নজরদারিতে ফেসবুক ও ইউটিউবের অশ্লীল ভিডিও

১০ জুলাই ২০১৯, ১০:৪৫ এএম | আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:১৯ পিএম


নজরদারিতে ফেসবুক ও ইউটিউবের অশ্লীল ভিডিও

তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক:

তথ্য-প্রযুক্তির উন্নতি সাধনের ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থা হয়েছে আরও সহজ। অনলাইনের মাধ্যমে বিশ্ব এখন হাতের মুঠোয়। কিন্তু অনলাইনের ইতিবাচক দিকের পাশাপাশি নেতিবাচক দিকও রয়েছে। সাইবার অপরাধের সংখ্যা কেবল দিন দিন বাড়ছে। এরমধ্যে অন্যতম হলো ইউটিউব ও ফেসবুকে অশ্লীল ভিডিও ছড়িয়ে দেয়া।

এর মাধ্যমে কেউ পেতে চাইছেন রাতারাতি তারকাখ্যাতি, আবার কেউ করতে চাইছেন বাড়তি আয়। পাশাপাশি ফেসবুক আইডি হ্যাক করে আকাশছোঁয়া অর্থ আত্মসাতের ঘটনাও কম ঘটছে না। গত এক বছরে সাইবার অপরাধীর সংখ্যা ক্রমাগতভাবে কেবল বেড়েছেই।

অশ্লীল, কুরুচিপূর্ণ ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার সবচেয়ে সহজ মাধ্যম এখন ইউটিউব ও ফেসবুক। যে কেউ চাইলেই আইডি খুলে এ কাজটি করতে পারছেন। আর এমন অপরাধে নাম জড়িয়েছে অনেক মডেল, ইউটিউবার কিংবা শীর্ষ অডিও-ভিডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানেরও।

বর্তমান ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার পর্নোগ্রাফির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। তাছাড়া নিরাপদ ইন্টারনেট কার্যক্রমের আওতায় তিনি অনলাইনে অশ্লীলতার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। এদিকে অশ্লীল ভিডিও ছড়িয়ে কেউ যেন পার পেতে না পারে তার জন্য কাজ করে যাচ্ছে সাইবার ক্রাইম ইউনিট।

গত বছরের মাঝামাঝি থেকে চলতি বছরের শুরু পর্যন্ত মডেল-অভিনেত্রী সানাই মাহবুব অশ্লীল ও আপত্তিকর বেশ কিছু ভিডিও তার ফেসবুক পেজে প্রকাশ করেন। এমনকি ফেসবুক লাইভে এসেও তিনি অশ্লীলতা ছড়ান। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ডিএমপি’র সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম ইউনিটে নিয়ে আসা হয় তাকে। সানাইয়ের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযোগ, টিকটক ও ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে খোলামেলা ও অসামাজিক কথাবার্তা বলে যুবসমাজকে অবক্ষয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছিলেন তিনি। পরবর্তীতে আর এ ধরনের ভিডিও প্রকাশ করবেন না এমন শর্তে মুচলেকার মাধ্যমে ছাড়া পান সানাই। ঠিক এমনিভাবে সাম্প্রতিক সময়ে ‘অভদ্র প্রেম’ শিরোনামের একটি গানের ভিডিও প্রকাশ করেন জনপ্রিয় ইউটিউবার ও অভিনেতা সালমান মুক্তাদির। এ ভিডিওর পুরোটাই ছিলো অশ্লীলতায় ভরা। যার প্রেক্ষিতে তাকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে আসা হয় ডিএমপি’র সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম ইউনিটে। ভিডিও মুছে দেয়ার শর্তে তাকেও মুচলেকার মাধ্যমে ছেড়ে দেয়া হয়। সঙ্গে সঙ্গে একটি ভিডিওর মাধ্যমে এ গানটি প্রকাশের জন্য সবার কাছে ক্ষমা চান সালমান। সিডি চয়েজ মিউজিকের কর্ণধার এমদাদ সুমনকেও সাইবার ক্রাইম ইউনিটে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নেয়া হয়। তিনি অন্য একটি চ্যানেলের মাধ্যমে বিতর্কিত ‘ভাদাইম্যা’ সিরিজের ভিডিও প্রকাশ করছিলেন। সেই সিরিজের অভিনেতাকেও গ্রেপ্তার করা হয়। পরবর্তীতে এই চ্যানেল বন্ধ ও ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। অন্যদিকে সম্প্রতি অগ্নিবীণার ব্যানারে জি-সিরিজের ইউটিউব চ্যানেল থেকে ‘লেভেলে নাই’ নামের আপত্তিকর গান প্রকাশ করা হয়। গানটির দৃশ্যায়ন এবং কথায় রয়েছে মাত্রাতিরিক্ত অশ্লীলতা। গানে দেখানো হয় নারী দেহের ওপর মাদক রেখে তা সেবনের দৃশ্য। গানটি গেয়েছেন ‘ত্রিগ্যাং’ দল। এটি তৈরি ও ইউটিউব চ্যানেলে আপলোডের জন্য জি সিরিজের প্রোডাকশন ম্যানেজার শফিউর রহমানকে হাজির হতে হয় ডিএমপি’র সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম ইউনিটে। তিনি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সবার কাছে ক্ষমা চান। ভবিষ্যতে এমন কোনো কনটেন্ট তৈরি করবেন না বলে মুচলেকাও দেন তিনি। এর বাইরে আরো কয়েকজন মডেল, ইউটিউবার, প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান নজরদারিতে রয়েছে সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম ইউনিটের।

ডিএমপি’র সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) নাজমুল ইসলাম বিশেষ ট্রেনিংয়ে সম্প্রতি ওয়াশিংটন গিয়েছেন। তিনি ইউটিউব ও ফেসবুকে অশ্লীল ভিডিও ছড়ানো এবং তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া প্রসঙ্গে বলেন, ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার স্যারের নেতৃত্বে নিরাপদ ইন্টারনেট ক্যাম্পেইনের অংশ হিসেবে আমরা বেশকিছু প্রতিষ্ঠানকে ডেকেছি, জিজ্ঞাসাবাদ করেছি ও মুচলেকার মাধ্যমে ছেড়েছি। তারা এ ধরনের কাজ আর করবে না বলে ক্ষমাও চেয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে কয়েকজনকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তারাও এমন কাজ ভবিষ্যতে করবে না বলে জানিয়েছেন। এ বিষয়ে আমাদের নজরদারি চলছে ও চলবে। কারণ ইন্টারনেটকে নিরাপদ রাখতে হবে। বিশেষ করে কেউ যেন অশ্লীল ভিডিও ছড়িয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কিংবা ইউটিউবের মতো প্ল্যাটফর্মকে নেতিবাচকভাবে ব্যবহার করতে না পারে সে ব্যাপারে আমরা সদা সচেষ্ট। এ ব্যাপারে কারো অভিযোগ থাকলেও আমরা তা খতিয়ে দেখবো। 



এই বিভাগের আরও