আত্মবিশ্বাস এবং সাহসের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলার তাগিদ প্রধানমন্ত্রীর

১০ মে ২০২০, ০৮:১৭ পিএম | আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৪৫ পিএম


আত্মবিশ্বাস এবং সাহসের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলার তাগিদ প্রধানমন্ত্রীর
বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক:

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মানুষের জীবন-জীবিকা চালাতেই বন্ধ পরিস্থিতি ক্রমশ শিথিল করা হচ্ছে। আমরা কিছু কিছু ধীরে ধীরে উন্মুক্ত করার চেষ্টা করছি। কিছু জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা যাতে মানুষ করতে পারে সেই ব্যবস্থা করছি। কারণ, এটা রোজার মাস। তিনি আত্মবিশ্বাস এবং সাহসের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলার তাগিদ দিয়ে বলেন, অসুখ-বিসুখ হলে মনে সাহস রাখতে হবে। কেবল ডাক্তার এবং ওষুধেই রোগ ভালো হবে না। মনের জোর থেকে, আত্মবিশ্বাস থেকেও কিন্তু অনেকটা সুস্থ হওয়া যায়।

রোববার (১০ মে) প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলায় দেশের ৫৭টি প্রতিষ্ঠান, সংস্থা এবং ব্যক্তিবিশেষের পক্ষ থেকে প্রদান করা অনুদানের অর্থ গ্রহণকালে প্রদত্ত ভাষণে এ কথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে যেসব নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যেসব নির্দেশনা দিয়েছে- পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা, এক জায়গায় জটলা না করা- যাতে সংক্রমণ ছড়াতে না পারে, সকলকেই সেটা মেনে চলতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের (পিএমও) সঙ্গে সংযুক্ত হন। পিএমওতে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস তার পক্ষে অনুদানের চেক গ্রহণ করেন।

সবাইকে মাহে রমজানের মোবারকবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবার কষ্টের বিষয়টি উপলদ্ধি করেই সরকার ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দেয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যেহেতু বোরো ধান উঠেছে তাই খাবারের সেই কষ্টটা মানুষের হওয়ার কথা নয়। তিনি এ সময় পারস্পরিক সহমর্মিতা বৃদ্ধির অংশ হিসেবে যারা বেশি ধান পেয়েছেন তারা কম ধান পাওয়া লোকজনকে যেন সাহায্য করেন, সেই তাগিদ দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষ মানুষের জন্য। এই কথাটা চিন্তা করেই সবাইকে কাজ করতে হবে।

মানুষ মাঝে মাঝে এমন ভীত হয়ে যায় যে, অনেক অমানবিক আচরণও করে ফেলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একজন পরিবারের সদস্য যখন অসুস্থ হয়ে পড়ে তখন তার কী অসুখ হলো না জেনেই তাকে দূরে ঠেলে দেয়াটা ঠিক নয়। তিনি বলেন, নিজেকে সুরক্ষিত রেখে হাতে গ্লাভস এবং মুখে মাস্ক ব্যবহার করে পরিবারকে সহযোগিতা করলে, এতে খুব একটা ক্ষতির কারণ হবে বলে আমি মনে করি না। কিন্তু সন্তান হয়ে পিতাকে দূর করে দেয়া বা স্ত্রী হয়ে স্বামীকে দূর করে দেয়া, বা মাকে দূর করে দেয়া- এটা কখনই কল্যাণকর নয়।

তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা তথা পুলিশ বাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, তারা লাশ দাফন, রোগী টানা থেকে শুরু করে সব ধরনের কাজই করে যাচ্ছে। তাদের সঙ্গে আমরা ছাত্রলীগের কর্মীদেরও দেখেছি। অনেক ক্ষেত্রে যেখানে লাশ দাফন করার কেউ নেই, তারা নিজেরা গিয়ে সেখানে লাশ দাফন করছে। শেখ হাসিনা বলেন, এই যে মানবিক গুণগুলো, এটাই হচ্ছে মনুষত্ব। আর এটাই আমাদের বাঙালির সব থেকে বড় পরিচয়। এই চরিত্রটাই সবার থাকা দরকার বলে আমি মনে করি। এ সময় তিনি কর্তব্য পালন করতে গিয়ে মৃত্যুবরণকারী পুলিশ সদস্যদের রুহের মাগফিরাতও কামনা করেন।

