শিশুর প্রতিভা বিকাশের অন্যতম মাধ্যম খেলাধুলা

২০ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৯:১৯ পিএম | আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২৪, ০২:২২ পিএম


শিশুর প্রতিভা বিকাশের অন্যতম মাধ্যম খেলাধুলা

টাইমস স্পোর্টস ডেস্ক:

খেলাধুলা হলো শিশুর শারিরিক শক্তি ও মানসিক চিন্তা চেতনা বুদ্ধিমত্তা বিকাশের অন্যতম মাধ্যম। পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন রকমের খেলাধুলা শিশু কিশোরদের মনস্তাত্তিক পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। দিন দিন শিশু কিশোর যেন বিদ্যার একেক জাহাজে পরিণত হচ্ছে।

ডিজিটাল যুগে শিশু কিশোরদের অধিকাংশ ভাগ স্কুল কলেজ, কোচিং এ ব্যস্ত সময় কাটায়, বন্ধুত্বের সাথে আড্ডায় থাকে কিংবা প্রযুক্তিপণ্যে ব্যবহারে সময় অবিবাহিত করে। সকালে স্কুল কিংবা কলেজের ক্লাস আর সূর্যের শেষ বিকেলের আলো যখন নিভু নিভু হয়ে পশ্চিম আকাশে হারাতে যায় তখনও যেন একটু অবসর নেই কোমলমতি শিশু কিশোরদের।

পড়ন্ত বিকেল হলেই শুরু হয় ব্যাগ নিয়ে কোচিং এ ছুটাছুটি। সুস্থ দেহ প্রশান্ত মন কর্মব্যন্ত সুখী জীবন তখনই গঠন হয় যখন পড়ালেখার পাশাপাশি সুযোগ হয় খেলাধুলা করার। খেলাধুলার করার ফলে শিশু কিশোরদের দৈহিক ও মানষিক চিন্তার পরিবর্তনের নদীতে আসে নব জোয়ার। যে জোয়ারে ভেসে যায় দু:খ গ্লানি, একাকিত্ত্ব ও ক্লান্তির চাপ।

প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনার পাশাপাশি কোমলমতি শিশু কিশোরদের জন্য প্রয়োজন খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করা। খেলাধুলা করার ফলে শিশু কিশোরদের মনে সমষ্টিগত দলবদ্ধ ভাবে কাজ করার মনমানসিকতা তৈরি হয়। পড়াশোনার পাশাপাশি শিশু কিশোররা যদি পর্যাপ্ত খেলাধুলা করে তাহলে প্রত্যেকের মানসিক চিন্তার বিকাশ সাধন হবে। খেলাধুলা ও সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমেই শিশুর ভেতরের সুপ্ত প্রতিভা জাগিয়ে তুলতে হবে। জাগিয়ে তুলতে হবে শিশুদের কচি মনে হাজারো স্বপ্ন, হাজারো গল্পের বুনন। হাজারো স্বপ্ন হারিয়ে যাচ্ছে পড়ালেখার চাপ আর মাঠশূণ্য নগর জীবনে।

খেলা শিশু কিশোরদের কচি মনের পরিবর্তনে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। মাঠ কিংবা খোলা জায়গার অভাবে শিশু কিশোররা পারছেনা খেলাধুলা করতে। খেলাধুলা চিত্তবিনোদন ও আনন্দের খোরাক। চিত্তবিনোদন শূণ্যতায় অল্প বয়সেই বিভিন্ন অপরাধ চক্রে জড়িয়ে যাচ্ছে কোমলমতি শিশুরা। খেলাধুলা না করায় বর্তমানে সময়ের শিশুকিশোররা তাদের সময়গুলো পার করে থাকে আড্ডায়, টিভি, কম্পিউটার কিংবা ভিডিও গেমসে। প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে যাওয়ায় নিজের মাঝে নিজেকেই গুটিয়ে নেয় একটি শিশু কিংবা কিশোর। নিজেই তৈরি করে নেয় আলাদা এক জগৎ। যে জগতের শিশুর সহজ সরল জীবনকে ধংস করে দিতে বাধ্য।

সুস্থ দেহ সবল মন গড়তে খেলাধুলার প্রয়োজন। যদি কেউ সুস্থ দেহ ও সবল মন চায় তাহলে খেলাধুলার কোন বিকল্প নেই। খেলাধুলাই একমাত্র সঠিক ব্যক্তিত্ব বিকাশ, সুস্থ শরীর গঠনে ও মানষিক বিকাশে কার্যকরী ভুমিকা পালন করে। একটি শিশু বিভিন্ন মাধ্যম থেকে বিনোদন খুঁজে। তবে বর্তমানে শিশুদের সবচেয়ে বড় বিনোদনের কেন্দ্র বিন্দু হল খেলাধুলা। খেলাধুলার মাধ্যমে শিশুদের মধ্যে ভাতৃত্ববোধ ও সম্প্রীতির সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। চিন্তার শক্তি বৃদ্ধি পায় যা তার মনে অনেক বড় হওয়ার স্বপ্ন জাগায়, প্রতিভা বিকাশে সহায়তা করে।

