্তুতও আছে। কিন্তু যেহেতু আইনে পরীক্ষা গ্রহণপূর্বক ফলাফল দেবার বিষয়টি ছিল। এবার যেহেতু বৈশ্বিক সংকটের কারণে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি। আমরা বিকল্প একটি পদ্ধতিতে আগের দুটি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে এই ফলাফল দিতে যাচ্ছি সে কারণে বর্তমান আইনটি সংশোধন করার প্রেয়োজন দেখা দেয়। সে কারণে এটি আনা হয়েছে।

এই বিল সংসদের অনুমোদন পেলে আগামী ২৮ জানুয়ারির মধ্যে গত বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশের চেষ্টা করা হবে বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এর আগে জানিয়েছিলেন।

১১টি শিক্ষা বোর্ডের ১৩ লাখ ৬৫ হাজার ৭৮৯ জন শিক্ষার্থীর এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল ১ এপ্রিল থেকে।

কিন্তু করোনাভাইসের প্রকোপ বাড়তে শুরু করলে ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। মাসের পর মাস অপেক্ষা করেও পরীক্ষা নেওয়ার মত পরিস্থিতি তৈরি না হওয়ায় গত ৭ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, পঞ্চম ও অষ্টমের সমাপনীর মত এইচএসসি পরীক্ষাও নেওয়া যাচ্ছে না।

সেদিন তিনি জানান, অষ্টমের সমাপনী এবং এসএসসির ফলাফলের গড় করে ২০২০ সালের এইচএসসির ফল নির্ধারণ করা হবে। জেএসসি-জেডিসির ফলাফলকে ২৫ এবং এসএসসির ফলকে ৭৫ শতাংশ বিবেচনায় নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকের ফল ঘোষিত হবে। কিন্তু আইনে পরীক্ষা নিয়ে ফল প্রকাশের বিধান থাকায় গতবছরের ডিসেম্বরের মধ্যে আর ফল প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, যেহেতু গতকাল ১৮ তারিখ সংসদ শুরু হয়েছে, তারপর দ্রুততার সাথে উত্থাপনের চেষ্টা করা হলো। বিলটি যদি সংসদ পাস করে তারপর আমরা দ্রুততার সঙ্গে ফলাফল দেব। এটি অবশ্যই সংসদের এখতিয়ার। সংসদ কবে পাস করবে তার ওপর নিশ্চয়ই কথা বলবার এখতিয়ার নেই। সংসদের এখতিয়োরের ওপর কারো হাত দেবার সুযোগ নাই। অত্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় তাই দ্রুততার কথা এসেছে। এটি অত্যন্ত জরুরি। আমাদের বোর্ডের সমস্ত পরীক্ষা এই আইনের অধীনেই হয়। পরে বিলটি পরীক্ষার জন্য সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে প্রেরণ করা হয় এবং একদিনের মধ্যে বিলের রিপোর্ট প্রদান করতে বলা হয়েছে।

এছাড়া মাদরাসা শিক্ষা ও কারিগরি শিক্ষা বিল দুই দিনের মধ্যে রিপোর্ট প্রদানের জন্য বলা হয়েছে। সংসদীয় কমিটিতে বিল তিনটি অনুমোদন লাভ করার পর চলতি অধিবেশনেই বিল তিনটি পাস হবে এরপর এইচএসসি ফলাফল প্রকাশ করা হবে।


বিভাগ : বাংলাদেশ