নরসিংদীতে বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটারে বাড়ছে গ্রাহক অসন্তোষ 

২৪ জুন ২০১৯, ১১:৪৬ এএম | আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ১০:০০ এএম


নরসিংদীতে বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটারে বাড়ছে গ্রাহক অসন্তোষ 

নিজস্ব প্রতিবেদক:
নরসিংদীতে পল্লী বিদ্যুতের পোস্ট পেইড মিটার খুলে নিয়ে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের ফলে ভোগান্তি বেড়েছে বলে অভিযোগ করছেন গ্রাহকরা। এতে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল খরচ, বাড়তি মিটার ভাড়া, ডিমান্ড চার্জসহ সহ নানান ভোগান্তি বাড়লেও গ্রাহকের ইচ্ছের বিরুদ্ধেই মিটার স্থাপন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ গ্রাহকদের। এতে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে গ্রাহকদের মধ্যে।
তবে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তারা বলছেন, প্রিপেইড মিটারে ৩০ টাকা বাড়তি মিটার ভাড়া ছাড়া গ্রাহকদের আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কোন সুযোগ নেই। বিদ্যুৎ ব্যবহারের তারতম্যের কারনেই বিল কমবেশি হয়ে থাকে।


পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ও গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সারাদেশের ন্যায় নরসিংদীতেও বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটার স্থাপন শুরু করেছে নরসিংদী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ ও ২। গ্রাহকদের আগ্রহ না থাকলেও বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্থাপন করা হচ্ছে এসব মিটার। এরই মধ্যে ২০ হাজার প্রিপেইড মিটার স্থাপন করেছে নরসিংদী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ ও ১৭ হাজার মিটার স্থাপন করেছে নরসিংদী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২। এসব মিটার স্থাপনের ফলে আগের তুলনায় বাড়তি বিদ্যুৎ বিল খরচ, অতিরিক্ত ৩০ টাকা মিটার ভাড়া ও পর্যাপ্ত রিচার্জ সুবিধা না থাকার অভিযোগ গ্রাহকদের। সময়মতো রিচার্জ করতে না পারায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার অভিযোগও রয়েছে অনেকের। এসব নতুন বিড়ম্বনার কারণে প্রিপেইড মিটারের প্রতি অনাগ্রহী সবধরণের গ্রাহকরা। বাড়তি খরচের কারণে এসব মিটার এখন গলার কাটা হয়ে দাড়িয়েছে বলে অভিযোগ সাধারণ গ্রাহকদের। সাধারণ ও নি¤œবিত্ত গ্রাহকরা বাড়তি বিদ্যুৎ বিল পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছেন।
লাগানো এসব প্রিপেইড মিটার খুলে নেয়ার দাবী জানাচ্ছেন গ্রাহকরা। এ নিয়ে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখালেখির মাধ্যমে প্রতিবাদ জানানোসহ মানববন্ধনও করেছেন সাধারণ গ্রাহকরা। প্রিপেইড মিটারে বিদ্যুতের বাড়তি খরচ হওয়ায় জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে বলে জানান তারা।
গ্রাহকদের দাবি, লাগানো এসব প্রিপেইড মিটারে যদি ট্যারিফ প্ল্যান ও স্ল্যাব পূর্বের মতো একই রকম থাকতো তাহলে হঠাৎ করেই বিদ্যুৎ বিল এতো বেশি হতো না। প্রিপেইড মিটারে আগ্রহ থাকলেও বাড়তি বিলের আশংকায় বেড়েই চলেছে গ্রাহক অসন্তোষ। অতিরিক্ত বিল ও মিটার ভাড়া লাঘব করে বিদ্যুৎ বিল ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ করণের দাবি জানিয়েছেন গ্রাহকরা।


শিবপুর উপজেলার ভরতেরকান্দি এলাকার গ্রাহক মো: জাকির হোসেন বলেন, আমার বাসায় ভাড়াটিয়াদের ব্যবহারের জন্য ১২টি মিটার লাগানো হয়। বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের ঝামেলা কম হবে মনে করেছিলাম। এখন দেখছি এসব মিটার বাড়তি টাকা কাটার মেশিন। দুই থেকে তিনগুন বাড়তি বিল খরচ হওয়ায় সব ভাড়াটিয়ারা এখন হতাশ। তারা মিটার না খুলে দিলে বাসা ছেড়ে দেবেন বলে জানাচ্ছেন।


নরসিংদী শহরের পশ্চিম ব্রা‏হ্মন্দী মহল্লার ভাড়াটিয়া সবুজ আহমেদ বলেন, প্রিপেইড মিটারে প্রযুক্তিগত সুবিধা বেশি থাকলেও বাড়তি টাকার কারণে আমরা অসন্তুষ্ট। আগে পোস্ট পেইড মিটারের আমার বিল হতো ১ হাজার থেকে ১১ শত টাকা। এখন ১৬ থেকে ১৭/১৮ শত টাকায় মাস পার হচ্ছে না।


একই এলাকার ব্যবসায়ী আব্দুল করিম বলেন, প্রিপেইড মিটার ব্যবহারে আগে যেখানে বিল আসতো ১১ শত ১২ শত টাকা এখন আসে ১৭/১৮ শত টাকা। বিদ্যুতের ব্যবহার কিন্তু বাড়েনি বরং বিদ্যুৎ ব্যবহারে আরও মিতব্যয়ী হয়েছি।


নরসিংদী পল্লী বিদ্যু সমিতি ১ ও ২ এলাকার হাজারো গ্রাহকের অভিযোগ একই ধরণের হলেও এসব মানতে নারাজ পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ।
যোগাযোগ করা হলে নরসিংদী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর জেনারেল ম্যানেজার মো: ইউসুফ বলেন, কিছুটা বাড়তি মিটার ভাড়া ছাড়া কোনপ্রকার অসুবিধা নেই এই প্রিপেইড মিটারে। কেউ কেউ না বুঝেই নানা অপপ্রচার চালাচ্ছেন। এতে গ্রাহকদের মধ্যে এসব ভ্রান্ত ধারণার সৃষ্টি হয়েছে। প্রিপেইড এবং পোস্টপেইড মিটারের ট্যারিফ প্লানটা একই, এখানে বিল বেশি হওয়ার কোন সুযোগ নাই। শুধুমাত্র প্রিপেইড মিটারটি উন্নত প্রযুক্তির ও মানসম্পন্ন হওয়ায় এবং তা ১০ বছরের মধ্যে নষ্ট হলে বিনামূল্যে পরিবর্তনের সুযোগ দেয়া হচ্ছে বিধায় মিটার ভাড়া ১০ টাকার জায়গায় ৪০ টাকা।
রিচার্জ না করা হলে ছুটির দিন অথবা সকালে রাতে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এটা একেবারেই ভিত্তিহীন। অফিস টাইমের আগে পরে বা ছুটির দিনে কোন অবস্থায় টাকা না থাকলেও বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয় না।



এই বিভাগের আরও