নরসিংদীতে ৭ মাসে ৩৮ জন শিশু ধর্ষণের শিকার : উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা

২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৫:২২ এএম | আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:২০ পিএম


নরসিংদীতে ৭ মাসে ৩৮ জন শিশু ধর্ষণের শিকার : উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা
আসাদুজ্জামান রিপন নরসিংদীতে আশংকাজনকহারে বাড়ছে শিশু ধর্ষণের ঘটনা, এমন কী হত্যার শিকারও হচ্ছে শিশুরা। রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে নিজ ঘরেও যেন নিরাপদ নয় শিশুরা। এতে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে নির্যাতনের শিকার শিশুরা, উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছেন অভিভাবকরা। এসব ঘটনায় প্রয়োজনীয় আইনী পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ। স্থানীয়রা জানান, গত ২৪ জুলাই জেলার পলাশ উপজেলার ধনাইর চর গ্রামে ৬ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের পর গলাটিপে হত্যার ঘটনা ঘটে। এর আগে গত ১৪ জুলাই একই উপজেলার টান চলনা গ্রামে বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে ধর্ষণের শিকার হয় ৫ম শ্রেণির এক ছাত্রী। এছাড়া জুলাই মাসের শুরুর দিকে বাড়ির পাশে খেলা করতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হয় আরও ১ শিশু। শুধু একমাসের মধ্যেই পলাশ উপজেলায় ঘটে যাওয়া তিন শিশু ধর্ষণের মতো-ই জেলার আরও ৫ উপজেলায়ও আশংকাজনক হারে বাড়ছে শিশু ধর্ষণের ঘটনা। এমন কী হত্যার শিকারও হয়েছে একাধিক শিশু। ছয়টি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা দায়ের হলেও, অনেক ঘটনা-ই থেকে যাচ্ছে অগোচরে। সামাজিক মর্যাদাহানির আশংকায় ভুক্তভোগীদের অনীহা ও সামাজিক মীমাংসার নামে অনেক ক্ষেত্রে ধর্ষণের ঘটনায় মামলা দায়ের না হওয়ায় আইনের আওতায় আসছে না অপরাধীরা। এতে ওঠে আসছে না শিশু নির্যাতনের প্রকৃত পরিসংখ্যানও। জেলাজুড়ে নিজ ঘর থেকে খেলার মাঠ, রাস্তাঘাট কোথাও যেন নিরাপদ নেই শিশুরা। নির্যাতনের শিকার হয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে শিশুরা। আশংকাজনক হারে শিশু ধর্ষণের ঘটনা বাড়ায় আতংকগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন অভিভাবকরা। নরসিংদী সদর হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসি সেল (ওসিসি) এর তথ্যমতে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত (৭ মাসে) জেলায় ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৫৯টি। এরমধ্যে ২১ জন নারী ও ৩৮ জন শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার পাশাপাশি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত এসব নারী ও শিশুদের মানসিক পরিসেবা দিয়েছে ওসিসি। স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা মাদারস ডেভেলেপমেন্ট সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক ফাহিমা খানম বলেন, প্রায় প্রতিটি শিশু নির্যাতনের ঘটনায় দেখা গেছে নির্যাতনকারীরা প্রভাবশালী পরিবারের হয়ে থাকে। পক্ষান্তরে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে দরিদ্র ও অসচেতন পরিবারের শিশুরা। সেক্ষেত্রে তারা আইনের আশ্রয় নেয়ার ব্যাপারে খুব একটা সচেতন নন। কোনভাবে মামলা দায়ের হলেও এসব পরিবার থাকেন চাপের মুখে। অনেকে ভয়ে মামলা না করেই আপস করে ফেলেন। ব্র্যাক নরসিংদী শাখার মানবাধিকার ও আইন সহায়তা কর্মসূচীর কর্মকর্তা মো: আবু সাঈদ বলেন, সাম্প্রতিক শিশু নির্যাতনের ঘটনা উদ্বেগজনক। ইন্টারনেটের যথেচ্ছ্য ব্যবহার ও সামাজিক অবক্ষয়ের কারণে জেলাজুড়ে শিশু ধর্ষণের ঘটনা বাড়ছে বলে মনে হচ্ছে। তাছাড়া পারিবারিক অসচেতনতা ও নিরাপত্তাহীনতাও রয়েছে। এসব ঘটনায় অনেকে সামাজিকভাবে নিগৃহিত হবার ভয়ে আইনের আশ্রয় নিতে অনিহা প্রকাশ করেন। নরসিংদীর পুলিশ সুপার সাইফুল্লাহ আল মামুন বলেন, প্রতিটি ধর্ষণের মামলায় পুলিশ আসামীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসছে এবং যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে অভিযোগপত্র দেয়া হচ্ছে। আশা করি উপযুক্ত শাস্তি পাবে আসামীরা। তবে শিশু ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে যাওয়া উদ্বেগজনক। এসব শিশু নির্যাতন রোধে পরিবার ও সমাজে শিক্ষা ও সচেতনতা বাড়াতে হবে।


এই বিভাগের আরও