যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিনই বঙ্গবন্ধু সবার অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন: রাষ্ট্রপতি

০৯ নভেম্বর ২০২০, ০৯:৩৮ পিএম | আপডেট: ০৯ মে ২০২৪, ১০:৩২ পিএম


যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিনই বঙ্গবন্ধু সবার অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন: রাষ্ট্রপতি
বক্তব্য রাখছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ।

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ বলেছেন, বঙ্গবন্ধু নিজের জীবন উৎসর্গ করে বাংলার মানুষের ভালোবাসার প্রতিদান দিয়ে গেছেন। ঋণী করে গেছেন বাঙালি জাতিকে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু একটি নাম নয়, একটি ইতিহাস। বঙ্গবন্ধু একটি প্রতিষ্ঠান, একটি সত্তা, একটি ইতিহাস। জীবিত বঙ্গবন্ধুর মতোই অন্তরালের বঙ্গবন্ধু শক্তিশালী। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, বাঙালি থাকবে, এদেশের জনগণ থাকবে, ততদিনই বঙ্গবন্ধু সবার অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ-২০২০’ উপলক্ষে সোমবার (৯ নভেম্বর) জাতীয় সংসদের বিশেষ অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সন্ধ্যা ৬টায় সংসদের বিশেষ অধিবেশন শুরু হয়। বিউগলে রাষ্ট্রপতির আগমনী অর্কেস্ট্রা বাজানোর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ৬টা ৭ মিনিটে সংসদ কক্ষে পৌঁছলে প্রথা অনুযায়ী জাতীয় সঙ্গীত বাজানো হয়। সরকার ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যসহ অধিবেশন কক্ষে থাকা সবাই দাঁড়িয়ে রাষ্ট্রপতিকে সম্মান জানান।

এরপর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দেওয়া দুর্লভ ভাষণ সংসদ কক্ষে দেখানো হয়। এ সময় পুরো অধিবেশনে নেমে আসে পিনপতন নীরবতা। এরপর ৬টা ৩৪ মিনিটে স্পিকারের পাশে রাখা ডায়াসে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা করেন রাষ্ট্রপতি, যিনি গণপরিষদ ও দেশের প্রথম সংসদের সবচেয়ে কনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে আইনসভায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে দেখেছেন।

রাষ্ট্রপতি শুরুতেই দেশবাসীসহ দেশের বাইরে বসবাসরত সকল প্রবাসীকে মুজিববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ-২০২০’ উপলক্ষে জাতীয় সংসদের বিশেষ অধিবেশনে থাকতে পারা আমার জন্য অত্যন্ত আনন্দ ও গৌরবের বিষয়। এটি আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি। এজন্য মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে অশেষ শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি। চলমান করোনা পরিস্থিতিতে বিশেষ অধিবেশনের আয়োজন নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। আমি আশা করি অধিবেশনের কার্যক্রম বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম সম্পর্কে জানাতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। এ ছাড়া জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অধিবেশনে জাতির পিতাকে সম্মান জানানোর মাধ্যমে আমরা নিজেরাও সম্মানিত হবো।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন এক বিশাল হৃদয়ের মানুষ। নিজে স্বপ্ন দেখতেন এবং মানুষকে স্বপ্ন দেখাতেন। দেশের মানুষের প্রতি তার আস্থা, ভালোবাসা ও বিশ্বাস ছিল অপরিসীম। নিজের জীবন উৎসর্গ করে বাংলার মানুষের ভালোবাসার প্রতিদান দিয়ে গেছেন। ঋণী করে গেছেন বাঙালি জাতিকে। জাতির পিতার আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে জাতি এগিয়ে যাক ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার পথে, নোঙ্গর ফেলুক বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলায়’।

