সারাদেশে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি: ভেঙে পড়েছে ১৬ জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা
১৯ জুলাই ২০১৯, ০৬:০৩ পিএম | আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:২১ পিএম
টাইমস ডেস্ক:
অতিবর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে সারাদেশে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। প্রধান সড়ক বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, জামালপুর, সুনামগঞ্জ, সিলেট ও মৌলভীবাজারসহ ১৬টি জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। খানাখন্দ সৃষ্টি হয়ে অধিকাংশ সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক এলাকায় সড়কের মাটি ধসে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। কোথাও কোথাও সেতুও চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
এদিকে পরিস্থিতি মোকাবেলায় নানা পদক্ষেপ নিয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। জরুরি অবস্থায় ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয়ের জোনভিত্তিক সমন্বয় ও মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে। ১৬ জেলায় বিশেষ মনিটরিং, মাঠ পর্যায়ে কর্মকর্তাদের নিজ দফতরে অবস্থান করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলীর তত্বাবধায়নে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু থাকবে, যেখানে বিপর্যয়মূলক পরিস্থিতির তথ্য-উপাত্ত পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার আগেই মন্ত্রণালয়কে অবহিত করার সুযোগ রাখা হয়েছে।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মোস্তফা কামাল জানান, সম্প্রতি অতিবর্ষণ ও বন্যার ফলে দেশের যেসব সড়কে নাজুক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, সেখানে আমরা দ্রুততার সঙ্গে মেরামতসহ সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করব। এ ছাড়া সারাদেশে সড়কের সার্বিক দিক দেখভালের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে উচ্চ পর্যায়ের মনিটরিং টিম কাজ শুরু করেছে। তারা শুক্র ও শনিবার দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিদর্শনের মাধ্যমে সার্বিক চিত্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করবে। আমরা যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে যা যা করা দরকার সব ধরনের ব্যবস্থাই করব।
রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি সড়ক বিভাগের আওতায় খাগড়াছড়ি-রাঙ্গামাটি-বান্দরবান আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং কেরানীহাট-বান্দরবান জাতীয় মহাসড়কের কয়েকটি অংশ পানিতে তলিয়ে আছে। জামালপুর-সুনামগঞ্জ, নেয়ামতপুর-তাহেরপুর, কচিরঘাট-বিশ্বম্ভরপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং সিলেট-মৌলভীবাজারের তিন থেকে চার অংশ পানিতে তলিয়ে গেছে। চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি সড়কের ৫৮তম কিলোমিটারের কলাবাগান নামে একটি স্থানে মাটি ধসে যোগাযোগ বন্ধের পথে। সিলেট মহাসড়কের ১১তম কিলোমিটারে সিমেন্টবাহী একটি ট্রাক নিয়ে বেইলি ব্রিজ ভেঙে পড়েছে। শ্যামপুর-দুর্গাপুর মহাসড়কের কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কার মুখে রয়েছে। রংপুর-কুড়িগ্রাম অংশে কাউনিয়ার কাছাকাছি ২০০ মিটার অংশে ভারি যান চলাচলের জন্য প্রায় অযোগ্য হয়ে পড়েছে। পঞ্চগড় শহর এলাকায় করতোয়া নদীর ওপর নির্মিত সেতুর এক পাশের এক্সপানশন জয়েন্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যশোর-খুলনা মহাসড়ক নির্মাণাধীন থাকা অবস্থায়ও নানা ত্রুটি রয়েছে।
