করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্তকরণে দেখা দিয়েছে ছয়টি বড় সংকট
১৫ মে ২০২০, ০৩:০৩ পিএম | আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৪৮ এএম
নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্তকরণে ছয়টি বড় সংকট সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। এসব সংকট উত্তরণে জরুরি উপায় খুঁজতে শুরু করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সংকটগুলোর মধ্যে রয়েছে সংক্রমণ থেকে ল্যাবরেটরির সুরক্ষা, গবেষক ও টেকনোলজিস্টদের সুরক্ষা, পরীক্ষার মান সংরক্ষণ, নমুনা সংগ্রহ ও রোগীর সংখ্যা ওভারল্যাপিং, মৃত্যু ও আক্রান্তের তথ্য ওলটপালট এবং কারিগরি জনবল সংকট।
কয়েক দিন ধরে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) অনুসন্ধানমূলক পর্যবেক্ষণে মোটা দাগে এই ছয়টি সমস্যা খুব বড় বলে চিহ্নিত করেছে। এর ভিত্তিতে জরুরিভাবে কী প্রক্রিয়ায় এই সমস্যাগুলোর সমাধান করে বেশি বেশি পরীক্ষা নিশ্চিত করা যায় এখন সেই পথ বের করার চেষ্টা চলছে। এ জন্য নতুন একটি কর্মপন্থা ঠিক করার কাজ চলছে দ্রুতগতিতে। এ ক্ষেত্রে একদিকে সরকারের পরিকল্পনা ও নির্দেশনার বিষয়টিকে যেমন গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, তেমনিভাবে নাগরিকদের সচেতনতার ওপরও জোর দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
এ ছাড়া তথ্যগত জটিলতার কারণে এরইমধ্যে ঢাকার বাইরের প্রায় অর্ধশত মৃত ব্যক্তির হিসাব ঢাকার বাসিন্দা হিসেবে প্রথম দিকে যুক্ত হয়ে গিয়েছিল, যা পরে ঠিক করা হলেও এখনো গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়নি। যদিও এ ক্ষেত্রে মোট মৃতের সংখ্যায় কোনো হেরফের ঘটেনি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজির অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, পরীক্ষার ক্ষেত্রে ল্যাবের সুরক্ষা, জনবলের সুরক্ষা, নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষার মান যথাযথভাবে সংরক্ষণ, রিপোর্ট যথাযথ সতর্কতার সঙ্গে প্রস্তুত, নমুনা বাহক বাক্স ও পরিবহনের সময়কার তাপমাত্রা, সময় ও সংক্রমণ না ঘটানোর মতো উপযুক্ত নিরাপত্তার বিষয়গুলো খুবই জরুরি। মুখের কথায় বা হঠাৎ করেই কাগজের অর্ডারে একটি ল্যাবে এমন একটি ভাইরাস পরীক্ষা শুরু করলেই হয় না। বিষয়গুলো খুবই স্পর্শকাতর। অনেক ধরনের প্রস্তুতি লাগে। কেবল বাংলাদেশেই নয়, অনেক দেশেই এমন প্রস্তুতির ঘাটতি রয়েছে। কেবল পিসিআর মেশিন থাকলেই হয় না, কমপক্ষে বায়োসেফটি লেভেল-২ সঠিক মাত্রায় কার্যকর আছে কি না, সেটাও নিশ্চিত করতে হবে। কারা নমুনা সংগ্রহ করছে, সঠিকভাবে সংগ্রহ হচ্ছে কি না, পরীক্ষা সঠিক পদ্ধতিতে হচ্ছে কি না সেটাও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, দেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির শুরু থেকে আইইডিসিআরকে পরীক্ষার জন্য উপসর্গধারী মানুষের নমুনা সংগ্রহ, পরীক্ষা করে রিপোর্ট দেওয়া নিয়েই বেশি মাত্রায় ব্যস্ত থাকতে হয়েছিল। গতকাল পর্যন্ত ৪১টি ল্যাবে পরীক্ষার সুযোগ বাড়ানো হয়। যার মধ্যে ঢাকায় ২০টি ও ঢাকার বাইরে ২১টি। আরো কয়েকটির প্রক্রিয়া চলছে। একপর্যায়ে আইইডিসিআরকে সরাসরি নমুনা সংগ্রহের কাজের চাপ কমিয়ে সারা দেশে নমুনা সংগ্রহের ও পরীক্ষার মান সুরক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর আওতায় আইইডিসিআরের বিশেষজ্ঞরা পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে নানা সমস্যা পান।
