প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ, অপসারণ দাবি শিক্ষকদের

০৯ অক্টোবর ২০২২, ০৪:২৭ পিএম | আপডেট: ০২ মে ২০২৪, ১০:০৬ এএম


প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ, অপসারণ দাবি শিক্ষকদের

নিজস্ব প্রতিবেদক:

নরসিংদী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শিউলি আক্তারের বিরুদ্ধে শিক্ষক-কর্মচারীদের প্রতি অসদাচরণসহ অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এসব কারণে বিদ্যালয়টির ৪০ জন শিক্ষক মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নিকট প্রধান শিক্ষককে অপসারণের দাবী জানিয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন।

দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, স্বামী কর্তৃক মালামাল ক্রয়ের নামে কাল্পনিক ভাউচারের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন, হিন্দুধর্মীয় শিক্ষার্থীদের শাঁখা খুলে-সিঁদুর মুছে পরীক্ষার হলে প্রবেশের নির্দেশনা প্রদানসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তুলে ধরা হয়েছে এই অভিযোগে। এদিকে বিদ্যালয় পরিচালনায় নিয়মনীতিতে অটল থাকা, শিক্ষকদের ক্লাস ফাঁকি বন্ধ করা ও কড়াকড়ি আরোপ করায় ক্ষোভে এসব মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধান শিক্ষক।   

  

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, প্রধান শিক্ষকের স্বেচ্ছাচারিতা ও মানসিক নির্যাতনের কারণে অতিষ্ট হয়ে পড়েছেন শিক্ষকবৃন্দ ও কর্মচারীরা। প্রধান শিক্ষক এক বছর আগে বিদ্যালয়ে যোগদান করেই ৭/৮ বছর যাবৎ অনলাইন পদ্ধতিতে পাওনাদি আদায়ের পরিবর্তে অফলাইনে পাওনাদি আদায় করে টাকা আত্মসাৎ করে চলেছেন। কেনাকাটার জন্য তাঁর স্বামী মোঃ সাদিউল ইসলামকে নির্দিষ্ট ঠিকাদার বানিয়ে বাৎসরিক আনুসঙ্গিক খরচের সরকারি বরাদ্ধের প্রায় পাঁচ লাখ টাকা সহ বেসরকারি সকল কেনাকাটার নামে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা।

স্বামী সাদিউল-এর কেরানিগঞ্জের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘গ্রীণ মার্ট’ এর নামে বিভিন্ন বইপত্র, সাময়িকী ও বিজ্ঞানাগারের বিভিন্ন মালামাল ক্রয়ের ভাউচার দেখিয়ে কোনো মালামাল না দিয়েই শুধু ভাউচারের মাধ্যমে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন প্রধান শিক্ষক।

 

প্রধান শিক্ষকের কথামত ভুয়া ভাউচার পাশ করাতে সহযোগিতা না করায় বিদ্যালয়ের উচ্চমান সহকারী নাজমা বেগমকে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ওএসডি করে রেখে তাকে কারণ দর্শানের নোটিশ দেয়া হয়। নাজমা বেগম যথাযথ জবাব দেয়ার পরও তাকে তার কার্যক্রম থেকে সরিয়ে রেখেছেন। শ্রেণির পাঠদানে ব্যাঘাত ঘটিয়ে কয়েকজন শিক্ষক দিয়ে কেরানীর কাজ করানো হয়।

প্রধান শিক্ষক অফিস কক্ষে থাকা উচ্চমান সহকারির ব্যবহৃত আলমারীর তালা ভেঙ্গে কাগজপত্র নিজের আয়ত্তে নিয়ে ব্যবহার করেছেন। এ ব্যাপারে নাজমা বেগম জেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর আবেদন করেও কোনো ফল পাননি।

বিদ্যালয়ের হোস্টেলের দ্বিতীয় তলায় দুই কক্ষের মাঝের দেয়াল ভেঙ্গে খরগোশের খামার বানিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। পরবর্তীতে সমালোচনার মুখে খরগোশগুলো অন্যত্র সরিয়ে নেন। ২০২২ সালে ভর্তি ফি হিসেবে ছাত্রী প্রতি ৫০ টাকা করে ‘নগদ’অ্যাপস এর নামে কমিশন আদায় করেন। পরে নগদ টাকা গ্রহণ করে তা আত্মসাৎ করেন প্রধান শিক্ষক।

 