কোভিড-১৯ মহামারির কারণে দেশে যেন কোনো খাদ্য সংকট না হয়, সে জন্য তার সরকার বিশেষভাবে দৃষ্টি দিয়েছে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ব্যাপক ধান উৎপাদন হয়েছে, খাদ্যের কোনো অভাব নেই এবং সরকার ব্যাপকভাবে ত্রাণ বিতরণও করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, সরকারিভাবে যেমন ত্রাণ সরবরাহ করা হচ্ছে তেমনি দলীয় এবং ব্যক্তিগত পর্যায়েও করা হচ্ছে, সাধারণ মানুষ যে যেমনভাবে পারছে অপরকে সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। এটাই হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষের বিরাট একটা আন্তরিকতা, সবাই সবার তরে সবাইকে সাহায্য-সহযোগিতা করে যাচ্ছে।

শেখ হাসিনা পুনরায় ফসল উৎপাদন বাড়ানোর উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বলেন, কারও এতটুকু জমিও যেন খালি পড়ে না থাকে, যে যা পারেন তাই উৎপাদন করবেন। যাতে আগামীতে কখনও খাবারের কোনো অভাব না হয়। কোনো ধরনের দুর্ভিক্ষ যাতে বাংলাদেশে আসতে না পারে বরং প্রয়োজনে যেন আমরা অন্যকে সহযোগিতা করতে পারি। এক জমিতে একাধিক ফসল উৎপাদনের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, বর্তমান সময়ের বোরো ধান ঘরে তোলার পর সেই জমিতে আর কী কী ফসল উৎপাদন করা যায় তা খতিয়ে দেখার জন্য তিনি কৃষিমন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছেন।

তিনি এ সময় টেলভিশনের মাধ্যমে পাঠ্যক্রম পরিচালনা করায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আমাদের সংসদ টিভির মাধ্যমে শিক্ষার যে একটা পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে এবং ক্লাসগুলো যে প্রচার করা হচ্ছে তাতে কিছুটা হলেও ছেলেমেয়েরা লেখাপড়ার দিকে মনোযোগী থাকতে পারছে। কারণ, ঘরে বসে থেকে থেকে এই ছোট্ট শিশুরা কী করবে, তাদের কষ্টটাই সবথেকে বেশি। শহরে যারা বাস করে তাদের জন্য এই অবস্থাটা সত্যিই বেশ কষ্টকর, বলেন তিনি।

দেশকে যখন তার সরকার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল, সে যাত্রাকে করোনাভাইরাস অনেকাংশে ব্যাহত করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই দেশকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। কাজেই, আমাদের থেমে থাকলে চলবে না, এগিয়ে যেতে হবে। কারণ, তিনি চেয়েছিলেন এই দেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত করে গড় তুলবেন। আমরা দারিদ্র্যমুক্তির অনেক পদক্ষেপ নিয়েছিলাম। সফলতাও এনেছিলাম এবং আশা ছিল খুব শিগগিরই বাংলাদেশ দারিদ্র্যমুক্ত হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের লক্ষ্য ছিল মুজিববর্ষ থেকে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ২০২০ থেকে ২০২১ এর মধ্যেই বাংলাদেশ দারিদ্র্যমুক্ত হবে। তবে করোনাভাইরাসের কারণে সেখানে একটা বিরাট ধাক্কা লেগেছে। অবশ্য আমি আশা করি এই বাধা দূর করেই আগামীতে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। আর বিশ্বব্যাপী যে সমস্যা সেটিও দূর হবে।

প্রধানমন্ত্রী নিজেকে সুরক্ষিত রেখেই আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, আন্তরিকতার সঙ্গে এখানে কাজ করতে হবে এবং সকলকে সহযোগিতা করতে হবে। আবার নিজেকেও সুরক্ষিত রাখতে হবে এবং স্বাস্থ্যবিধি মোতাবেক চলতে হবে। তাহলেই এই রোগ থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পারবেন।

তিনি তার ত্রাণ তহবিলে সহযোগিতার মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে আসা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সংগঠন এবং ব্যক্তিবিশেষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, আপনারা যে সহযোগিতার মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে এসেছেন, তাকে আমরা মানুষের কাছে পৌঁছে দেব।

প্রধানমন্ত্রী এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে সকলকে মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে করুণা ভিক্ষার আহ্বান জানিয়ে বলেন, যেহেতু রমজান মাস তাই সবাই আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কোছে বেশি করে দোয়া করেন। যাতে এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পাই, এই ভাইরাস থেকে মানবজাতি মুক্তি পেতে পারে। তিনি সকল ধর্মাবলম্বীদের নিজ নিজ নিয়মে সৃষ্টিকর্তার নিকট প্রার্থনা করারও অনুরোধ জানান।


বিভাগ : বাংলাদেশ


এই বিভাগের আরও