শিবপুরে ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে সরকারি চাকুরী গ্রহণের অভিযোগ

১৭ এপ্রিল ২০১৯, ০৬:০৭ পিএম | আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৯ এএম


শিবপুরে ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে সরকারি চাকুরী গ্রহণের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
নরসিংদীর শিবপুরে ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে কাজী মো: আহসান উল্লাহ নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক (এফপিআই) পদে চাকুরিতে যোগদানের অভিযোগ ওঠেছে। কাজী মো: আহসান উল্লাহ বি-বাড়ীয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার সোনারামপুর ইউনিয়নের চরশিবপুর গ্রামের কাজী খলিলুর রহমান ছেলে।
তার জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম্বার ১৯৮৬১২১০৪৮৩১৪৪৩৯৫, চরশিবপুর মধ্যপাড়া অংশের ভোটার, যার এরিয়া কোড নং ১১০৩, ভোটার সিরিয়াল নং ১৯০, ভোটার নং ১২১১০৩১৪৪৩৯৫ গোপন করে নরসিংদীর শিবপুরের চক্রধা ইউনিয়নের কানাহোটা গ্রাম ব্যবহার করার তথ্য ফাঁস হয়েছে।

প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে সে তার চাকরির আবেদনে স্থায়ী ঠিকানা শিবপুর উপজেলার চক্রধা ইউনিয়নের কানাহোটা গ্রাম ব্যবহার করে আবেদন করলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তার আবেদন যথাযথভাবে যাচাই বাছাই করেনি বলে অভিযোগ উঠেছে।

এসব তথ্য প্রকাশ হওয়ার পর পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক পদে অনুষ্ঠিত ওই নিয়োগ পরীক্ষায় কাজী মো: আহসান উল্লাহ’র নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী সুমন খান কাজী মো: আহসান উল্লাহসহ পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও সংশ্লিষ্ট নিয়োগ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেছেন।
উক্ত রিটে বিচারপতি জে.বি.এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের একটি বেঞ্চ ভুয়া ঠিকানা ব্যবহারকারী কাজী মো: আহসান উল্লাহকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না? এই মর্মে গত ১ এপ্রিল রুল জারি করেন। রুলে নিয়োগে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদেরকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ জবাব দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

জেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরাধীন নরসিংদী জেলা কার্যালয় থেকে স্মারক নং-জেপপ/নর/২০১৫/৪৬৩, তাং ২২/০৬/২০১৫ ইং তারিখে জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিক পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করেন তৎকালীন উপ-পরিচালক এস.এম আনোয়ার হোসেন। বিজ্ঞপ্তিতে রাজস্ব খাতভুক্ত শূন্য পদসমূহে অস্থায়ী ভিত্তিতে লোক নিয়োগের জন্য নরসিংদী জেলার স্থায়ী নাগরিকদের নিকট হতে শর্তসাপেক্ষে নির্ধারিত ফরমে দরখাস্ত আহবান করা হয়। উক্ত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে একমাত্র সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের স্থায়ী বাসিন্দারাই আবেদন করতে পারবেন বলে উল্লেখ করা হয়।

