নরসিংদীর চরাঞ্চলে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষ

২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৯:৪৬ এএম | আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৩৭ এএম


নরসিংদীর চরাঞ্চলে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষ
আসাদুজ্জামান রিপন নরসিংদীর চরাঞ্চলে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে পানির ওপরে ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষ। এ পদ্ধতিতে পরীক্ষামূলকভাবে দুই কৃষকের সফলতা পাওয়ার পর চরাঞ্চলে ভাসমান সবজি চাষে নতুন সম্ভাবনার স্বপ্ন দেখছেন অন্যান্য কৃষকরাও। কৃষি বিভাগ বলছে বর্ষা মৌসুমে ভাসমান সবজি চাষ বাড়ানোর মাধ্যমে কৃষকদের স্বাবলম্বী করে তোলার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। কৃষি কর্মকর্তা ও সরেজমিন গিয়ে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্ষা মৌসুমে নরসিংদী সদর উপজেলার চরাঞ্চলের চার ইউনিয়নের বেশিরভাগ জমি-ই পানিতেই তলিয়ে থাকে। নির্দিষ্ট সময়ে ধান ছাড়া চাষ করা যায় না কোনধরণের সবজি। পরীক্ষামূলকভাবে নজরপুর ইউনিয়নের আলিপুর গ্রামের কৃষক হেলাল খানের ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষ পাল্টে দিয়েছে সে দৃশ্যপট। [caption id="attachment_2775" align="alignnone" width="1024"] নরসিংদীর চরাঞ্চলে পানির ওপরে ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষ[/caption] ২০১৬ সালে পানির ওপর ভাসমান বাঁশের মাচায় কচুরিপানা দিয়ে স্তুপ তৈরি করে নানা জাতের সবজি চাষ শুরু করেন কৃষক হেলাল খান। ভাসমান কচুরিপানার এসব স্তুপে লাউ, ধুন্দল, ঝিঙ্গা, চিচিংগা, করলা, শসা, ঢেড়শসহ বিভিন্ন ধরণের সবজির আশাব্যঞ্জক ফলন পাওয়ায় সফল হন তিনি। লাভজনক হওয়ায় চলতি বছরও ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষ বাড়িয়েছেন তিনি। কোনপ্রকার রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ছাড়া জৈব পদ্ধতিতে চাষ হওয়ায় বাড়তি খরচ নেই ভাসমান এ সবজি চাষে। বিষমুক্ত হওয়ায় বাজারে চাহিদা থাকায় বাড়তি দাম পেয়ে লাভবান হচ্ছেন কৃষক হেলাল। কৃষক হেলালের সফলতা দেখে চলতি বছর একই পদ্ধতিতে সবজি চাষ করে সফলতা পান তার ভাই কৃষক কাইয়ুম খানও। সহোদর দুই কৃষকের এ সফলতা ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষে নতুন সম্ভাবনার স্বপ্ন দেখাচ্ছে চরাঞ্চলের অন্যান্য কৃষকদেরও। [caption id="attachment_2774" align="alignnone" width="1024"] নরসিংদীর চরাঞ্চলে পানির ওপরে ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষ[/caption] কৃষক হেলাল খান বলেন, কৃষি জমিগুলো বছরের ৬ মাস পানিতে তলিয়ে থাকায় বেকার বসে থাকতে হতো। কৃষি বিভাগের পরামর্শে বাঁশ দিয়ে ১টি মাচা তৈরি করে তার ওপর ৮/৯ ফুট উচু করে কচুরিপানার স্তুপ (ভাসমান সবজি বেড) তৈরি করি। পঁচে যাওয়া এই স্তুপে বিভিন্ন ধরণের সবজির আবাদ করে ভাল ফল পাই। ১৫ হাজার টাকা ব্যয়ে ১টি বেড থেকে ৭০ হাজার টাকার মতো সবজি বিক্রি করেছি। চলতি বছর ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে আরও ৫টি সবজি বেড তৈরি করেছি এবং আশাব্যঞ্জক ফলন পাচ্ছি। সহোদর কৃষক কাইয়ুম খান বলেন, ভাইয়ের সফলতায় আমিও ভাসমান সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছি। সার ও কীটনাশক খরচ না থাকায় এ পদ্ধতিতে সবজি চাষ লাভজনক। তাছাড়া বিষমুক্ত হওয়ায় বাজারেও বাড়তি দাম ও চাহিদা রয়েছে এসব সবজির। নরসিংদী সদরের নজরপুর ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো: শামীম ভূঁইয়া বলেন, ভাসমান সবজি চাষে দুই কৃষকের সফলতা দেখে এলাকার অন্যান্য কৃষকরাও উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। আগ্রহী এসব কৃষকদেরকে এ পদ্ধতিতে সবজি চাষের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। [caption id="attachment_2773" align="alignnone" width="1024"] নরসিংদীর চরাঞ্চলে পানির ওপরে ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষ[/caption] নরসিংদী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুল হাই বলেন, চরাঞ্চলের কৃষকদের অর্থনৈতিকভাবে লাভবান করার জন্য ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষ বাড়ানোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এ জন্য ন্যাশনাল এগ্রিকালচার টেকনোলজি প্রোগ্রাম (এনএটিপি) এর আওতায় প্রদর্শনী ও কৃষকদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। ২০১৬ সালে নরসিংদী সদর উপজেলায় ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষীর সংখ্যা ছিলো ৫ জন, ২০১৭ সালে ছিলো ২০ জন। চলতি বছর ৫০ জন কৃষক এ পদ্ধতিতে সবজি চাষ করছেন বলেও জানান তিনি।


এই বিভাগের আরও