ঘুরে বেড়ানোর ইচ্ছে : বান্দরবান আবারও

০৯ জুলাই ২০১৯, ১০:৪৫ এএম | আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৯:০৯ পিএম


ঘুরে বেড়ানোর ইচ্ছে : বান্দরবান আবারও
বান্দরবান_আবারও

আমার যত ঘুরাঘুরি। --বান্দরবান আবারও।

"ওগো মেঘ তুমি উড়ে যাও কোন ঠিকানায়?কে তোমায় নিয়ে যায় দূর অজানায়?বলনা আমায়----।
বর্ষাকালের পাহাড় দেখবো বলেই ছেলের পরীক্ষা যেদিন শেষ হলো সেদিন রাতেই উড়াল দিলাম চিটাগাং বরের কাছে।পরদিনই খুব সকালে বের হতে হবে বান্দরবান যাবার জন্য। এ সময় পাহাড় থাকে সবুজ সতেজ।মনে হয় সদ্য যৌবন পেয়েছে যেন।তাই আমি প্রায় প্রতি বর্ষায় রুপসী পাহাড় কে দেখতে যাই।

চিটাগাং শহর থেকে প্রায় তিনঘণ্টার পথ।এতটা সময় লাগতো না।কিন্তু লাগে।কারন চিটাগাং বানিজ্যিক শহর হওয়াতে প্রচন্ড জ্যাম থাকে।বেহাল রাস্তার অবস্থা। আমার ভালো লাগে না।কিন্তু শহর থেকে বের হয়ে যখন সবুজের মাঝখানে দিয়ে গাড়ি এগিয়ে চলে তখন আমি আনন্দিত হই।গাড়ির ছাদ খুলে দিয়ে উপভোগ করি দারুনভাবে।পথে যেতে যেতে বি ডি আর ক্যাম্পের রেস্টুরেন্টে একটু চা বিরতি দিতে হয়।তারপর সবুজের মাঝখান দিয়ে শুধু এগিয়ে চলা।সাপের মতো এঁকেবেঁকে চলা উঁচু নীচু রাস্তা যে কাউকেই মুগ্ধ করবে।আমিও মুগ্ধ হই।চারদিকের অপার সৌন্দর্য দেখে দেখে আমরা এগুচ্ছি আর ভাবছি বিভূতি-ভূষণ বোধহয় এমন প্রকৃতি দেখেই তার বিখ্যাত 'আরন্যক' উপন্যাস লিখেছেন।

আমরা বান্দরবান 'সাইরো রিসোর্টে' থাকবো।গতবছর এসেছিলাম।খুব ভালো লেগেছে। তাই আবারও আসা।বাচ্চারা ছটফট করছে কখন যাব আর তারা সুইমিংপুলে সুইম করবে।আর আমি দেখছি পথের পাশে আদিবাসীদের নিয়ে বসে থাকা আনারস,কাঠাল,আম,শশা,পেপে আর হরেকরকম সবজি।এসব দেখে দেখে অবশেষে সাইরোতে এলাম।তখন প্রায় দুপুর। রুমে যেতে যেতে তুমুল বৃস্টি।সাইরো রিসোর্টের কিছু আলাদা বৈশিষ্ট্য আছে অন্যগুলোর চেয়ে।এটা খুবই প্রকৃতি বান্ধব রিসোর্ট ।এখানে সবকিছুই কাঠের।পাহাড়ের ঢালুতে কটেজগুলো।

বিছানায় শুয়ে-বসে প্রকৃতি দেখা যায়।আকাশ দেখা যায়। বৃস্টি দেখা যায় আর দেখা যায় দূরের পাহাড়। এ রুপ নিজের চোখে না দেখলে আমি বুঝাতে পারবো না।অঝোরে যখন বৃষ্টি শুরু হলো আমরা নেচে উঠলাম আমরা গেয়ে উঠলাম। নাচতে নাচতে গাইতে গাইতে আমরা সুইমিংপুল এ গেলাম। আমি আগেই বলে সুইমিংপুলের পাশের কটেজ নিয়েছিলাম। পাহাড়ের অনেক উপরে সুইমিংপুল, মাথার উপর কুয়াশার মতো মেঘের আনাগোনা।

আবার কখনও ঝুম বৃষ্টি।আমরা খুব আনন্দ নিয়ে গোসল করলাম। প্রায় সন্ধ্যা হয় হয় যখন তখন চা পানের খুব প্রয়োজন অনুভব করলাম।রিসোর্টের ডাইনিং এর খোলা বারান্দায় বসে যখন আড্ডা দিচ্ছিলাম তখন কুয়াশার মতো মেঘগুলো আমাদের অতিক্রম করছিল। কখনো ঢেকে দিচ্ছিল।এ যেন লুকোচুরি খেলা।

বান্দরবান আবারও-৩

দলে আমরা ছিলাম ৮ জন।বরের কলিগ হাকিম ভাইয়ের পরিবার আর আমরা। বাচ্চারা যে যার মতো করে সময় কাটাচ্ছে আর আমরা আডডা দিচ্ছি বিভিন্ন দেশের শিল্প সাহিত্য আর প্রকৃতি নিয়ে।এখানে ডিনারের অর্ডার করতে হয় বিকেল ৫টার মধ্যে কিন্তু আমাদের সেটা খেয়ালই ছিলনা।

আসলে পাহাড়ের মেঘ যে দেখেছে যে অবগাহন করেছে এ সৌন্দর্যে সেই শুধু জানে এ যে কি দারুণ ব্যাপার। প্রকৃতি কিভাবে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছে। আমরাতো প্রকৃতির কাছ থেকেই দেখতে দেখতে শিখতে শিখতে বড় হই।প্রকৃতি ই আমাদের সবচেয়ে বড় শিক্ষক।পরের দিন সকালে আমরা বৃষ্টি স্নান করলাম।এত আনন্দ করেছি। মনে হচ্ছিল সবাই সেই অনেক আগেই ফেলে আসা শৈশবে ফিরে গেছি।ফিরে গেছি সেই বাধনহারা দিনে। ইচ্ছে থাকা সত্বেও আমাদের আর বেশীক্ষণ থাকার উপায় ছিল না।ভয় পাচ্ছিল আবারও পাহাড় ধ্বস হয় কি-না। কারন এমনই এক ঘটনায় এক বছর আগে আমাদের ড্রাইভার কে এক সপ্তাহ আটকে থাকতে হয়েছিল বান্দরবান এ।

বান্দরবান আবারও-২

অগত্যা গোছগাছ করে আবার ফেরার পথ ধরা। বন ফুলের ঝুপ পেড়িয়ে ইটের খোয়া বিছানো পথ বেয়ে আবার নীচে নেমে আসা।আসতে আসতে উপজাতিদের কাছ থেকে গাড়ী ভর্তি করে বাজার করা।মাঝে মধ্যে গাড়ী থামিয়ে রাস্তার পাশের টং দোকান থেকে চা খাওয়া -এ সবই ভ্রমণের আলাদা দ্যোতনা এনে দেয়।মনে হয় এই ক্ষন যদি শেষ না হতো।এই পথ যদি শেষ না হতো।

কিন্তু এই পথ ও একসময় শেষ হয়।কোন পথই থেমে থাকেনা।আর তাই চলে আসতে হয় সবুজ অরন্য ছেড়ে এই ইট পাথরের শহরে। যেখানে আমি এবং আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে মহা ব্যাস্ত একজীবন।

মাহিনুর জাহান নিপু


বিভাগ : জীবনযাপন


এই বিভাগের আরও