নরসিংদী জেলার সংক্ষিপ্ত ইতিকথা:

০১ মার্চ ২০২০, ০৪:৪৮ পিএম | আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:২৩ পিএম


নরসিংদী জেলার সংক্ষিপ্ত ইতিকথা:

মো.সাইদুল ইসলাম:

নরসিংদী জেলা বাংলাদেশের মধ্যভাগের ঢাকা বিভাগের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক অঞ্চল। ঢাকা থেকে এর দূরত্ব ৫২ কিলোমিটার। মেঘনা, শীতলক্ষ্যা, আড়িয়াল খাঁ ও পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ তীর বিধৌত প্রাচীন সভ্যতা ও ঐতিহ্য লালিত জেলাটির নাম নরসিংদী। পূর্ব এই অঞ্চলটি নরসিংহ নামে এক রাজার শাসনাধীন ছিল। ধারণা করা হয় পঞ্চদশ শতাব্দীর প্রথম দিকে প্রাচীন ব্রহ্মপুত্র নদের পশ্চিম তীরে রাজা নরসিংহ নরসিংহপুর নামে একটি ছোট নগর স্থাপন করে ছিলেন। নরসিংদী নামটি রাজা নরসিংহের নাম অনুসারে উৎপত্তি হয়ে ছিল বলে মনে করেন ইতিহাসবিদরা।

 এক সময় নরসিংদী অঞ্চলটি মহেশ্বরদী পরগনার অন্তর্ভুক্ত ছিল। এ পরগনার জমিদার ছিলেন দেওয়ান ঈশাখাঁ। তার পর জমিদার ছিলেন দেওয়ান শরীফ খাঁ ও আয়েশা খাতুন। জমিদার প্রথা বিলুপ্তির পর এক সময় নরসিংদী ছিল ঢাকা জেলাধীন নারায়ণগঞ্জ মহকুমার একটি থানা। ১৯৭৭ সালে ঢাকা জেলার মহকুমার উন্নতি করা হয়।১৯৮৪ সালে নরসিংদী জেলা গঠিত হয় ৬টি উপজেলা এবং একটি পৌরসভা নিয়ে।

নরসিংদী জেলার আয়তন ১১৪০.৭৬ বর্গকিলোমিটার এবং জনসংখ্যা ১৮৯৫৯৮৪।

নরসিংদী জেলায় অনেক প্রখ্যাত ব্যাক্তত্ব রয়েছে। যারা সারা বাংলাদেশে উজ্জ্বল নক্ষত্র। যাদেরকে বাংলাদেশ ভুলতে পারবে না।কবি দ্বিজদাস, সতীশ চন্দ্র পাকড়াশী (১৮৯৩-১৯৭৩) বাঙালী সংগ্রামী ও সশস্ত্র বিপ্লবী।

কবি শামসুর রাহমান যাকে নাগরিক কবি বলা হয়।ড.আলাউদ্দিন আল আজাদ (৬মে,১৯৩২-৩ জুলাই,২০০৯) ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক,কবি, নাট্যকার, গবেষক। 

বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান যিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে অসীম সাহসের অধিকার দেখিয়েছেন। মিঞা মো.সুন্দর আলী গান্ধী সমাজ সংস্কারক, অবিভক্ত বাংলার কৃষক-প্রজাপার্টির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। বিদ্যুৎ সাহী ও নরসিংদীর সিংহ পুরুষ আপেল মাহমুদ। উপমহাদেশে যিনি বাংলায় প্রথম কোরান অনুবাদ করেন ভাই গিরিশ চন্দ্র সেন। স্যার কে.জি. গুপ্ত যিনি ব্রিটিশ ভারতের প্রথম স্যার উপাধি প্রাপ্ত। কলেক জীবনে অত্যন্ত ভালো ফলাফল করে তিনি যখন উচ্চ শিক্ষার জন্য বিলেতের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন, তখন কে.জি.গুপ্তকে ভারতীয় সব থেকে মেধাবী বলে গণ্য করা হতো। ১৮৫৭ সালে তিনি এ দেশে সিপাহী বিদ্রোহীর বিরুদ্ধে কথা বলে এবং বৃটিশদের অমানবিক দমননীতিকে মেনে না নিতে পেরে আই.সি.এস.এর চাকুরী ত্যাগ করেন। সাবেক সেনা বাহিনীর প্রধান নূরউদ্দিন খান। জনাব সাদাত আলী সরকার ব্রিটিশ আমলে নরসিংদী জেলার সব থেকে ধনী ব্যক্তি ছিলেন। শহিদ আসাদ ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের নায়ক। কবিরাজ ললিত মোহন দাস, কিশোর মল্লিক, সুভাস সাহা, স্বাধীন বাংলার ফুটবল খেলোয়ার। স্কুটার গফুর, শামীম কবির বাংলাদেশের জাতীয় ক্রিকেট দলের প্রথম অধিনায়ক। নজরুল ইসলাম হিরু, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। সাহসিকতার জন্য তাকে বীর প্রতীক খেতাব দেওয়া হয়েছে। বর্তমান সময়ের দানবীর আব্দুল কাদির মোল্লা, যিনি একা ধারে ৩ বার বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ করদাতা হয়েছেন। রাজনীতিবিদ রাজিউদ্দীন আহমদ রাজু এবং আবদুল মঈন খান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি আ.আ.ম.আরেফিন সিদ্দিক, বাংলাদেশ সরকারের সাবেক সচিব এবং বর্তমানে এন.বি.আর এর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূইয়া।