আবদুল হামিদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তোলার অঙ্গীকার বাস্তবায়নে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন ঐক্য। জনগণের ঐক্য, বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের ঐক্য। যে ঐক্য একাত্তরে আমাদের এক করেছিল, সেই ঐক্যই গড়ে তুলতে হবে সাম্প্রদায়িকতা, অগণতান্ত্রিকতা, অসহিষ্ণুতা ও সহিংসতার বিরুদ্ধে।

রাষ্ট্রপতি বলেন, এক সাগর রক্তের বিনিময়ে পাকিস্তানি হানাদারদের কবল থেকে আমরা যে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছি, তাকে রক্ষা করতে হবে। স্বাধীনতার সুফল প্রতিটি ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে। আর গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে রাজনৈতিক দলগুলোকে পরমতসহিষ্ণুতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।

তিনি বলেন, যারা বাস্তবকে অস্বীকার করে কল্পিত কাহিনী ও পরিস্থিতি বানিয়ে দেশের সরলপ্রাণ মানুষকে বিভ্রান্ত ও বিপথগামী করে দেশের শান্তি ও অগ্রগতির ধারাকে ব্যাহত করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে একাত্তরের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। তাহলেই প্রতিষ্ঠিত হবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা, সার্থক হবে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন।

চলতি বছরের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ১৭ মার্চ পর্যন্ত মুজিববর্ষ পালনের সিদ্ধান্ত খুবই তাৎপর্যপূর্ণ উল্লেখ করে আবদুল হামিদ বলেন, মুজিববর্ষ পালনের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর জীবন-কর্ম, চিন্তা-চেতনা ও দর্শন ছড়িয়ে দিতে হবে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের তরুণ প্রজন্মের কাছে। বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের মুক্তির জন্য বঙ্গবন্ধুর জীবন ও রাজনৈতিক দর্শন একবিংশ শতাব্দীতেও পরিপূর্ণ প্রাসঙ্গিক, আধুনিক, যুগোপযোগী এবং ভবিষ্যতেও চির অম্লান থাকবে।

রাষ্ট্রপতি আশা প্রকাশ করেন যে দেশের বরেণ্য রাজনীতিবিদ, ইতিহাসবিদ, শিক্ষাবিদ, গবেষক ও সাংবাদিকরা বঙ্গবন্ধুর জীবন, কর্ম ও আদর্শ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবেন।

রাষ্ট্রপতি তার দীর্ঘ ভাষণে আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশকে আলাদা করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। বাংলাদেশকে জানতে হলে, বাঙালির মুক্তি সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানতে হবে, বঙ্গবন্ধুকে জানতে হবে। এ দুই সত্তাকে আলাদাভাবে দেখার চেষ্টা যারা করেছেন তারা ব্যর্থ হয়েছেন। আজকের বাস্তবতা এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর জাতির পিতার আদর্শকে ধারণ করে জাতি এগিয়ে যাক ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার পথে, নোঙর ফেলুক বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায়।

তিনি জানান, ১৬ কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত এ দেশে নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও শুধু মানবিক বিবেচনায় পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার থেকে আগত প্রায় ১০ লাখ বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়া হয়েছে। এসব শরণার্থীদের নিজ দেশে সসম্মানে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য বাংলাদেশ জাতিসংঘসহ বিশ্ব ফোরামে বারবার বিষয়টি উত্থাপন করেছে। ইতোমধ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর পাশবিক নির্যাতন, গণহত্যার বিষয়টি আন্তর্জাতিক আদালতে উত্থাপিত হয়েছে এবং আদালত মিয়ানমার সরকারের প্রতি প্রাথমিক কিছু নির্দেশনা জারি করেছে।

আমরা চাই বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা শরণার্থীরা সসম্মানে নিজ দেশে ফিরে যাক। জাতিসংঘসহ সকল আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দেশকে আমি এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের জন্য পুনরায় আহ্বান জানাচ্ছি, বলেন রাষ্ট্রপতি।


বিভাগ : বাংলাদেশ


এই বিভাগের আরও