চারলেনের মহাসড়কে টোল আদায় পদ্ধতি ও পরিমাণ নির্ধারণে হচ্ছে কমিটি

০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১১:৪৬ এএম | আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৬ পিএম


চারলেনের মহাসড়কে টোল আদায় পদ্ধতি ও পরিমাণ নির্ধারণে হচ্ছে কমিটি
ছবি সংগৃহিত

টাইমস ডেস্ক:

সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের আওতাধীন দেশের সকল চারলেনের মহাসড়কে টোলের পরিমাণ ও আদায়ের পদ্ধতি নির্ধারণের প্রস্তাবনা তৈরির জন্য উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠিত হচ্ছে। কমিটির সুপারিশের আলোকে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-রংপুর, ঢাকা-ফরিদপুর (ভাঙ্গা) ও জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়কে টোল আদায়ের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেয়া হবে।

গত মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) একনেকের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের জাতীয় মহাসড়কগুলো টোলের আওতায় আনার নির্দেশ দেন। এরপর থেকেই এ সংক্রান্ত প্রস্তুতি শুরু করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, চারলেনের সড়কগুলোতে টোল আরোপের পরিকল্পনা আছে। এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব তৈরি করে অনুমোদনের পর কার্যকরের দিকে যাওয়া হবে।

তিনি আরো জানান, কয়েকটি চারলেন মহাসড়ক আছে, কিছু নির্মাণাধীন আছে। এসব বিবেচনায় রাখা হয়েছে।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা তারা গণমাধ্যমে জেনেছেন। সড়ক বিভাগের সচিব চারলেনের মহাসড়কে কীভাবে টোল আদায় করা যায় তার একটি প্রস্তাব তৈরির বিষয়ে তাদের সঙ্গে আলাপ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা আসার পরই এ সংক্রান্ত কমিটি গঠন করা হবে।

সূত্র আরো জানায়, বিদ্যমান নীতিমালায় সেতুর পাশাপাশি সড়কে গাড়ি চলাচলের ওপর টোল বিধান ও হার নির্ধারিত রয়েছে। বর্তমানে তিনটি মহাসড়কে টোল আদায় করা হচ্ছে। এ তিন মহাসড়কের দৈর্ঘ্য অনুযায়ী টোলের হারেও ব্যবধান রয়েছে। এর মধ্যে নলকা-হাটিকামরুল-বনপাড়ার ৫০ কিলোমিটার সড়কে ২০০৩ সালের ১ মে থেকে টোল আদায় হচ্ছে। এ সড়কে ট্রেইলারে ১৯০ টাকা, হেভি ট্রাকে ১৫০ টাকা, বড় বাসে ৬০ টাকা, মাইক্রোবাসে ৩০ টাকা, ৩-৪ চাকার গাড়িতে ১০ টাকা ও মোটরসাইকেলপ্রতি ৫ টাকা হারে টোল আদায় করা হয়।

২০০৫ সালের ১০ মার্চ থেকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের জগদীশপুর-শেরপুর অংশে (রুস্তমপুর টোল প্লাজা) টোল আদায় করা হয়। ৭৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এ মহাসড়কে ট্রেইলারে ২৮০ টাকা, হেভি ট্রাকে ২২৫ টাকা, বড় বাসে ৭৫ টাকা, মাইক্রোবাসে ৪৫ টাকা, ৩-৪ চাকার গাড়িতে ১০ টাকা ও মোটরসাইকেলপ্রতি ৫ টাকা হারে টোল আদায় করা হয়। আর ২০০৮ সালের ১৬ অক্টোবর থেকে টোল আদায় চলছে চট্টগ্রাম পোর্ট একসেস রোডে। মাত্র ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ হওয়ায় এ সড়কে টোলের হার অনেক কম। সংশ্লিষ্টরা জানান, মহাসড়কে টোল আরোপের ক্ষেত্রে এ তিনটি সড়কের টোল হার বিবেচনায় রাখা হবে।

সড়ক ও জনপথ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, সড়কে টোল আরোপের আগে অবকাঠামোগত পরিবর্তন ও স্থাপনা বসাতে হবে। যেমন- ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সঙ্গে কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালীসহ বিভিন্ন জেলা সড়ক রয়েছে। এছাড়া রাস্তার দুই পাশ দিয়ে অনেক সংযোগ সড়ক রয়েছে। একটি গাড়ি কোনো সড়ক দিয়ে এ মহাসড়কে উঠল, কোথায় যাবে তা শনাক্তের জন্য মহাসড়কে ব্যবস্থা রাখতে হবে। যে গাড়িটি ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাবে আর যে গাড়িটি কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম যাবে তা চিহ্নিত করার জন্য আলাদা ব্যবস্থা রাখতে হবে।

বিষয়টি স্বীকার করে সড়ক বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, টোল আদায়ের আগে মহাসড়কে চলাচলকারী গাড়িগুলোকে বাড়তি সুবিধা দিতে হবে। এজন্য মহাসড়কে ধীরগতি ও দ্রুতগতির গাড়ির জন্য পৃথক লেনের দরকার হবে। স্বল্পদূরত্বের গাড়ির জন্য পৃথক সার্ভিস লেনের প্রয়োজন হবে। তারা জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ চারলেন হলেও এ মহাসড়কের সঙ্গে আলাদা সার্ভিস লেন নেই। এ দুটি মহাসড়কে ধীরগতি ও দ্রুতগতির গাড়ি একই সঙ্গে চলাচল করে। অপরদিকে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত মহাসড়কটির সঙ্গে পৃথক সার্ভিস লেন করা হচ্ছে। তবে এ সড়কটির কাজ ২০২০ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে এসব মহাসড়কে শিগগিরই টোল আদায়ের কাজ শুরু করা সহজ হবে না। তবে বিলম্ব হলেও মহাসড়কে টোল আদায় অসম্ভব নয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।


বিভাগ : বাংলাদেশ


এই বিভাগের আরও