ত্বকে যে ৮ ধরনের র‌্যাশ কোভিড-১৯ রোগের উপসর্গ হতে পারে...

২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০১:২৪ পিএম | আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৪৩ এএম


ত্বকে যে ৮ ধরনের র‌্যাশ কোভিড-১৯ রোগের উপসর্গ হতে পারে...
ছবি: সংগৃহীত

জীবনযাপন ডেস্ক:

শুষ্ক কাশি থেকে শুরু করে গন্ধের অনুভূতি হ্রাস পর্যন্ত, বেশ কয়েকটি লক্ষণ রয়েছে যা করোনভাইরাসের সঙ্গে সম্পর্কিত বলে জানা যায়। আর এবার লন্ডনের কিংস কলেজ লন্ডন এবং ব্রিটিশ অ্যাসোসিয়েশন অব ডার্মাটোলজিস্টসের গবেষকরা সতর্ক করে বলেছেন যে, ত্বকের র‌্যাশ বা ফুসকুড়িও কোভিড-১৯ রোগের উপসর্গ হতে পারে। বিজ্ঞানীরা এক্ষেত্রে ত্বকের ৮ ধরনের র‌্যাশ বা ফুসকুড়ি সম্পর্কে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

কোভিড-১৯ রোগে ত্বকের র‌্যাশ বিষয়ক গবেষণার নেতৃত্বদানকারী চর্ম বিশেষজ্ঞ ডা. ভেরোনিক বাটাইল বলেন, ‘আমরা কোভিড-১৯ এর র‌্যাশ গ্যালারি তৈরি করেছি, যাতে চিকিৎসকরা এবং আগ্রহী যেকেউ এতে অ্যাকসেস করতে পারে। এটি সম্ভাব্য কোভিড-১৯ র‌্যাশ শনাক্ত করতে তাদের সহায়তা করবে।’

তিনি আরো বলেন, আমাদের গবেষণায় পাওয়া গেছে, ত্বকের র‌্যাশ বা ফুসকুড়িগুলো জ্বর কিংবা কাশির তুলনায় করোনার আরো বেশি পূর্বাভাস হতে ওঠতে পারে, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে। আমরা দেখতে পেয়েছি, প্রতি ৬ জনের মধ্যে একজন শিশুর করোনার কমন কোনো উপসর্গ ছাড়াই র‌্যাশ দেখা দেয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, কোভিড-১৯ র‌্যাশগুলো কয়েক সপ্তাহ ধরে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত অদৃশ্য হয়ে যায়। কিছু ক্ষেত্রে, র‌্যাশ খুব চুলকানির হলে নির্ধারিত ওষুধের প্রয়োজন হতে পারে।

র‌্যাশের ছবিগুলো ‘কোভিড সিম্পটম স্ট্যাডি অ্যাপ’ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই অ্যাপটি মার্চ মাসে বিজ্ঞানীদের কোভিড-১৯ এর লক্ষণ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহে সহায়তার জন্য চালু করা হয়েছিল।

গবেষকদের মতে, ৮ ধরনের র‌্যাশ কোভিড-১৯ রোগের লক্ষণ হতে পারে। কোভিড সিম্পটম স্ট্যাডি অ্যাপের তথ্যানুসারে, করোনাভাইরাসের প্রায় ৯ শতাংশ রোগী তাদের শরীর বা পায়ের আঙুলে র‌্যাশের বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। শিশুদের ক্ষেত্রে র‌্যাশের ঘটনা ছিল দ্বিগুণ।

যে ৮ ধরনের র‌্যাশ সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে:
(১). কোভিড ডিজিটস: ত্বকের এ ধরনের পরিবর্তনগুলো চিলব্রেন হিসেবে পরিচিত। কোভিড-১৯ রোগের আগে ত্বকের এ সমস্যাটি খুব বিরল ছিল। কারণ এটি কেবল হিমশীতল তাপমাত্রার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় কিংবা যাদের হাতের বা পায়ের আঙুলে রক্ত সঞ্চালন সমস্যা রয়েছে তাদের মধ্যে দেখা যেত।

(২). ঘাড় এবং বুকে একজিমা: এ ধরনের র‌্যাশ ঘাড় এবং বুকে দেখা দেয়। সাধারণত এটি গোলাপী রঙের হয় এবং এতে খুব চুলকানি হয়ে থাকে।

(৩). ঠোঁটে ঘা: করোনার উপসর্গ হিসেবে ঠোঁটে ঘা হতে পারে। ঘা শুকানোর সঙ্গে সঙ্গে তা শুষ্ক এবং খসখসে হয়ে উঠতে পারে। মুখের ভেতরে ব্যাথাও হতে পারে।

(৪). পাপুলার এবং ভেসিকুলার: এই র‌্যাশ প্রথম লাল হিসেবে দেখা দেয় এবং শরীরের যেকোনো জায়গায় হতে পারে। যেমন: কনুই এবং হাঁটুর পাশাপাশি হাত এবং পায়ের পেছনের অংশে। এটি খারাপ ঘামাচির মতো দেখাতে পারে।

(৫). পিটাইরিয়াসিস রোজিয়া: ত্বকে পিটাইরিয়াসিস রোজিয়া সমস্যাটি মূলত ভাইরাল সংক্রমণের কারণে হয়ে থাকে বলে মনে করা হয়, যদি বিষয়টি কখনো প্রমাণিত হয়নি। এটি সাধারণত তরুণ বয়সীদের ওপর প্রভাব ফেলে। এ ধরনের র‌্যাশ বা ফুসকুড়ি একটি হেরাল্ড প্যাচ দিয়ে শুরু হয় এবং কিছুদিনের মধ্যে গলার নিচ থেকে এবং পায়ে ছোট ছোট প্যাচ দেখা দেয়।

(৬). পুরপুরিক: এ ধরনের প্যাটার্ন সহজেই শনাক্ত করা যায়। কারণ এতে ত্বকে একাধিক গভীর লাল বা রক্তবর্ণ দাগ তৈরি হয়। এটি ক্ষতের মতো প্যাচগুলোর কারণ হতে পারে।

(৭). আর্টিকেরিয়াল: আর্টিকেরিয়াল র‌্যাশ করোনা সংক্রমণের প্রাথমিক পর্যায়ে দেখা যেতে পারে এবং আক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থ হওয়ার দীর্ঘসময় পরও এই র‌্যাশ থেকে যেতে পারে। এতে ত্বক চাকা চাকা হয়ে লাল হয়ে ফুলে ওঠে ও ভীষণ চুলকায়। এটি হঠাৎ করে শরীরের যেকোনো জায়গায় হতে পারে।

(৮). ভাইরাল এক্স্যান্থেম: ভাইরাল সংক্রমণে ত্বকের পরিচিত র‌্যাশ এটি। এতে লালচে দাগের অসংখ্য র‌্যাশ তৈরি হয়।

গবেষণার তথ্যমতে, এসব র‌্যাশ করোনার অন্যান্য উপসর্গ প্রকাশ পাওয়ার আগে বা পরে ত্বকে দেখা দিতে পারে। কখনো কখনো সংক্রমণের কয়েক সপ্তাহ পরে হতে পারে।

ব্রিটিশ অ্যাসোসিয়েশন অব ডার্মাটোলজিস্টসের প্রেসিডেন্ট ডা. তানিয়া ব্লিকার বলেন, নির্দিষ্ট কিছু র‌্যাশ এবং কোভিড-১৯ এর মধ্যে যোগসূত্র ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। করোনার বিস্তার রোধে এগুলো শনাক্ত করতে সক্ষম হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


বিভাগ : জীবনযাপন


এই বিভাগের আরও