মুজিববর্ষের উপহার: আধপাকা টিন-শেড ঘর পাচ্ছে ৮ লাখ ৮২ হাজার ৩৩টি পরিবার

০৭ অক্টোবর ২০২০, ১২:১২ পিএম | আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৩৬ এএম


মুজিববর্ষের উপহার: আধপাকা টিন-শেড ঘর পাচ্ছে ৮ লাখ ৮২ হাজার ৩৩টি পরিবার

নিজস্ব প্রতিবেদক:

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুত প্রতিটি ঘরহীন মানুষকে ঘর তৈরি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অধীনে বিভিন্ন কর্মসূচির আওতায় ঘরহীন পরিবারকে ঘর তৈরি করে দেওয়ার কার্যক্রম চললেও এটি হচ্ছে পৃথক কর্মসূচি। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী মুজিববর্ষ পালন উপলক্ষে সরকারের একটি বড় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সারা দেশের ৮ লাখ ৮২ হাজার ৩৩টি ঘরহীন পরিবারকে আধপাকা টিন-শেড ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। এ লক্ষ্যে নেওয়া দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্প প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অনুমোদন পেয়েছে। আগামী বছরের ১৭ মার্চের মধ্যেই এসব ঘরহীন মানুষকে নিজের ঘরে তুলে দেওয়া সম্ভব হবে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, চলতি ২০২০ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছিলেন, মুজিববর্ষে দেশে কোনও মানুষ গৃহহীন থাকবে না। সরকার সব ভূমিহীন, গৃহহীন মানুষকে ঘর তৈরি করে দেবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে চলতি বছরের ১৭ মার্চ থেকে আগামী ২০২১ সালের ১৭ মার্চ পর্যন্ত সময়কে সরকার মুজিববর্ষ ঘোষণা করে। এই সময়ের মধ্যেই এসব ঘর নির্মাণ কাজ শেষ করতে চায় সরকার।

জানা গেছে, সরকারের তিনটি কর্মসূচির আওতায় দেশের ভূমিহীন ঠিকানাহীন মানুষদের ঘর তৈরি করে দেওয়ার কাজ করছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের আওতায় দুর্যোগ সহনীয় বাড়ি প্রকল্প। ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতায় গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্প-২। এর বাইরে আমার বাড়ি, আমার খামার প্রকল্পও রয়েছে। তবে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থা যৌথভাবে গৃহহীনদের জন্য নেওয়া এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। প্রতিটি জেলার জেলা প্রশাসকরা মাঠ পর্যায়ে প্রকল্পের অগ্রগতি তদারকি করবেন। অনেক আগে থেকেই এই তিনটি প্রকল্পের মাধ্যমে নদীভাঙন পরিবার, বেদে পরিবার ও হিজড়াসহ বিভিন্ন কারণে যারা ভূমিহীন ও গৃহহীন হয়েছেন তাদের ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যেই এসব প্রকল্পের অনেক বাড়িঘর সংশ্লিষ্টদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আবার অনেক বাড়ি হস্তান্তরের প্রক্রিয়ায় রয়েছে।

উল্লেখ্য, দুর্যোগ সহনীয় বাড়ি প্রকল্পের আওতায় নদীভাঙনে যারা ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে এমন পরিবারসহ দেশের বেদে ও হিজড়াদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে ১৭ হাজার পাঁচটি দুর্যোগ সহনীয় ঘর। এসব ঘর তৈরি করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। প্রতিটি ঘর নির্মাণে ব্যয় হয়েছে আড়াই লাখ টাকা। আগামী ১৩ অক্টোবর আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঘরগুলো উদ্বোধন করবেন। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে সম্প্রতি ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের পাঁচ অতিরিক্ত সচিবকে দেশের আট বিভাগের দায়িত্ব দিয়ে আদেশ জারি করা হয়েছে। এসব ঘর উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুত রাখতে সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগের জন্য এই পাঁচ অতিরিক্ত সচিবকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে অফিস আদেশে বলা হয়েছে।

জানা গেছে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ৫০০ বর্গফুটের প্রতিটি ঘরে থাকবে দুটি রুম, একটি করিডোর, একটি বাথরুম ও একটি রান্নাঘর। দুর্যোগ সহনীয় এসব ঘর হবে টেকসই এবং প্রতিটি ঘরেই থাকবে সোলার সিস্টেম আর বজ্রপাত নিরোধক ব্যবস্থা।

