করোনাভাইরাস: বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৫৩ বাংলাদেশির মৃত্যু

০১ এপ্রিল ২০২০, ০৭:৩৯ পিএম | আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৩৫ পিএম


করোনাভাইরাস: বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৫৩ বাংলাদেশির মৃত্যু
ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) যুক্তরাষ্ট্রে ৩২ বাংলাদেশিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৫৩ জন বাংলাদেশি প্রাণ হারিয়েছেন। বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া খবরে তা জানা গেছে। এসব দেশের মধ্যে রয়েছে- যুক্তরাষ্ট্রে ৩২, ব্রিটেনে ১১, ইতালিতে ২, কাতারে ২, সৌদি আরবে ২, স্পেনে এক, সুইডেনে এক, লিবিয়ায় এক এবং গাম্বিয়ায় একজন বাংলাদেশি মার গেছেন।

নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুন্নেছা জানান, গত রবি ও সোমবার দু’দিনে নিউইয়র্কে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। কমিউনিটির বিভিন্ন সূত্রে দূতাবাস বাংলাদেশিদের আক্রান্ত ও মৃত্যুর খবর পান। সরকারিভাবে কোনো তথ্য সরবরাহ করা হয় না বা চাওয়া যায় না।

সাদিয়া বলেন, নিউইয়র্কে এমন পরিস্থিতি হাসপাতালে যাওয়ার মতো অবস্থা নেই। তাই মিশন জরুরি যোগাযোগে একটি চিকিৎসক-পুল তৈরি করেছে, যেখানে ঘরে বসে বাংলাদেশিরা চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন এবং আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে পারবেন। যুক্তরাষ্ট্রের অন্য দায়িত্বশীল কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, মিশিগানের ডেট্রয়েট সিটিতে একজন ও নিউ জার্সির প্যাটারসনে একজন বাংলাদেশি নারী করোনায় মারা গেছেন।

মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকালে নিউইয়র্কে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান একজন প্রবাসী ফটোসাংবাদিক। শারীরিক নানা জটিলতায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ওই সাংবাদিক করোনায় আক্রান্ত হয়ে কুইন্সের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তাছাড়া গত দু’দিনে মারা গেছেন আরো ৮জন বাংলাদেশি। পারিবারিক আপত্তির কারণে তাদের নাম প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না।

যুক্তরাষ্ট্রের পর করোনায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতদের মারা যাওয়ার তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে ব্রিটেন। দেশটিতে সোমবার পর্যন্ত ১১ বাংলাদেশি মারা গেছেন। এর মধ্যে ১০ জনই লন্ডনে। একজন বার্মিংহামে। ব্রিটেনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার আশিকুন নবী চৌধুরী জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রিটেনের করোনায় ৩৯৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আশার দিক হচ্ছে ওই তালিকায় কোনো বাংলাদেশি নেই। সোমবার পর্যন্ত ১১ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মারা গেছেন মর্মে কমিউনিটি সূত্রে মিশন নিশ্চিত হয়েছেন।

কাতারের দোহায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আসুদ আহমেদ জানান, কাতারে এক প্রবাসী চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার মারা গেছেন। তার বাড়ি গাজীপুরের কালিয়াকৈরে। এর আগে গত ২৩ মার্চ আরো একজন মারা যান। তার বাড়ি শ্রীমঙ্গলে।

ইতালির মিলানের বাংলাদেশ কনস্যুলেট জানিয়েছেন, ইতালির করোনা পরিস্থিতি বিপজ্জনক রূপ নিয়েছে বহু আগেই। এত দিনে বাংলাদেশিদের আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা তুলনামূলক কম ছিল। যদিও আচমকা একজন মারা গেছেন। তার অবশ্য করোনা ধরা পড়ার আগে থেকে অন্য জটিলতাও ছিল। মিশন বলছে, সোমবার আরেক বাংলাদেশি মারা যাওয়ার খবর মিলেছে। মিলান, বেরগামো, ব্রেসিয়াসহ বৃহত্তর লোম্বাদিয়া, ভারেজে, তরিনো, রোমসহ বিভিন্ন শহরে আক্রান্ত বাংলাদেশির সংখ্যাও উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধির খবর এসেছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যা বলছে, বিদেশে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া বাংলাদেশিদের সংখ্যা প্রায় অর্ধ শতক পার হলেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের করোনা সেল এখনও ৬ জনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়ার কথা জানাচ্ছে। সেলে প্রধান অতিরিক্ত পররাষ্ট্র সচিব ডা. খলিলুর রহমানের ভাষ্যটি ছিল এমন- যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় আইনে চিকিৎসাধীন কিংবা মারা যাওয়া ব্যক্তির পরিবার ছাড়া অন্যদের তথ্য শেয়ার করা নিষেধ। ফলে সেখান থেকে সরকারিভাবে তথ্য পাওয়ার সুযোগ নেই।

