মন্ত্রী এমপিদের ‘অতিকথন’ সরকারে অস্বস্তি

২৮ জুলাই ২০১৯, ১২:৩৫ পিএম | আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:২৩ এএম


মন্ত্রী এমপিদের ‘অতিকথন’ সরকারে অস্বস্তি
পুরনো ছবি

টাইমস ডেস্ক:

সাম্প্রতিক সময়ে দেশে ডেঙ্গুজ্বর ও প্রিয়া সাহা ইস্যুতে মন্ত্রিসভার কয়েকজন সদস্য, এমপি ও মেয়রের ‘অতিকথনে’ সরকারে অস্বস্তির সৃষ্টি করেছে। তাদের বক্তব্যের কড়া সমালোচনা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের পাশাপাশি রাজনীতি বিশ্লেষকরাও সমালোচনা করছেন। তারা বলেছেন, মন্ত্রী এমপিদের ভেবে-চিন্তে এসব ইস্যুতে কথা বলা উচিত। এ পরিপ্রেক্ষিতে নেতাদের দায়িত্বহীন কথা না বলার পরামর্শ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও।

একাদশ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। এরই ধারাবাহিকতায় অপেক্ষাকৃত নবীনদের নিয়ে গঠন করা হয় মন্ত্রিপরিষদ। এরই মধ্যে একবার রদবদল, আরেকবার নতুন মুখকে স্থান দেয়া হয় মন্ত্রিসভায়। সেই মন্ত্রিসভার প্রতিটি সদস্যই গুরুত্বের সাথে কাজ করছিলেন কয়েকমাস ধরেই। কিন্তু প্রিয়া সাহা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে অভিযোগ করেন- এদেশে সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে। সম্পত্তি কেড়ে নেয়া হচ্ছে। ৩ কোটি ৭০ লাখ সংখ্যালঘু মানুষ নিখোঁজ।

তার এ বক্তব্যের পর দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এ সমালোচনা থেকে বাদ যাননি মন্ত্রিসভার সদস্যরাও। তাদের কেউ বলছেন, ‘দেশে ফিরলে বিচারের আওতায় আনা হবে’, আবার কেউ বলছেন, ‘প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে তড়িঘড়ি আইন ব্যবস্থা নয়, ‘প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে হুট করেই ব্যবস্থা না’, তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে...।

এদিকে ডেঙ্গুজ্বর নিয়েও বেফাঁস বক্তব্য দিয়েছেন মন্ত্রী-মেয়ররা। কেউ বলেছেন, ‘ডেঙ্গু নিয়ে ছেলেধরার মতো গুজব ছড়ানো হচ্ছে’, আবার কেউ বলেছেন, ‘এডিস মশার প্রজনন ক্ষমতা রোহিঙ্গাদের মতো-যা কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না’, আরেক মন্ত্রী দাবি করেন, বাংলাদেশে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা এশিয়ার অনেক দেশের তুলনায় কম। গত বছর আমাদের ২৮ জন মারা যাওয়ার রেকর্ড আছে। থাইল্যান্ডে এ পর্যন্ত একশর বেশি মারা যাওয়ার তথ্য পেয়েছি। ফিলিপিন্সে সাড়ে চারশ মানুষের মৃত্যুর খবর পেয়েছি। সিঙ্গাপুরে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার রেকর্ড অনুযায়ী প্রায় ৪০-৫০ জন মানুষ মারা গেছে।

বিশ্লেষকরা জানান, সম্প্রতি যে কোনো বিষয়ে-একাধিক মন্ত্রী একাধিক কথা বলেছেন। কারো সাথে কারো মিল নেই। অথচ মন্ত্রীরা সরকারে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন। এমপি-মন্ত্রীসহ দলীয় দায়িত্বশীল নেতাকর্মীর এমন মন্তব্যের পর রাজনীতির মাঠে অনেকটাই বিপাকে পড়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার। বিশেষ করে ওইসব নেতার এমন মন্তব্যের পর সরকারের কঠোর সমালোচনা করছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। শুধু বিরোধী রাজনৈতিক দল নয়, দেশের সাধারণ মানুষের কাছেও সমালোচনার পাত্র হয়েছেন তারা।

শুধু ডেঙ্গু ইস্যুতেই নয়, রাজনীতির মাঠে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ইস্যুতে কথা বলে বিতর্কিত হয়েছে আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রীসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীল নেতারা। তাই ওইসব নেতার যে কোনো ইস্যুতে দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য না দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেন, ডেঙ্গুর বর্তমান পরিস্থিতিতে জনগণ আতঙ্কিত ও উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে। এমন অবস্থায় ডেঙ্গু মোকাবিলায় সিটি কর্পোরেশন ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সব সংস্থাকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের এক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, সরকারপ্রধান দেশে নেই। মন্ত্রীদের সেইসব কথা অনেক সতর্ক হয়ে বলার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু তা করে না। বরং সরকারপ্রধান দেশে না থাকলে বেশি কথা বলে। এটা স্বভাবে পরিণত হয়েছে। বেশি মিডিয়া কাভার পাওয়ার আশা থেকেই বেফাঁস কথা বলে থাকেন। যা সরকারকে বিভিন্ন সময় বিব্রত করে ফেলে। অস্বস্তিতে পড়তে হয়।

সরকারের যেসব মন্ত্রী-এমপি বিভিন্ন ইস্যুতে দায়িত্বহীন কথা বলেছেন, তাদের কাজে মনোনিবেশ করার পরামর্শ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের এই নেতা। তিনি বলেন, আমরা অনেক সময় দায়িত্বহীন কথা বলে থাকি। সবার দায়িত্বশীল কথা বলা উচিত। ডেঙ্গুকে সহজভাবে নেয়ার উপায় নেই। অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়েছে বলে আমরা যে নিজেদের দায়িত্ব অপেক্ষা করব, এটারও কোনো সুযোগ নেই। যার যার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে হবে। তাই কথা না বলে যার যার কাজে মনোনিবেশ করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করেন তিনি। শুক্রবার ধানমন্ডির আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে তিনি এ কথা বলেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মীজানুর রহমান বলেন, সরকারের দায়িত্বে থেকে বেফাঁস কথা বলা ঠিক না। কথা বলার আগে কী বলছে এটা ভাবতে হবে। অনেকের ভাষাগত সমস্যা রয়েছে। কথা বলার সময় অবশ্যই মাধুর্য সহকারে বলতে হবে। আর শব্দ ব্যবহার নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী মিডিয়াতে কথা বলার সময় তার সাথে একজন মুখপাত্র থাকা খুব জরুরি। তারা এক দফতর কাজ করে অন্য দফতর নিয়েও কথা বলে; যা ঠিক না। আর আমি বলব, মন্ত্রীরা কথা না বলে কাজ বেশি করার জন্য। তাহলে বেফাঁস কথা কম হবে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বলেন, দায়িত্বশীল এমপি-মন্ত্রীরা দায়িত্ববান হওয়া জরুরি। তাদের কথার গুরুত্ব অনেক বেশি। সব সময় দায়িত্বশীল হতে হবে। তারা জোকস করেও কথা বলতে পারবে না। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক বলেন, দলের যে কোনো নেতাই হোক না কেন। দায়িত্বশীল পদে থেকে এ ধরনের মন্তব্য করা ঠিক নয়। সব নেতামর্কীকে এগুলো পরিহার করতে হবে।

 

সূত্র: দৈনিক মানবকণ্ঠ


বিভাগ : বাংলাদেশ


এই বিভাগের আরও