অন্যদিকে গণমাধ্যমের অনুসন্ধানের সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, এখন পর্যন্ত দেশে করোনায় আক্রান্ত হওয়া মোট মৃতের মধ্যে ঢাকায় যে সংখ্যা দেখানো হচ্ছে প্রকৃতপক্ষে তাঁদের মধ্যে ৫০ জনের তথ্য গরমিল রয়েছে। অর্থাৎ ওই ব্যক্তিরা আসলে ঢাকার বাসিন্দা নয়, কিন্তু ঢাকায় হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে মারা যাওয়ায় তাত্ক্ষণিক হিসেবে তাঁদের ঢাকার বলে দেখানো হয়।
জানতে চাইলে আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে আমাদের সামনে এখন পাঁচ-ছয়টি বড় চ্যালেঞ্জ এসে দাঁড়িয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে দ্রুততার সঙ্গে একেকটি ল্যাব প্রস্তুত করে পরীক্ষা ও নমুনা সংগ্রহের পরিধি বাড়ানোর ফলে ল্যাবের নিরাপত্তা সঠিক মাত্রায় সংরক্ষিত রাখা যাচ্ছে না। প্রতিদিনই কোনো না কোনো ল্যাব ও গবেষক-কর্মীরা সংক্রমিত হচ্ছেন। যার ফলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে হয়তো সবই পজিটিভ বা সবই নেগেটিভ হওয়ার ঘটনাও ঘটছে। অন্যদিকে একই ব্যক্তি একাধিক ল্যাবে একাধিকবার পরীক্ষা করায় সংখ্যাগত দিক থেকে বেশি হয়ে যাচ্ছে। আবার নেগেটিভ ও পজিটিভ দুটিই বেশি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এ জন্যই আমরা এখন দিনরাত কাজ করছি।
ড. ফ্লোরা বলেন, দক্ষ টেকনোলজিস্টের অভাবে পর্যাপ্ত নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করা কিছুটা হলেও বিঘ্নিত হচ্ছে। টেকনোলজিস্ট নিয়োগ সম্পন্ন হয়ে গেলে হয়তো এই সমস্যা কেটে যাবে।
অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, মহামারি পরিস্থিতিতে জরুরি ভিত্তিতে অনেকগুলো ল্যাব যেমন করা দরকার, তেমনি এগুলোর সঠিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য উপযুক্ত কারিগরি সুরক্ষাও খুবই জরুরি। প্রতিদিন এগুলো জীবাণুমুক্ত করা প্রয়োজন। এ ছাড়া এখন দেখতে পাচ্ছি অনেকগুলো ল্যাব এই করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষায় যুক্ত হয়েছে। এটা খুবই ভালো খবর হলেও বিপত্তি হচ্ছে এর মধ্যে বেশ কিছু ঠিক রোগীর সার্ভিস অরিয়েন্টেড নয়; আগে থেকে কেবল তারা নিজ প্রতিষ্ঠানের ভেতরকার গবেষণার কাজের অভিজ্ঞতায় অভ্যস্ত। তারা বাইরের উন্মুক্ত পর্যায়ের নমুনা সংগ্রহ বা পরীক্ষার কাজে অভ্যস্ত বা পর্যাপ্ত অভিজ্ঞ নয়। সে ক্ষেত্রে এসব ল্যাবের গবেষক ও কর্মীরা ঝুঁকির মুখে বেশি পড়তে পারেন। আবার একটানা বেশি পরিমাণ পরীক্ষার ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা তাদের জন্য কিছুটা কঠিন হতে পারে।
ড. ফ্লোরা বলেন, আমরা পরীক্ষা ও নমুনা সংগ্রহ কাজ আরো সুশৃঙ্খলভাবে ও নিরাপদে পরিচালনার জন্য এখন নতুন কিছু প্রযুক্তির খোঁজ লাগিয়েছি। ইতোমধ্যেই সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তিবিদদের সহায়তা নিতে শুরু করেছি। তিনি বলছিলেন, যদি এমন কিছু করা যায় যাতে একজন ব্যক্তি দেশের যে ল্যাবেই পরীক্ষা করুক না কেন তা একটি আইডির মাধ্যমে সেন্ট্রাল সার্ভারে সংরক্ষিত থাকবে। পরে যদি তিনি আবার পরীক্ষা করতে যান তখন তার ওই আইডি নম্বরটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সক্রিয় হবে। এ ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র বা ফোন নম্বর কাজে লাগানো যায় কি না তাও ভাবা হচ্ছে। এটা করা না গেলে এই ব্যক্তি পাঁচ জায়গায় পাঁচবার নমুনা দিলে তিনি পাঁচটি সংখ্যায় পরিগণিত হচ্ছেন। এতে দেশে মোট সংক্রমণ ও সংক্রমিত হারের সঠিক চিত্র পাওয়া মুশকিল হয়ে পড়ছে। অন্যদিকে আরো বেশি মাত্রায় পরীক্ষার সুযোগ সীমিত হচ্ছে। অনেক মানুষ হয়রানি হচ্ছেন।