সর্বশেষ কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নিউইয়র্কে একজন সাংবাদিকের মারা যাওয়াসহ অনেকের মৃত্যুর খবর কমিউনিটি মারফত পেয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, এটাতো আনুষ্ঠানিক বা সরকারি তথ্য নয়।

ইতালিতে দুজন মারা গেছেন। এর মধ্যে একজন লন্ডনে গিয়ে মারা যান। স্পেনে এক, কাতারে সর্বশেষ দুজন এবং সুইডেনে এক- এই ৬ বাংলাদশির মৃত্যুর বিষয়টি আমরা সরকারি বা আনুষ্ঠানিকভাবে বলছি। বাকি আপনারা যা পাচ্ছেন তা অনানুষ্ঠানিক। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের করোনা বিষয়ক ফোকাল পয়েন্ট ডা. খলিল বিশ্বের দেশে দেশে বাংলাদেশিদের উদ্বেগজনক হারে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন।

তিনি বলেন, নানা সূত্রে আমরাও তথ্য পাচ্ছি, কেবল যুক্তরাষ্ট্রেই শতাধিক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বা অভিবাসীদের আক্রান্তের হারও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে জানিয়ে তিনি বলেন, সব মিলে দেশের বাইরে ২ শতাধিক বাংলাদেশির করোনা শনাক্ত হয়েছে মর্মে আমরা তথ্য পেয়েছি। যার মধ্যে ইতালিতে ৪০, স্পেনে ২৩, সিঙ্গাপুরে ১৪ জনের করোনা আক্রান্ত চিকিৎসা নিয়েছেন বা নিচ্ছেন। এদিকে কানাডা মিশন বলছে, দেশটিতে ২০ জনের মতো বাংলাদেশি আক্রান্ত হয়েছেন।

এদিকে সৌদি আরবের মদিনায় মঙ্গলবার মারা যাওয়া বাংলাদেশি চিকিৎসক আশফাক হোসাইন ঝিনাইদহ ক্যাডেট ও সলিমুল্লাহ মেডিকেলে প্রাক্তন ছাত্র বলে জানা গেছে। এর আগে ২৪ মার্চ মদীনায় করোনা আক্রান্ত প্রথম বাংলাদেশির মৃত্যু হয়। তার বাড়ি সাভারে বলে জানা গেছে।

গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর চীনের উহানে প্রথমবারের মতো নতুন করোনাভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়ার পর এখন বিশ্বের দুই শতাধিক দেশে তা ছড়িয়েছে। বিশ্বজুড়ে বর্তমানে করোনায় আক্রন্ত মানুষের সংখ্যা ৮ লাখ ৭১ হাজার ৯৮৫ এবং মারা গেছেন ৪৩ হাজার ২৬১ জন। এছাড়া চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন ১ লাখ ৮৪ হাজার ৪৮২।

বিশ্বে নতুন এই ভাইরাসের তাণ্ডব মোকাবিলায় বিভিন্ন দেশে ব্যাপক বিধি-নিষেধ আরোপ করা হলেও প্রাণহানি ও সংক্রমণ ঠেকানো যাচ্ছে না। বেশ কয়েকটি দেশ প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের প্রতিষেধক এবং ভ্যাকসিন আবিষ্কারের চেষ্টা করছে। ইতোমধ্যে চীন, জাপান এবং যুক্তরাষ্ট্রে পরীক্ষামূলকভাবে কয়েকটি ওষুধেরও পরীক্ষা চালানো হয়েছে। তবে প্রতিষেধক কিংবা ওষুধের জন্য আরও দেড় বছরের বেশি সময় অপেক্ষা করতে হবে।


বিভাগ : বিশ্ব


এই বিভাগের আরও