বাংলাদেশে সরকারি হিসেবের পাঁচগুণ বেশি করোনায় মৃত্যু: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

০৬ মে ২০২২, ০৩:৫৫ পিএম | আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:১৬ পিএম


বাংলাদেশে সরকারি হিসেবের পাঁচগুণ বেশি করোনায় মৃত্যু: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

টাইমস ডেস্ক:

করোনা মহামারিতে বাংলাদেশে সরকারি হিসেবের পাঁচগুণ বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সংস্থাটির এই প্রতিবেদনকে যৌক্তিক বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্যবিদরাও। তারা বলছেন, করোনার লক্ষণ, মুক্ত হবার পর মৃত্যু আর শনাক্ত না হওয়া, এসব কারণে প্রকৃত তথ্য ওঠে আসেনি সরকারি রিপোর্টে। তবে বিষয়টি নিয়ে এখনই আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি স্বাস্থ্য অধিদফতর।

২০২১ এর ডিসেম্বর পর্যন্ত পৃথিবীতে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৫৪ লাখের মতো। এই সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, প্রকৃত সংখ্যা গোপন করেছে অনেক দেশ। তাদের দাবি, প্রায় দেড় কোটি মানুষ মরেছে কোভিডে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তা উইলিয়াম সেমবারি বলেন, আমাদের ধারণা বিশ্বব্যাপী গেল ডিসেম্বর পর্যন্ত ১ কোটি ৪৯ লাখ মানুষ করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে। তথ্য উপাত্ত বলছে আনুষ্ঠানিক হিসেবের চেয়েও মৃত্যু হয়েছে প্রায় তিনগুণ। অনেক দেশ তথ্য গোপন করেছে বলে আমাদের ধারণা।

বাংলাদেশে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কোভিডে মারা গেছেন ২৯ হাজার ১২৭ জন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, প্রকৃত মৃত্যু এর অন্তত ৫ গুণ বেশি। এর পেছনে দেশের গড় মৃত্যুহারসহ করোনার পরোক্ষ মৃত্যুর তথ্যকেও আমলে নিয়েছে সংস্থাটি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক মুজাহেরুল হক বলেন, স্বাভাবিক মৃত্যু, করোনায় মৃত্যু নাকি করোনা সৃষ্ট জটিলতায় মৃত্যু- এই তিন ধরনকে আলাদাভাবে লিপিবদ্ধ করতে হবে। আমাদের দেশে তা হয়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যে রিপোর্ট এসেছে তা বিজ্ঞানসম্মত। তারা অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, সঠিকভাবে তথ্যগুলো লিপিবদ্ধ করা হয়নি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্য অধ্যাপক বে-নজির আহমেদ বলেন, সরকার যেটা বলছে ৩০ হাজার, প্রকৃত মৃত্যু অবশ্যই তার চেয়ে বেশি। যেমন ধরুন, একজন মানুষ কোভিড আক্রান্ত হওয়ার পর সেরে উঠলেন। রাস্তা পার হওয়ার সময় দুর্ঘটনায় তিনি মারা গেলেন। কোভিড হওয়ার আগে তিনি যেরকম সতর্কতার সাথে রাস্তা পার হতে পারতেন, কোভিডের পরে সেটি আর তিনি পারেননি। এই মৃত্যুকে সড়ক দুর্ঘটনা বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে এর কারণ কোভিড।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় কাজ করা এই দুই জনস্বাস্থ্যবিদ বলছেন, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনে এদেশের মানুষের আগ্রহ কম। করোনাকালেও বহাল ছিল সেই প্রবণতা। আর দেশের একটা বিশাল জনগোষ্ঠীকে যে কোভিড টেস্টের আওতায় আনা যায়নি, তাও স্মরণ করিয়ে দেন তারা। প্রকাশিত রিপোর্ট বিচার বিশ্লেষণ করে পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দেন তারা। অধ্যাপক মুজাহেরুল হক বলেন, করোনাকালে আমরা দেখেছি, অনেকের কোভিড শনাক্ত হয়নি। আবার অনেকে মৃত্যুর কারণ গোপন করেছেন। এভাবেই করোনায় মৃত্যুর সঠিক তথ্য লিপিবদ্ধ হয়নি।

অধ্যাপক বে-নজির আহমেদ বলেন, কখন বলা যাবে করোনায় মৃত্যু? যখন করোনা পজেটিভের নথি থাকবে। অসংখ্য মানুষের মৃত্যু হয়েছে কিন্তু আমরা টেস্ট করতে পারিনি। তাদের কতজনের করোনা, তা আমরা জানি না। এমনকি, করোনার লক্ষণ নিয়ে হাসপাতালে এসে মৃত্যু হয়েছে, কিন্তু তাদের করোনা পজেটিভ দেখানো হয়নি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই প্রতিবেদন নিয়ে এখনি কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি স্বাস্থ্য অধিদফতর। দায়িত্বশীলরা বলছেন, পর্যালোচনা করতে সময় লাগবে আরও। স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা যমুনা নিউজকে বলেন, আমরা আগে রিপোর্টটি দেখে নিই। তারপর জানাবো। প্রক্রিয়া কী হবে তা এখনি জানি না। কারণ, অনেকেই এখন ছুটিতে। ঈদের আমেজ তো এখনও শেষ হয়নি। রোববারের আগে আমি এ বিষয়ে বেশি কিছু বলতে পারছি না।

‘অতিরিক্ত মৃত্যু গণনা’ পদ্ধতি আর মহামারির আগে ও পরে মৃত্যুহারের ওপর ভিত্তি করে এই রিপোর্ট প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

সূত্র: যমুনা টেলিভিশন অনলাইন


বিভাগ : বাংলাদেশ