আইইডিসিআর পরিচালক বলেন, তাঁদের পর্যবেক্ষণে আরেকটি বিষয় পরিষ্কার হয়ে উঠেছে। সেটা হচ্ছে হাসপাতালে রোগী নিয়ে ঠেলাঠেলির কারণে অনেকের কোনো উপসর্গ না থাকলেও তারা কেবল সনদ নিতে নমুনা দেওয়া বা পরীক্ষার জন্য উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। এটা খুবই নেতিবাচক একটি বিষয় হয়ে উঠছে। মৃত্যুর তথ্য এলোমেলো হওয়ার বিষয়ে আইইডিসিআর পরিচালক বলেন, ঢাকার বাইরের কেউ ঢাকায় কোনো হাসপাতালে মারা গেলে ২৪ ঘণ্টার তথ্যে তা ঢাকার ভেতরে মৃত্যু বলেই পরিগণিত হয়। তবে পরে সঠিক ও বিস্তারিত ঠিকানা বের করে ওই ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষে যে জেলার বাসিন্দা সেখানকার তালিকায় যুক্ত করা হয়। মাঠ পর্যায়ে ও ঢাকার হাসপাতালগুলোর তথ্যগত সমন্বয়ে কিছু জটিলতার কারণে এমনটা হয়। প্রযুক্তিগত ঘাটতিও তাঁদের চোখে পড়ছে। যদিও মোট মৃত্যুর সংখ্যায় কোনো হেরফের ঘটছে না। কারণ কভিড-১৯ রোগে মৃত প্রত্যেক ব্যক্তির বিশেষ আইডি ব্যবহার করা হয়।
বিভাগ : বাংলাদেশ
- রেডি টু কুক মৎস্যপণ্য উৎপাদন গবেষণা আরও জোরদার করতে হবে: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা
- নরসিংদীতে পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশনের আহবায়ক কমিটি গঠন
- নরসিংদীতে সততা চর্চার অভ্যাস গড়তে শিক্ষার্থীদের বিতর্ক প্রতিযোগিতা
- বেলাবতে অনুপস্থিতিসহ দুর্নীতির অভিযোগে কলেজ অধ্যক্ষের অপসারণ দাবি
- মাধবদীতে জুট ব্যবসা নিয়ে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ৩
- এক দফার আন্দোলন শুধু দুই মাসের নয়, ১৬ বছরের আন্দোলন: খায়রুল কবির খোকন
- নরসিংদীতে বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে জেলা বিএনপির বর্ণাঢ্য র্যালি
- স্ত্রীর সঙ্গে কলহের জেরে ট্রেনের নীচে ঝাঁপ দিয়ে স্বামীর আত্মহত্যা
- যক্ষ্মারোগ নিয়ন্ত্রণে সাংবাদিকদের ভূমিকা শীর্ষক মতবিনিময়
- আওয়ামী লীগ ভেবেছিল তারা চিরকাল ক্ষমতায় থাকবে: খায়রুল কবির খোকন
- রেডি টু কুক মৎস্যপণ্য উৎপাদন গবেষণা আরও জোরদার করতে হবে: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা
- নরসিংদীতে পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশনের আহবায়ক কমিটি গঠন
- নরসিংদীতে সততা চর্চার অভ্যাস গড়তে শিক্ষার্থীদের বিতর্ক প্রতিযোগিতা
- বেলাবতে অনুপস্থিতিসহ দুর্নীতির অভিযোগে কলেজ অধ্যক্ষের অপসারণ দাবি
- মাধবদীতে জুট ব্যবসা নিয়ে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ৩
- এক দফার আন্দোলন শুধু দুই মাসের নয়, ১৬ বছরের আন্দোলন: খায়রুল কবির খোকন
- নরসিংদীতে বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে জেলা বিএনপির বর্ণাঢ্য র্যালি
- স্ত্রীর সঙ্গে কলহের জেরে ট্রেনের নীচে ঝাঁপ দিয়ে স্বামীর আত্মহত্যা
- যক্ষ্মারোগ নিয়ন্ত্রণে সাংবাদিকদের ভূমিকা শীর্ষক মতবিনিময়
- আওয়ামী লীগ ভেবেছিল তারা চিরকাল ক্ষমতায় থাকবে: খায়রুল কবির খোকন