নরসিংদীতে রয়েছে অনেক বিখ্যাত স্থান। উয়ারী -বটেশ্বর যা দুটি গ্রাম। খ্রীস্টপূর্ব ৪৫০ অব্দে যা বাংলাদেশের সব থেকে পুরোনো নির্দেশনা বলে ধারণা করা হয়।বীর শ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের জাদুঘর, ভাই গিরিশ চন্দ্র সেনের বাড়ি, লক্ষণ সেনের জমিদার বাড়ি যা পলাশ থানায় অবস্থিত, বালাপুরের জমিদার বাড়ি যা মাধবদীর বালাপুরে অবস্থিত, দেওয়ান শরীফ মসজিদ, শাহ ইরানি মাজার, বেলাবো জামে মসজিদ। আশ্রাবপুর মসজিদ আলাউদ্দিন হোসেন শাহের পুত্র সুলতান নাসির উদ্দিন নসরৎ শাহের রাজত্বকালে নির্মিত। সোনাইমুড়ি টেক ও ড্রিম হলিডে পার্ক।

বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক ইতিহাসে নরসিংদী একটি সুপ্রাচীন নাম। দেশের অন্যতম নদী বন্দর ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে খুবই সুপরিচিত। বাংলাদেশের ৬৪ টি জেলার মধ্যে ৬৩ টি জেলা কৃষি অর্থনীতির উপর নির্ভরশীল। ব্যতিক্রম শুধু নরসিংদী জেলা। এই জেলার তাঁত শিল্পের ইতিহাস সুপ্রাচীন। এককালে রপ্তানিকৃত বস্ত্রের অধিকাংশ অংশ এই জেলায় উৎপন্ন হতো। বিশেষ করে মুসলিম কাপড়ের সুনাম বিশ্বব্যাপী। প্রাচ্যের ম্যানচেস্টার খ্যাত বাবুরহাট এই জেলায় অবস্থিত। এছাড়া এ জেলায় ভারী শিল্প ২৩১টি, কুটিরশিল্প ১৯ হাজার ৫২১টি,ডায়িং ও ফিনিশিং ১৪০ টি, জুটমিল ৯টি,সুতাকল একটি, সুগার মিল ১টি, সার কারখানা ২টি, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ২ টি বাংলাদেশের জেলা চলমান রাখছে এই জেলা। (সূত্র :প্রথম আলো) 

শিক্ষার দিক দিয়ে এগিয়ে রয়েছে নরসিংদী জেলা। ১০০ টি কলেজ পর্যায়ের প্রতিষ্ঠান রয়েছে নরসিংদী জেলাতে। তার মধ্যে আব্দুল কাদির মোল্লা সিটি কলেজ ২০১২, ২০১৩ এবং ২০১৪ সালের ঢাকা বোর্ড সহ সারা বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছে। তার মধ্যে আরো কিছু বিখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে নরসিংদী সরকারি কলেজ, গুলেস্তা হাফিজ মেমোরিয়াল ইনস্টিটিউট, নরসিংদী মডেল কলেজ স্কলাস্টিকা মডেল কলেজ, নরসিংদী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, জামেয়া কাসেমিয়া কামিল মাদ্রাসা, সরকারি শহীদ আসাদ কলেজ, এন.কে. এম. হাই স্কুল এন্ড হোমস আব্দুল, কাদির মোল্লা ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, মাধবদী এস পি ইনস্টিটিউশন, পাঁচকান্দি ডিগ্রি কলেজ

নরসিংদী জেলা ১০টি রেল স্টেশন এবং ঘোরাশালে রয়েছে বাংলাদেশের প্রথম দ্বিতলা বিশিষ্ট রেলওয়ে স্টেশন।

নরসিংদী জেলাতে অনেক শাকসবজি উৎপাদন করা হয় কিন্তু কলা এবং লটকন উৎপাদনে বাংলাদেশের বিখ্যাত।

স্যামসাং গ্রুপ দক্ষিণ কোরিয়া একটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, এর একটি উৎপাদন কারখানা রয়েছে নরসিংদীতে।

অর্থাৎ কৃষি, শিল্প ও যোগাযোগ সমৃদ্ধ নরসিংদী জেলা। তাছড়া মহান মুক্তিযুদ্ধ ও গৌরব ইতিহাস সৃষ্টিতে নরসিংদীর ঐতিহ্য রয়েছে।

 

লেখক: শিক্ষার্থী গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।