এছাড়া বিজ্ঞপ্তির শর্তের ১২ নং এ উল্লেখ রয়েছে, স্থায়ী বাসিন্দার ক্ষেত্রে কোন প্রকার ক্রুটি-বিচ্যুতি পরিলতি হলে বা প্রমাণিত হলে তা বাতিল বলে গন্য হবে। কিন্তু কাজী মো: আহসান উল্লাহ তার স্থায়ী ঠিকানা গোপন রেখে শিবপুর উপজেলার চক্রধা ইউনিয়ন পরিষদের কানাহোটা গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা উল্লেখ্য করে পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক (এফপিআই) পদে আবেদন করেন।
দীর্ঘ ৩ বছর পর ২০১৮ সালের ২৩ মার্চ উক্ত পদের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় এবং ১৫ এপ্রিল লিখিত পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করে ৫ জন প্রার্থীকে উর্ত্তীণ দেখিয়ে ১৫ মে মৌখিক পরীা আহবান করেন নিয়োগ কর্তৃপক্ষ। ১১ অক্টোবর ২০১৮ইং কাজী মো.আহসান উল্লাহকে চুড়ান্তভাবে নিয়োগ প্রদান করা হয়। যাহার নিয়োগপত্রে পরিচালক ব্রজ গোপাল ভৌমিক (অতিরিক্ত সচিব), পরিবার পরিকল্পনা ঢাকা বিভাগ স্বারিত হয়, যার ঢাকা বিভাগীয় পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় আজিমপুরের স্মারক নং ৮ (নর-নিয়োগ)-২৫/২০১৮/৬২৬, তাং ১১/১০/২০১৮ইং।
নিয়োগ পত্র প্রদান করার পর ভূয়া ঠিকানা ব্যবহারকারী কাজী মো.আহসান উল্লাহ ১৬/১০/১৮ইং তারিখে শিবপুর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার অধীনে চক্রধা ইউনিয়নে যোগদান করেন। যোগদানের এক মাস পর স্থানীয় বাসিন্দারা কেউ তাকে না চেনায় বিষয়টি প্রকাশ পায় ।
এ প্রেক্ষিতে কাজী মো: আহসান উল্লাহ তড়িঘড়ি করে ডিসেম্বর মাসে চক্রধা ইউনিয়নের কানাহোটা গ্রামের তার এক আত্মীয়’র কাছ থেকে কিছু সম্পত্তি দানে গ্রহণ করেন। পরে তার স্থায়ী ঠিকানা শিবপুর উল্লেখপূর্বক পুলিশ ভেরিফিকেশন নেওয়ার জন্য বিভিন্ন প্রভাবশালী লোকজন দিয়ে বিশেষভাবে তদবির চালান।
চাকুরীর নিয়োগপত্রের শর্তাবলীর ৯ নাম্বারে উল্লেখ রয়েছে যোগদানের সময় জাতীয় পরিচয়পত্রের মূলকপি সঙ্গে আনতে হবে এবং শর্তের ২ নং এ বলা আছে চুড়ান্তভাবে নির্বাচিত প্রার্থীদের স্থায়ী ঠিকানা ও অন্যান্য সনদপত্র ভুল/অসত্য প্রমাণিত হলে নিয়োগ বাতিল বলে গন্য হবে।
এছাড়া শর্তাবলী ৪ নাম্বারে উল্লেখ রয়েছে স্থানীয় বাসিন্দা হিসাবে পুলিশ ভেরিফিকেশনে অযোগ্য প্রমাণ হলে নিয়োগ বাতিল বলে গণ্য হবে।
নাম প্রকাশের অনুচ্ছুক জেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসের এক কর্মকর্তা জানান, যোগদানের সময় সে তার জাতীয় পরিচয়পত্র জমা না দিয়ে জমা দিয়েছেন একটি জন্মনিবন্ধন সনদ। চাকুরীর নিয়োগপত্রের শর্তাবলীর ৯ নাম্বারে বলা আছে যোগদানের সময় জাতীয় পরিচয়পত্রের মূলকপি দেখাতে হবে উল্লেখ থাকলেও কাজী মো: আহসান উল্লাহ যোগদানের সময় শিবপুর উপজেলা পরিবার পরিকল্পা অফিস কেন তার জাতীয় পরিচয়পত্রের পরিবর্তে জন্মনিবন্ধন গ্রহণ করেন তা রহস্যজনক।

এ ব্যাপারে শিবপুর পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের কমিশনার বাদল মিয়া বলেন, কাজী আহসান উল্লাহ তার এক আত্মীয়কে সাথে নিয়ে আমার বাড়ীতে এসেছিলেন। আমি তাকে যেন কানাহোটা গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা হিসাবে একটি প্রত্যয়নপত্র দিয়ে দেই। যেহেতু সে এই গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা নয় এবং আমিও তাকে চিনি না, তাই আমি তাকে প্রত্যয়নপত্র দেইনি।

চক্রধা ইউনিয়ন পরিষদ পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বেনজির আহম্মেদ বলেন, আমি শুনেছি কাজী আহসানল্লাহ নামে এক ব্যক্তি আমার ইউনিয়নের কানাহোটা গ্রামের ঠিকানা ব্যবহার করে সরকারী চাকুরী করছেন। তবে আমার জানামতে কাজী মো: আহসান উল্লাহ উক্ত গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা নন।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত কাজী আহসান উল্লাহ বলেন, নাগরিক পরিচয়পত্র না থাকায় আমি জন্ম সনদ দিয়ে আবেদন করেছি, জাতীয় পরিচয়পত্র দেশের যেকোন স্থান থেকে করা যায়। আমি এটা পরিবর্তনের জন্য আবেদন করেছি। আমার কাগজপত্র যদি স্বপক্ষে থাকে তাহলে আমার চাকুরি থাকবে বলে আমি আশাবাদী।

নরসিংদী পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক অরবন্দি দত্ত বলেন, যেহেতু বিষয়টি হাইকোর্ট এ রিট করা হয়েছে, সেহেতু হাইকোর্টের সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত। এখানে আমার কোন এখতিয়ার নেই।



এই বিভাগের আরও