মন্ত্রণালয়ের নির্দেশিকা অনুসরণ করে জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টরা সুবিধাভোগীদের নির্বাচন করেছেন। কারও এক বা দুই শতাংশ জায়গা আছে কিন্তু ঘর নেই বা ঘর আছে কিন্তু তা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে, তাদের এই ঘর দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া যে পরিবারে পুরুষ সদস্য নেই বা পুরুষ সদস্য আছে কিন্তু তার বয়স ৬৫ বছরের ওপরে এমন পরিবারকেও ঘর দেওয়া হচ্ছে। এর সঙ্গে নদীভাঙনে যারা ঘরবাড়ি হারিয়েছেন তারাসহ বেদে ও হিজড়ারা তো রয়েছেই। সরকারের টিআর ও কাবিটার বিশেষ বরাদ্দের তিন হাজার কোটি টাকা দিয়ে দরিদ্রদের এক লাখ ২৫ হাজার নতুন ঘর তৈরি করে দেওয়ার প্রথম পর্যায়ে গত বছর দুর্যোগ প্রশমন দিবসে প্রধানমন্ত্রী ১১ হাজার ২৭৩ দুর্যোগ সহনীয় ঘর উদ্বোধন করেন।

জানা গেছে, মুজিববর্ষ উপলক্ষে যে প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে তা আলাদাভাবে বাস্তবায়ন করা হলেও ঘরের নকশা একই হবে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশের বিভাগীয় সদর ও জেলা শহরের স্থায়ী ভূমিহীন বাসিন্দারা এ প্রকল্পে কর্মসূচির আওতায় সরকারের দেওয়া ঘর পাবেন না। ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে ভূমিহীন পরিবার রয়েছে ২ লাখ ৯২ হাজার ২৮৩টি। এসব ভূমিহীন পরিবার এই ঘর পাবেন। জমি আছে, কিন্তু ঘর নাই দেশে এমন পরিবারের সংখ্যা ৫ লাখ ৮৯ হাজার ৭৫০টি। এসব পরিবারকেও ঘর তৈরি করে দেওয়া হবে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, শহরে বা শহরের কাছাকাছি সুবিধামতো জায়গায় যেখানে খাসজমি নাই, সেখানে বহুতল ভবন করে ফ্ল্যাটের মাধ্যমে পরিবারগুলোকে পুনর্বাসন করা হবে। আর শহরের বাইরে যারা আছেন তাদের প্রত্যেককেই বাড়ি করে দেওয়া হবে। ভূমিহীনদের পরিবারকে ২ শতাংশ জায়গার ওপর দুটি শোবার ঘর, একটি বারান্দা, একটি রান্নাঘর ও একটি বাথরুম সংবলিত ঘর করে দেওয়া হবে। আর যাদের জায়গা আছে, ঘর নেই তাদেরও একই ধরনের ঘর করে দেওয়া হবে। উপরে রঙিন টিন এবং নিচে পাকা অর্থাৎ সেমি-পাকা প্রত্যেকটি ঘরের জন্য সরকার বরাদ্দ রেখেছে এক লাখ ৭১ হাজার টাকা। নির্দেশনায় বলা আছে, সরকারের খাসজমিতে ভূমিহীনদের জন্য বাড়ি করা হবে। তবে কোনও এলাকায় খাসজমি পাওয়া না গেলে সেখানে প্রয়োজনে জমি অধিগ্রহণ করে জেলা প্রশাসক এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবেন।

এ বিষয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান জানিয়েছেন, দেশের একটি মানুষও গৃহহীন থাকবেন না। এমন ব্রত নিয়েই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছি। গৃহহীনকে ঘর করে দেওয়ার বেশ কয়েকটি প্রকল্পের বাইরে এটি একটি প্রকল্প, যা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে নেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী চান দেশে কোনও মানুষ গৃহহীন থাকবে না। সবার মাথা গোঁজার ঠাঁই হবে।

উল্লেখ্য, সরকার ২০১৬ সালে জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে কোন জেলায় কতজন ভূমিহীন, গৃহহীন ও জমি আছে ঘর নেই—এমন মানুষের তালিকা তৈরি করে। ৬৪ জেলার জেলা প্রশাসকদের পাঠানো তথ্য মতে ওই সময় পর্যন্ত দেশে ১৬ লাখ ৬৩ হাজার মানুষ ছিলেন যারা ভূমিহীন, গৃহহীন এবং জমি আছে কিন্তু ঘর নেই। ওই তালিকা থেকেই এখন সুবিধাভোগী চিহ্নিত করা হয়েছে। এদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো সর্বশেষ যে কৃষিশুমারি করেছে সেখানে বলা হয়েছে, দেশে খানার সংখ্যা ৩ কোটি ৫৫ লাখ। এদের মধ্যে কোনও ধরনের জমি নেই বা ভূমিহীন খানার সংখ্যা ৪০ লাখ ৩০ হাজার। ২০১৯ সালের ৯ জুন থেকে ২০ জুন পর্যন্ত সারাদেশে এই জরিপ পরিচালনা করে বিবিএস।


বিভাগ : বাংলাদেশ