হবিগঞ্জ: দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান বলেন, চাল, ডাল চিড়া, ওষুধ, লবণ, চিনিসহ শুকনো খাবার মজুদ রেখেছি। হবিগঞ্জ জেলায় ৯শ’ টন চাল, নগদ ১৫ লাখ টাকা, ৪ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার ও ৫শ’ তাঁবু বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এ বন্যায় কোনো মানুষ না খেয়ে থাকবে না।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) নবীগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর ভাঙন, ঝুঁকিপূর্ণ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও পরিদর্শন শেষে দুপুর সাড়ে ১২টায় বিবিয়ানা নর্থ প্যাডসংলগ্ন মাঠে ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম।
জামালপুর: বন্যায় রেললাইনে পানি ওঠায় বন্ধ হয়ে গেছে জামালপুর-দেওয়ানগঞ্জ রুটে ট্রেন চলাচল। বন্যায় জেলার দেওয়ানগঞ্জ, ইসলামপুর, মেলান্দহ, মাদারগঞ্জ, সরিষাবাড়ী ও বকশীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা নায়েব আলী জানান, বন্যার পানিতে ২১.৫ কিলোমিটার পাকা সড়ক আংশিক ও ৭.৭৫ কিলোমিটার পাকা সড়ক সম্পূর্ণ তলিয়ে গেছে।
শেরপুর: জেলা সদর, নকলা, নালিতাবাড়ী, শ্রীবরদী ও ঝিনাইগাতীর নিম্নাঞ্চলের শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়ে কাঁচা-পাকা সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
রাঙ্গামাটি: ৬ জুলাই থেকে টানা বৃষ্টিতে জেলার সব সড়ক ঝুঁকির মুখে পড়েছে। গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়ক, রাঙ্গামাটি-খাগড়াছড়ি সড়ক ও রাঙ্গামাটি-বান্দরবান সড়কের একাধিক স্থানে ধসের ঘটনা ঘটেছে। এতে রাঙ্গামাটি-খাগড়াছড়ি সড়ক ও রাঙ্গামাটি-বান্দরবান সড়কে ভারি যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের ৫১টি স্থানে সড়ক ধসের ঘটনা ঘটেছে।
বান্দরবান: বিভিন্ন জায়গায় রাস্তা ভেঙে বন্ধ রয়েছে জেলা সদরের সঙ্গে রুমা, থানচি, রোয়াংছড়ি উপজেলার যান চলাচল। বান্দরবান-চট্টগ্রাম সড়কের বাজালিয়ায় পানি জমে থাকায় নয় দিন ধরে জেলার সঙ্গে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ বিঘ্নিত হয়েছে। বান্দরবান সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সজীব আহমেদ জানান, গত এক সপ্তাহে জেলার ৩৬টি জায়গায় প্রায় ১০ কিলোমিটার সড়ক পুরোপুরি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
চট্টগ্রাম: ১৫ উপজেলার সবগুলোতে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। চট্টগ্রাম-ঢাকা, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার, চট্টগ্রাম-হাটহাজারী-রাঙ্গামাটি, কেরানীহাট-বান্দরবান, চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম-রাঙ্গুনিয়া-রাউজান, চট্টগ্রাম-আনোয়ারা-বাঁশখালী-পেকুয়া সড়কে বিভিন্ন আকারের গর্তে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।
গাইবান্ধা: সদর, ফুলছড়ি, সুন্দরগঞ্জ ও সাঘাটা উপজেলায় কয়েকশ’ কিলোমিটার কাঁচা ও পাকা রাস্তা তলিয়ে গেছে। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করায় আরো তলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে কয়েকশ’ কিলোমিটার কাঁচা ও পাকা সড়ক।
কুড়িগ্রাম: জেলার নয় উপজেলার ৬০টি ইউনিয়নের সঙ্গে জেলা কিংবা উপজেলার কাঁচা-পাকা সড়ক যোগাযোগ একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ওইসব এলাকার লোকজনকে জরুরি প্রয়োজনে কোমর পানি ভেঙে থানা কিংবা জেলা সদরে যেতে হচ্ছে।
রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপংকর রায় জানান, উপজেলার ৯০ শতাংশ এখন পানির নিচে। জেলা বন্যা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ জানায়, তাদের হিসাবে জেলায় এ পর্যন্ত ৭২ কিলোমিটার কাঁচা ও ১৫ কিলোমিটার পাকা রাস্তা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) চিলমারী পয়েন্টের গেজ রিডার মো. মাহফুজার রহমান জানান, বৃহস্পতিবার সকালে ব্রহ্মপুত্র নদের চিলমারী পয়েন্টে পানি ৪ সেন্টিমিটার কমেছে। তবে এখনো বিপদসীমার ১২৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উলিপুরে মধ্য নাওড়া গ্রামে ববিতা (১৯) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে।
সিরাজগঞ্জ: কাজিপুর উপজেলার নাটুয়ারপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান চাঁন জানান, গত রোববার থেকে যমুনা নদীর পানির স্রোত বাড়তে থাকায় নাটুয়ারপাড়া-খাসরাজবাড়ী সড়কে ধস দেখা দেয়। গত মঙ্গলবার বাঁধটির ২৫০ মিটার ধসে যায়। ফলে এ দুটির এলাকার মানুষের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
লালমনিরহাট: পাঁচটি উপজেলার ২০টি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত হওয়ায় এগুলোর গ্রামীণ রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলার স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশলী অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী একেএম আমিরুজ্জামান জানান, এবারের বন্যায় গ্রামীণ রাস্তাঘাটের বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, যা নিরূপণে কাজ চলছে। ধরলা নদীতে ডুবে ইশি মনি (২) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
নীলফামারী: ডিমলা উপজেলার পূর্বছাতনাই, খালিশাচাপানী, ঝুনাগাছ চাপানী, খগাখড়িবাড়ী, টেপাখড়িবাড়ী এবং জলঢাকার শৌলমারী ইউনিয়নের প্রায় ৩৭ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক বিধ্বস্ত হয়েছে।
বিভাগ : বাংলাদেশ
- রেডি টু কুক মৎস্যপণ্য উৎপাদন গবেষণা আরও জোরদার করতে হবে: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা
- নরসিংদীতে পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশনের আহবায়ক কমিটি গঠন
- নরসিংদীতে সততা চর্চার অভ্যাস গড়তে শিক্ষার্থীদের বিতর্ক প্রতিযোগিতা
- বেলাবতে অনুপস্থিতিসহ দুর্নীতির অভিযোগে কলেজ অধ্যক্ষের অপসারণ দাবি
- মাধবদীতে জুট ব্যবসা নিয়ে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ৩
- এক দফার আন্দোলন শুধু দুই মাসের নয়, ১৬ বছরের আন্দোলন: খায়রুল কবির খোকন
- নরসিংদীতে বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে জেলা বিএনপির বর্ণাঢ্য র্যালি
- স্ত্রীর সঙ্গে কলহের জেরে ট্রেনের নীচে ঝাঁপ দিয়ে স্বামীর আত্মহত্যা
- যক্ষ্মারোগ নিয়ন্ত্রণে সাংবাদিকদের ভূমিকা শীর্ষক মতবিনিময়
- আওয়ামী লীগ ভেবেছিল তারা চিরকাল ক্ষমতায় থাকবে: খায়রুল কবির খোকন
- রেডি টু কুক মৎস্যপণ্য উৎপাদন গবেষণা আরও জোরদার করতে হবে: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা
- নরসিংদীতে পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশনের আহবায়ক কমিটি গঠন
- নরসিংদীতে সততা চর্চার অভ্যাস গড়তে শিক্ষার্থীদের বিতর্ক প্রতিযোগিতা
- বেলাবতে অনুপস্থিতিসহ দুর্নীতির অভিযোগে কলেজ অধ্যক্ষের অপসারণ দাবি
- মাধবদীতে জুট ব্যবসা নিয়ে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ৩
- এক দফার আন্দোলন শুধু দুই মাসের নয়, ১৬ বছরের আন্দোলন: খায়রুল কবির খোকন
- নরসিংদীতে বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে জেলা বিএনপির বর্ণাঢ্য র্যালি
- স্ত্রীর সঙ্গে কলহের জেরে ট্রেনের নীচে ঝাঁপ দিয়ে স্বামীর আত্মহত্যা
- যক্ষ্মারোগ নিয়ন্ত্রণে সাংবাদিকদের ভূমিকা শীর্ষক মতবিনিময়
- আওয়ামী লীগ ভেবেছিল তারা চিরকাল ক্ষমতায় থাকবে: খায়রুল কবির খোকন