শিশুকে সুস্থভাবে বেড়ে ওঠার জন্য খেলাধুলার কোনো বিকল্প নেই। খেলাধুলা মনে স্বাচ্ছন্দ্য আনে, দেহে প্রশান্তি ঘটায়। পরিচ্ছন্ন বিনোদন ও খেলাধুলায় যে শিশু বেড়ে ওঠে তার পক্ষে সফল মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠা সম্ভব। আবার অপরিচ্ছন্ন বা কুয়াশাচ্ছন্ন বিনোদনে বেড়ে ওঠা শিশুর জীবন ধ্বংস হতে বাধ্য। এ কারণে বলা হয়, শিশু বয়সে মানুষ যা গ্রহণ করে পরবর্তী জীবনে সে তা লালন করে। আমরা আমাদের দেশকে আলোকিত ও পরিচ্ছন্ন মানুষে ভরপুর করে গড়ে তুলতে চাই, এর জন্য দরকার সুস্থ-সুন্দর সহজলভ্য খেলাধুলা ও বিনোদন ব্যবস্থা।

খেলাধুলা শিশুদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। খেলাধুলার মাধ্যমেই একটি শিশুর শারিরীক, মানসিক ও ব্যক্তিত্বের বিকাশ সাধিত হয়।

(১). ব্যক্তিত্ব বিকাশ: খেলাধুলার মাধ্যমে একটি শিশু আরেক জনের সাথে পরিচিত হয়। একে অপরের সহচার্যে আস্তে আস্তে তারা নিজেদের মধ্যে সু-সম্পর্ক গড়ে তুলে। এর ফলে শিশুদের মধ্যে ভাল ব্যক্তিত্ব গড়ে ওঠে।
(২). সুস্থ শরীর গঠনে: প্রতিদিন খেলাধুলার মাধ্যমে আস্তে আস্তে শিশুদের শরীর শক্ত হতে থাকে। এসময় শিশুদের হাড় ও মাসেলস শক্তিশালী হয় ও তারা আরো দ্রুত বেড়ে ওঠে। খেলাধুলার মাধ্যমে তাদের শরীর স্বাভাবিক ভাবেই শক্তিশালী ও সুদৃঢ় হয়। প্রতিনিয়ত খেলাধুলা করলে শিশুদের উদ্দিপনা ও কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি পেতে থাকে।
(৩). বিনোদনের উৎসহ হিসেবে: সবাই বিনোদন খুঁজে। আর শিশুদের মধ্যে বিনোদনের চাহিদাটা আর একটু বেশি। তবে বর্তমানে যত রকমের বিনোদন মাধ্যম রয়েছে তার মধ্যে খেলাধুলা অন্যতম। খেলাধুলা একটি শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ সাধন করে। শিশুর জন্য খেলাধুলা বিনোদনের খোরাক হিসেবে কাজ করে। একটি ছোট শিশুর কাছে খেলাধুলার চাইতে আরো বড় বিনোদন আর কি হতে পারে।
(৪). ভাল আচরণ গঠনে: খেলাধুলা মানুষকে পুর্ণঙ্গ আচরণ শিক্ষা দেয়। এটা শিশুর ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম নয়। খেলাধুলা একটি শিশুকে শিক্ষা দেয় কিভাবে ভাল আচরণ করতে হয়? কিভাবে প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়ের সাথে ভাল ব্যবহার করতে হয়। হার ও জিতকে সহজে কিভাবে মেনে নেওয়া যায় তাও খেলাধুলার মাধ্যমেই একটি শিশু শিখে থাকে। তাই ভাল আচরণ গঠনে খেলাধুলার বিকল্প নেই।

শিশুকিশোরেরা এগিয়ে যাবে ক্ষিপ্র গতির ভোরের আলোয় ছুটে চলা অশ্বারোহীর মত। পড়ালেখার পাশাপাশি খেলাধুলা শিশু কিশোরের কোমল মনে তৈরি করে ভাল কিছু করার মনমানসিকতা। তারা যদি সুন্দর মনের অধিকারী হয় তাহলে তাদের কর্ম দিয়ে, চিন্তা চেতনার পরিবর্তনে পাল্টে দিবে আমাদের এই দেশ। শিশু কিশোরদের কচিহাত একসময় দায়িত্ব নিবে আর তাদের বিচার বুদ্ধি কর্মে এগিয়ে যাবে আমাদের দেশ প্রিয় বাংলাদেশ।


বিভাগ : খেলা


এই বিভাগের আরও