অন্যদেশের তুলনায় বাংলাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত-মৃত্যু কম: স্থানীয় সরকার মন্ত্রী

১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৫:০৯ পিএম | আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩০ এএম


অন্যদেশের তুলনায় বাংলাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত-মৃত্যু কম: স্থানীয় সরকার মন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক:

এশিয়াসহ বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগী এবং মৃতের সংখ্যা কম বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।

মন্ত্রণালয়, সিটি কর্পোরেশন এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের পদক্ষেপের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে বলেও জানান মন্ত্রী।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে স্থানীয় সরকার বিভাগের সভা কক্ষে অনুষ্ঠিত সারাদেশে মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে সিটি কর্পোরেশন ও অন্যান্য মন্ত্রণালয়/বিভাগ, দপ্তর/সংস্থার কার্যক্রম পর্যালোচনার লক্ষ্যে আন্ত:মন্ত্রণালয় সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা জানান।

মন্ত্রী বলেন, এডিস বা ডেঙ্গু নিয়ে ২০১৯ সালে আমাদের তিক্ত অভিজ্ঞতা থাকলেও ২০২০,২১ ও ২২ সাল এই তিন বছর আমাদের পাশ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় আমরা সফলতা অর্জন করেছি। কিন্তু আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌছেতে পারিনি। বর্তমানে আবার এডিস মশার প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। একই সঙ্গে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। তবে আমরা এশিয়ার অনেক দেশগুলোর তুলনায় আমরার অনেক ভালো আছি।

অন্যদের সাথে তুলনা করে কি আত্মতুষ্টিতে ভুগছেন- সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আত্মতুষ্টির বিষয় নয়। একারণে আমরা ব্যথিত, দুঃখিত এবং উদ্বিগ্ন, যে কারণে আজকে সভা করা। মানুষের আক্রান্ত হওয়া এবং মৃত্যু আমাদের কাছে দুঃখজনক। একজন মানুষেরও মৃত্যু কেন হবে! তিনি বলেন, বিভিন্ন দেশের সাথে তুলনা করার কারণ আমাদের অবস্থান এবং তাদের দেশের অবস্থান জানা। সমস্যা সমাধানে সকল দেশই চেষ্ঠা করে। আমরাও করছি।

বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করে ছিলেন এবছর ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ২০১৯ সালের থেকে বেশি হবে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, তারা তাদের বিভিন্ন গবেষণা থেকে ধারণা করেছেন। তাদের ধারণা যে সব সময় ঠিক হবে সেটা বলা যাবে না৷ এর আগেও তারা ভবিষ্যত বাণী করেছিলো কিন্তু তা ঘটেনি।

চলতি বছরে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সর্বশেষ পরিসংখ্যান তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, সিঙ্গাপুরে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ২৬ হাজার ৯৭০ জন, ভারতে ৩০ হাজার ৬২৭ জন, মালয়েশিয়ায় ৩৩ হাজার, ফিলিপাইনে ৮২ হাজার ৫৯৭ জন, কোম্ভোডিয়াতে ৩ হাজার ৩২২ জন, ভিয়েত নামে এক লাখ ৪৫ হাজার ৫৩৬ জন, ইন্দোনেশিয়াতে ৬৮ হাজার ৯০৩ জন এবং বাংলাদেশে ৯ হাজার ৮৩৭ জন। আর বাংলাদেশে চলতি বছরে এখন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ৯ হাজার ৮ শো ৩৭ জন।

তিনি বলেন, ২০১৯ সালের পর আমরা ক্লাস্টার ভিত্তিক অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেই। এরপর প্রতিটা ওয়ার্ডকে ১০ জোনে ভাগ করে কাউন্সিলরকে প্রধান করে কমিটি করে দিয়েছি। ওইসব এলাকায় কি পরিমাণ মশা নিধনের জন্য ওষুধ লাগবে তা নির্ণয় করে তা আমদানি করা বা মজুদ করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। জনবল সংকটছিলো একদিনে ৩ হাজার জনবল নিয়োগ দেয়া হয়েছে। যেখানে ফগার মেশিন ছিলে না সেখানে কেনার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে টাকা দেয়া হয়েছে। এছাড়া মশা নিধনের প্রতিশোধক আমদানিতে সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করা হয়েছে।

বর্তমানে ঢাকাতে করোনার থেকে ডেঙ্গু রোগীর আক্রান্তের ও মৃত্যুর সংখ্যা বেশি এ বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে মো. তাজুল ইসলাম বলেন আমার কাছে যে তথ্য আছে সেটা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্য। জানুয়ারি থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গ আক্রান্তের সংখ্যা ৯ হাজার ৮৩৭ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৩৯ জনের। এর মধ্যে ঢাকা ও কক্সবাজারে মৃত্যু হয়েছে ১৭ জন করে মোট ৩৪ জন। চট্টগ্রামে ১ জন ও বরিশালে ৪ জন ডেঙ্গ রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া ভারতে ১২ জন, ফিলিপাইনে ৩১৯জন, ইন্দোনেশিয়াতে ৬৪০ জন, ভিয়েন নামে ৫৩ জন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে।

সিটি কর্পোরেশনের সাম্প্রতিক উচ্ছেদ অভিযান প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশনগুলো মানুষের জন্য কল্যাণকর কাজ করে থাকে। নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করাই সিটি কর্পোরেশনের কাজ। কোনো কাজের মাধ্যমে যদি মানুষ হয়রানির শিকার হয় তা সমাধান করা মেয়রের দায়িত্ব। হকাররা হাঁটা চলার পথ এবং রাস্তার উপরে দোকান বসায় এটা সমর্থনযোগ্য নয়। এজন্য মেয়রদ্বয় এসব বিষয়ে উদ্যোগ নিচ্ছেন।

সভায় দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী, পূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব শহীদ উল্লা খন্দকার, ওযাসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান ছাড়াও মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/সিটি করপোরেশন, বিভাগ/সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।


বিভাগ : বাংলাদেশ


এই বিভাগের আরও