বেলাবতে জালিয়াতির কাগজপত্রে কলেজ ছাত্রীকে স্ত্রী দাবি ও তালাক

০৪ আগস্ট ২০১৯, ০৮:৫৪ পিএম | আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২৪, ০৭:২৯ পিএম


বেলাবতে জালিয়াতির কাগজপত্রে কলেজ ছাত্রীকে স্ত্রী দাবি ও তালাক

বেলাব প্রতিনিধি ॥
নরসিংদীর বেলাবতে খায়রুল আলম ওরফে সাব্বির হোসেন নামে এক বখাটের বিরুদ্ধে বিয়ের জালিয়াতির কাগজপত্র তৈরি করে কলেজ ছাত্রীকে স্ত্রী দাবী করার অভিযোগ উঠেছে। পরে সামাজিক চাপের মুখে ওই কলেজ ছাত্রীকে পুণরায় তালাকও প্রদান করা হয়।

নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে বিয়ে ও তালাক উভয় কাজেই ওই কলেজ ছাত্রীর স্বাক্ষর জাল করার অভিযোগ উঠেছে। কলেজ ছাত্রীর অজান্তে এ জালিয়াতির বিয়ে ও অপপ্রচারের ঘটনায় গৃহবন্দী হয়ে পড়ে ছাত্রীটি। অভিযুক্ত সাব্বির পোড়াদিয়া গ্রামের আইয়ুব খানের ছেলে।
বেলাব উপজেলার পোড়াদিয়া গ্রামে সম্প্রতি ঘটা এ ঘটনায় অভিযুক্ত সাব্বিরের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ নিয়েছে ওই কলেজ ছাত্রী ও তার পরিবার।
এ ঘটনায় উক্ত কলেজ ছাত্রী বাদী হয়ে নরসিংদীর বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে খায়রুল আলম ওরফে সাব্বির হোসেন ও তার সহযোগী আবুল কাশেম এবং জাইদুর রহমান ও মোমেন নামে (নোটারি পাবলিক) দুই আইনজীবীর বিরুদ্ধে একটি প্রতারণার মামলা করেছেন।
এছাড়াও ভুয়া বিয়ের মাধ্যমে কলেজ ছাত্রীকে সামাজিকভাবে হেয় করার বিচার চেয়ে নরসিংদীর পুলিশ সুপার ও বেলাব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবরে লিখিত অভিযোগ এবং জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে বেলাব থানায় সাধারণ ডায়রী করেছেন ওই কলেজ ছাত্রী।

মামলার বিবরণ ও অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, প্রায় তিন মাস আগে পোড়াদিয়া গ্রামের আইয়ুব খানের ছেলে খ্য়ারুল আলম সাব্বির একই গ্রামের ওই কলেজ ছাত্রীর বাড়ির বৈদ্যুতিক মিটার পরিবর্তনের কথা বলে ছাত্রী ও তার পিতার দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি ও একটি দরখাস্তে স্বাক্ষর নেয়। পরবর্তীতে গত ৩ এপ্রিল এ ছবি ও স্বাক্ষর স্ক্যানের মাধ্যমে জাল করে দুইশ টাকা মূল্যের নন জুডিসিয়াল ষ্ট্যাম্পে নরসিংদীস্থ একটি নোটারি পাবলিকের কার্যালয়ের মাধ্যমে বিয়ের কাগজপত্র তৈরি করা হয়। এডভোকেট জাইদুর রহমান ও এডভোকেট মোমেন মিয়া কর্তৃক ছাত্রী ও তার পরিবারের অজান্তেই বিয়ের জাল কাগজপত্র তৈরি করা হয় বলে অভিযোগ ছাত্রী ও তার পরিবারটির। পরে নোটারি পাবলিকের বিবাহের ঘোষণা পত্র এলাকায় দেখিয়ে সাব্বির ওই ছাত্রীকে নিজের স্ত্রী দাবি করতে থাকে।


পরিবারটি এ অপপ্রচারের প্রতিবাদ করলে ও সামাজিক চাপের মুখে গত ১৯ মে পুণরায় ছাত্রী কর্তৃক সাব্বিরকে তালাক (জাল স্বাক্ষরে) প্রদানের নোটারী পাবলিকের কাগজপত্র তৈরি করে। প্রতারণার মাধ্যমে এসব ভুয়া বিয়ে ও তালাকের অপপ্রচারের ঘটনায় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে ওই ছাত্রী। এতে তার কলেজে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়।
এসব প্রতারণার ঘটনায় ওই কলেজ ছাত্রী অভিযুক্ত সাব্বিরসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন।
কথিত ভূয়া স্বামী সাব্বিরের বিরুদ্ধে মামলা করার কারণে বর্তমানে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন ওই কলেজ ছাত্রী ও তার পরিবার। মামলা তুলে নিতে অব্যাহতভাবে হুমকি দেয়া সহ উক্ত শিক্ষার্থীর পরিবারকে ফাঁসাতে সাব্বির হোসেন কর্তৃক জমি সংক্রান্ত ও মারপিটের অভিযোগ এনে নরসিংদী আদালতে পাল্টা একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয় বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী কলেজ ছাত্রীর পরিবারের।

ভুক্তভোগী ওই কলেজছাত্রী সীমা আক্তার (ছদ্মনাম) বলেন, আমি এসব বিয়ের কিছুই জানি না। আমার স্বাক্ষর জাল করে বিয়ে করা, আবারও স্বাক্ষর জাল করে আমি কর্তৃক তালাক দেয়া এটা কীভাবে সম্ভব হলো। একটা মিথ্যা বিয়ের কারণে সামাজিকভাবে আমার মানহানি ঘটেছে। আমি এর বিচার চাই।

নরসিংদী নোটারী পাবলিক কার্যালয়ের অভিযুক্ত আইনজীবী ও মামলার আসামী এডভোকেট শেখ মোমেন বলেন, ছেলে মেয়ে দুজনেই স্ব-শরীরে এসে নিজেরা স্বাক্ষর দেয়ার পর বিয়ে হয়েছে। এখন মেয়েটি ছেলেটির সাথে প্রতারণা পূর্বক মিথ্যা বলছে।

পাটুলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইফরানুল হক ভূইয়া জামান বলেন, এ ঘটনাটি আমরা সামাজিকভাবে মিমাংসা করতে সালিশে বসেছিলাম। সালিশে অভিযুক্ত সাব্বির স্বাক্ষর জাল করে বিয়ে করার কথা স্বীকার করেছিল। আমরা মেয়েটির মান সম্মান ও ভবিষ্যতের কথা ভেবে সাব্বিরকে ৫ লক্ষ টাকা জরিমানার রায় করেছিলাম। পরবর্তীতে ছেলে পক্ষ রায় না মেনে পাল্টা মামলা করায় আমরা এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেইনি।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত সাব্বিরকে না পেয়ে তার পিতা আইয়ুব খানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমরা চেয়েছিলাম ঘটনাটি মিমাংসা করার জন্য কিন্তু তারা আমাদের কাছে বড় অংকের চাঁদা দাবি করে। ৫ লক্ষ টাকা না দিলে তারা মিামংসা করবে না বিধায় আমরা মামলা করেছি।



এই বিভাগের আরও