রায়পুরায় ৫০ বছর ধরে জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছে “জাগরণী” পাঠাগার

০৬ এপ্রিল ২০১৯, ০৮:৪৮ পিএম | আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১২:২১ পিএম


রায়পুরায় ৫০ বছর ধরে জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছে “জাগরণী” পাঠাগার

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
নরসিংদীর রায়পুরায় ৫০ বছর ধরে জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছে “জাগরণী” নামে একটি পাঠাগার। চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি সুবর্ণজয়ন্তী পার করেছে পাঠাগারটি। পাঠাগারটিতে রয়েছে বিশ হাজারের অধিক বই ও পত্রপত্রিকার বিপুল সমাহার। গবেষকদের জন্য রয়েছে দূর্লভ জ্ঞানগর্ভ তথ্য-উপাত্ত ভান্ডার। ইতিহাস-ঐতিহ্য, জ্ঞান বিজ্ঞানসহ প্রায় সব ধরণের বইয়ের খোঁজ মেলে ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে তোলা গ্রামের এ পাঠাগারটিতে। এতে আলোকিত হচ্ছেন এলাকার শিক্ষার্থীসহ সকল শ্রেণিপেশার মানুষ।

সরেজমিন গিয়ে জানা গেছে, ১৯৬৮ সালে ব্যক্তি উদ্যোগে যাত্রা শুরু হয় রায়পুরা উপজেলার আড়িয়াল খাঁর তীরে সিরাজনগর (নয়াচর) গ্রামের “জাগরণী” পাঠাগারটির। বর্তমানে পেশায় শিক্ষক ও হোমিও চিকিৎসক অছিউদ্দীন আহমদ ছাত্রাবস্থায় বই পড়ার আগ্রহ থেকেই নিজ উদ্যোগে গড়ে তুলেন পাঠাগারটি। নিজস্ব অর্থায়নে নিজ বাড়িতে গড়ে তোলা এ পাঠাগারের পেছনে ছাত্রজীবন থেকে এখনও পর্যন্ত শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন অছিউদ্দীন আহমদ। ১৪ হাত দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট একটি টিনের ঘরে প্রধান কার্যালয় ও পার্শ্ববর্তী রাধাগঞ্জ বাজারে ভাড়ায় নেয়া একটি ঘরে শাখা কার্যালয়ে চলছে বইপ্রেমীদের জ্ঞান অন্বেষণ কার্যক্রম।

মুক্তিযুদ্ধ, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সাহিত্য, বিনোদন, রাজনীতি, অর্থনীতি, জ্ঞান বিজ্ঞানসহ প্রায় সব ধরণের বই, পত্রপত্রিকা ও দুষ্প্রাপ্য প্রকাশনার খোঁজ মেলে এখানে। প্রতিদিন কয়েকশ জ্ঞান পিপাসু মানুষ জ্ঞান অন্বেষণ করতে আসেন এখানে। স্থানীয় শিক্ষক-শিক্ষার্থী, চাকুরি প্রত্যাশী যুবক যুবতীসহ বইপ্রেমী বিভিন্ন শ্রেণিপেশার জ্ঞানপিপাসু মানুষ প্রতিনিয়ত বই পড়তে আসেন পাঠাগারটিতে। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সবশ্রেণির পাঠকদের জন্য খোলা থাকে পাঠাগারটি। বর্তমানে ২০ হাজারেরও বেশি বই থাকলেও পর্যাপ্ত জায়গা ও অবকাঠামোর অভাবে অনেকটা গাদাগাদি পরিবেশে বসেই বই পাঠ করতে হয় এখানে।

শুধু বই পড়া নয়, পাশাপাশি নানাধরনের জ্ঞান অন্বেষণী কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে জাগরণী। এরমধ্যে সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, দেয়াল পত্রিকা প্রকাশ, সাহিত্য বার্ষিকী প্রকাশ, বই পাঠ প্রতিযোগিতা, বিতর্ক সভা, প্রকাশনা উৎসব, চিত্রাংকন ও রচনা প্রতিযোগিতা, শিক্ষাবৃত্তি প্রদান, আবৃত্তি ও সাহিত্য সভাসহ অন্যান্য কার্যক্রম। ৫০ বছর ধরে সমাজ আলোকিত করে প্রশংসিত হয়েছে ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে ওঠা এ পাঠাগারটি। স্থানীয় বইপ্রেমী লোকজনের সহায়তার পাশাপাশি জীবনের সময় ও উপার্জনের বেশিরভাগ-ই এ পাঠাগারের পেছনে ব্যয় করেছেন পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা অছিউদ্দীন আহমদ।

১০ম শ্রেণির স্থানীয় ছাত্র মাহমুদুল হাসান বলেন, আমি এখানে প্রতিদিনই আসি, স্কুলের ফাঁকে ফাঁকে বিকাল বা সন্ধ্যা বেলা। এখান থেকে সব বিষয়ের বই পড়া যায়। সমাজবিজ্ঞান ভূগোল, পৌরনীতি, ইতিহাস, তারপরে সাধারণ জ্ঞান ও ধর্মীয় বিষয় সবগুলো জ্ঞান সম্পর্কে জানতে পারছি।

স্থানীয় শিক্ষক রাকিব হাসান বলেন, পাঠাগারটি আদর্শ মানব তৈরিতে কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের সমাজে পাঠাগারটা থাকাতে ব্যক্তিগতভাবে আমি যেমন উপকৃত হয়েছি, তেমনি গ্রামের এবং গ্রামের বাইরে যারা আছেন তারা অনেকটা উপকৃত হচ্ছেন।

নরসিংদী প্রেসিডেন্সী কলেজের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ড. মো. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, পাঠাগারটি ৫০ বছর ধরে জ্ঞানের আলো বিতরণ করছে। এতে করে সমাজ উপকৃত হচ্ছে, মানুষ জ্ঞান অর্জন করে ব্যক্তিজীবনে কাজে লাগাতে পারছেন। মাদকসহ বিভিন্ন অন্যায় থেকে বিরত থাকছে। জ্ঞানের আলো বিকশিত করার যে প্রচেষ্টা জাগরণী করে যাচ্ছে এটা প্রশংসার দাবী রাখে।

জাগরণী পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা অছিউদ্দীন আহমদ নরসিংদী টাইমসকে বলেন, বই পড়তে আনন্দ পাই, বই পড়াতে আনন্দ পাই, সেজন্যই আমার এ প্রচেষ্টা। লালন করার জন্য সরকারি বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে জাগরণী পাঠাগারকে দেশের শীর্ষস্থানীয় গ্রামীণ পাঠাগারে পরিনত করার স্বপ্ন আমার।


বিভাগ : শিক্ষা


এই বিভাগের আরও