শিক্ষকরা জানান, তিনি শিক্ষকদের মৌখিক নির্দেশ বা চাপ সৃষ্টি করে অযৌক্তিক কর্মকান্ড করতে বাধ্য করেন। তা না হলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের বিরুদ্ধে শোকজ নোটিশ প্রদানসহ বদলির হুমকি দেন।

২০২২সালের এসএসসি পরীক্ষায় বিবাহিত হিন্দু পরীক্ষার্থীদের শাঁখা খোলা ও সিদুঁর মুছে ফেলার কাজ তারই নির্দেশনায় করেন সহকারি শিক্ষক আকিকুন্নাহার। প্রধান শিক্ষক নিজেও বাংলা পরীক্ষার দিনে হিন্দু নারী পরীক্ষার্থীদের শাঁখা খুলে, সিদুঁর মুছে পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢুকতে কঠোর নির্দেশ দেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

 

উচ্চমান সহকারি নাজমা বেগম এর কারণ দর্শানোর লিখিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২১-২২ অর্থ বছরে বিদ্যালয়ের বরাদ্দকৃত বাজেটে মালামাল ক্রয়ের টেন্ডারে প্রধান শিক্ষকের স্বামীর পণ্য সরবরাহকারী কেরানীগঞ্জের প্রতিষ্ঠান “গ্রীনমার্ট” এর অনুকূলে কোন মালামাল ক্রয় না করেই প্রধান শিক্ষক নিজ হাতে বিল তৈরী করে টাকা উত্তোলন শেষে উচ্চমান সহকারি নাজমা বেগমকে মালামালের চালান কপি ও কোন মালামাল না দিয়ে শুধু মালামাল সরবরাহের কার্যাদেশ দিয়ে স্টক রেজিস্টারে মালামালের  বিবরণ লিপিবদ্ধ করতে বলেন। মালামাল ছাড়া স্টক রেজিস্টার লিপিবদ্ধ না করায় প্রধান শিক্ষক তাকে পর পর তিনটি অফিস আদেশ করেন।

১নং আদেশের কার্যক্রম প্রধান শিক্ষক নিজ হাতে সম্পন্ন করেন। ২ ও ৩নং আদেশের কার্যক্রম সম্পন্ন না করে গত ৮ জুন স্কুল ছুটির পর অফিসে উচ্চমান সহকারির ব্যবহৃত আলমারীর তালা ভেঙ্গে সমস্ত রেকর্ড পত্র ও ফাইল নিজের কব্জায় নিয়ে যায়। এছাড়া, প্রধান শিক্ষক টেন্ডারের বিলে সই করেছেন ১৪ মার্চ আর স্টক রেজিস্টারে তা গ্রহণ করে মালামালের এন্ট্রি দিয়েছেন ২৫ এপ্রিল ।

 

ছাত্রী কল্যাণ তহবিল থেকে টাকা উত্তোলন তা ছাত্রীদের না দিয়ে আত্মসাৎ করেছেন বলেও অভিভাবকদের লিখিত অভিযোগ রয়েছে। প্রতিদিনই শিক্ষক ও অন্যান্য কর্মচারীদের অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করেন। ঈদ-উল-আযহার উৎসব ভাতার বরাদ্ধ থাকা সত্বেও নৈশ প্রহরীর উৎসব ভাতার অনুমোদন দেননি। প্রধান শিক্ষকের এসব অনিয়মের কারণে বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশে বিঘ্ন ঘটছে বলে অভিযোগ শিক্ষক কর্মচারীদের।

 

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক শিউলি আক্তার বলেন, এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। আমি নীতি নিয়ে চলি, যদি কোন অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ প্রমাণিত হয় তবে সেসব আমি ফেরত দেব। আপনারা সরেজমিন দেখেন বিদ্যালয়ের আগের পরিবেশ ও বর্তমান পরিবেশ। শিক্ষকরা ঠিকমত ক্লাস করেন না, সঠিকভাবে খাতাও দেখেন না। শিক্ষকদের ক্লাস ফাঁকি দেয়া বন্ধ করাসহ নানা বিষয়ে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য কঠোর হওয়ার কারণেই তারা আমার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করছেন।   

জেলা শিক্ষা অফিসার গৌতম চন্দ্র মিত্র বলেন, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নানান অনিয়মের অভিযোগ উত্থাপন করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে করা আবেদনের অনুলিপি পেয়েছি। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তদন্ত সাপেক্ষে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া আবশ্যক।